খুব বেশিদিন আগের কথা নয়।
১৪১৭ বঙ্গাব্দ পুজো সংখ্যার কাজ সবে শুরু হয়েছে। আমরা কুলপি থেকে গুলঞ্চ সাহিত্য
পত্রিকা চালাতাম। তো হয়েছে কী, সম্পাদক
শুভেন্দুদা হঠাৎই একটা আবদার করে বসলেন। এবারের পুজো সংখ্যাতে ভবানীবাবুর লেখা এনে
দিতে হবে। আর সেই ঝামেলা শেষমেশ চাপানো হল আমার কাঁধেই। আমি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে
তখনও চোখেই দেখিনি। সেভাবে কোনও আলাপ-পরিচয়ও নেই। তবে হ্যাঁ, ততদিনে বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে ফেলেছি। তার মধ্যে বেশ কিছু
ম্যাগাজিনে ভবানীবাবুর লেখাও ছিল।
এবার হঠাৎই একদিন ফোন করে
ফেললাম ভবানীপ্রসাদবাবুকে। যথারীতি নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম লেখার কথা। তখন
সবেমাত্র কয়েকটা সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। তবুও গুলঞ্চ সাহিত্য পত্রিকার কথা পাড়তেই
বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, নামটা শুনেছি। তা বেশ তো,
তুমি একদিন এসে লেখা নিয়ে যেও।”
সত্যি আমি অবাক। কী বলব
বুঝেই উঠতে পারছি না। ফোনের ও-পারে ভবানীপ্রসাদ। যাঁর লেখা আমরাও পড়তে পড়তে বড়ো
হয়েছি। সেই তিনি আমাকে চেনেন না, জানেন
না—তবু এককথায় রাজি। সত্যি সেদিন অসম্ভব একটা ভালোলাগার ঘোর আমাকে মাতিয়ে দিয়েছিল।
এই সুন্দর সুযোগটাও হারিয়ে
যেতে বসেছিল। কারণ, আমি ওঁর বাড়িতে যেতে চাইনি। বলেছিলাম,
“যেতে পারব না। আপনি পাঠিয়ে দিন।”
আজ বুঝি তা কতটা বেমানান, কতটা বেয়াদবি ছিল। তবু তিনি ফেরাননি আমাকে। শেষ পর্যন্ত লেখা
তিনি দিয়েছেন; ছাপাও হয়েছিল গুলঞ্চ সাহিত্য পত্রিকায়। সেটা
কীভাবে সম্ভব হল? সম্ভব হয়েছে তাঁর উদারতায়। তিনি
হোয়াটস-অ্যাপে দিতে চাইলে আমি তাঁকে বললাম, “আমার স্মার্ট
ফোন নেই। আপনি আমাকে লেখাটা বলুন, আমি লিখে নেব।”
উনি তাতে রাজি। উনি বললেন, আমি লিখলাম। তারপর বললেন, “একবার শোনাও
আমাকে।”
শোনালাম তাঁকে। শুনে বললেন, “দারুণ লিখেছ। দাঁড়ি-কমা সব একেবারে ঠিকঠাক। এইভাবে ছেপে দিও।”
তারপরে বহুবার দেখা হয়েছে
তাঁর সঙ্গে। আর প্রতিবারই মনের মধ্যে ঘাই তুলেছে সেই ফোনালাপ। আর ততবারই লজ্জা বোধ
করেছি আমার অর্বাচীনতার জন্য। এর পরেও কথা হয়েছে আমাদের।