জয়শ্রী সরকার

       আমার চোখে ভবানীপ্রসাদ











জয়শ্রী সরকার





 

বাংলা শিশুসাহিত্যে সুকুমার রায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, সুনির্মল বসু, সরল দে, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের পরেই একটাই উজ্জ্বল নাম—তিনি হলেন স্বনামধন্য শ্রদ্ধেয় ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। বাংলা ছড়াকে তিনি যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনই বাংলা ছড়ার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন। শুধু ছোটোরাই নয়, আপামর বাঙালির  কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছড়াশিল্পী। বর্তমান ছড়া জগতের বহু ছড়াশিল্পীর পথপ্রদর্শক বলা যায় ওঁকে।

ওভারল্যান্ড দৈনিক’-এর শিশুকিশোর বিভাগে তিনিই সর্বপ্রথম ছড়া-গড়া প্রতিযোগিতা এবং পাঠকের চিঠির জবাব ছড়াতেই দেওয়ার প্রথা করে পাঠককে ছড়া লেখায় আরও বেশি করে উৎসাহী করে তোলেন। ছোট্টবেলা থেকেই ওঁর লেখা নানান বিচিত্র ছড়া পড়ে বড়ো হয়েছি। এমন কোনও বিষয় নেই যা ওঁর ছড়ায় স্থান পায়নি। মজার ছড়ার মধ্যেও লুকিয়ে আছে সমাজের নানান বৈষম্য, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ, যা অবশ্যই ছোটো-বড়ো সবার কাছে শিক্ষণীয়। অনেকক্ষেত্রেই সেগুলো শ্লেষাত্মকও। লেখালিখির সূত্র ধরেই বহুবার প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য পেয়েছি। শেষ ওঁর সঙ্গে দেখা এবং কথা হয় আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগেখড়গপুর গ্লোবাল নিউজ’-এর সম্পাদক জাহির চৌধুরীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে। এভাবেই সময়ের সঙ্গে হাঁটছিলাম। হঠাৎ ২০২১-এর ৫ই নভেম্বর মোবাইলেযুগ সংবাদ দর্পণ’-এ প্রকাশিতভালো নেই ভবানীপ্রসাদ’—এই শিরোনামে একটি খবর পড়ে আঁতকে উঠেছিলাম। মনটা বিষাদে ভরে গিয়েছিল। এত অবহেলা! ধূপের মতো এই সমস্ত মানুষ পুড়ে পুড়ে নিজেকে শেষ করে দেন। সত্যিই, আমাদের কি কিছুই করার নেই? তারপরই ০৭.১১.২০২১ তারিখে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। পোস্টটি ছিল—



 

এ ক টু   আ লো র   জ ন্য

জয়শ্রী সরকার

     প্রসঙ্গ: ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

    .........

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন!

এই মুহূর্তে প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের কথাগুলো ভীষণভাবে বুকের মধ্যে বাজছে। দুই বাংলার জনপ্রিয়তম ছড়াশিল্পী, (শহর-গ্রামের অধিকাংশ অনুষ্ঠানে যাঁর লেখা ছড়া-কবিতা ছেলেমেয়েরা আজও উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করে) সেই ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ভালো নেই। পায়ের স্নায়ু শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ২০২০-র মার্চে একটি পা হাঁটুর কাছ থেকে বাদ গিয়েছে

হাওড়া জেলার দাশনগরের শানপুরের একতলার ছোট্ট ঘরে ছড়ার রাজার হাজার স্মৃতি জড়িয়ে থাকত। চেনা-অচেনার ছিল অবারিত দ্বার। আজ সেই প্রিয় ছড়াশিল্পী একাবড়োই একা। পাশে ওঁর স্ত্রী শ্রীমতী পদ্মা মজুমদার (যিনি অত্যন্ত সেবাপরায়ণা)। কবি অনেক কিছুই ইদানীং মনে করতে পারেন না। কিন্তু হাতে কলম ধরলে হৃদয় আর মস্তিষ্ক-সঞ্জাত শব্দেরা আজও লুকোচুরি খেলে

জানিআমরা দীর্ঘদিন এক বিপন্নতার মধ্যে শ্বাস নিচ্ছি। তবুপড়ন্ত বেলায় প্রিয় মুখের স্নিগ্ধ সান্নিধ্যে একজন ডুবন্ত মানুষও আবার সজীব হয়ে জেগে উঠতে পারেনছুঁতে পারেন সবুজ স্বপ্নটাকে। আমার বিনম্র অনুরোধবিশেষ করে যাঁরা কাছাকাছি আছেন—আসুন না একটু খোঁজখবর নিয়ে মানসিক দিক থেকে ওঁর পরিবারের পাশে থাকি। প্রশাসনের কাছেও বিনীত অনুরোধওঁর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য পরিবারের পাশে দাঁড়ান। আমার দৃঢ় বিশ্বাসঅনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠবেন সর্বকালের শিশুদের প্রিয়আমাদের সবার প্রিয় শ্রদ্ধেয় ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

প্রিয় কবির দ্রুত আরোগ্য কামনায়—

জয়শ্রী সরকার

      ০৭.১১.২০২১   

 

প্রসঙ্গত বলিশিশুকিশোর পত্রিকার বেশ কয়েকজন সম্পাদকফেসবুকে আমার পোস্টে যাঁরা কমেন্ট করেছিলেন এবং ‘নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য সংসদ’-এর সর্বভারতীয় সম্পাদকের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম

 শ্র দ্ধা র্ঘ্য

  

তো মা কে দে খে ছি

জয়শ্রী সরকার


ছন্দের তালে লিখবো তোমায় এমন সাধ্যি নেই

তোমায় যতই পড়ি ততই হারাই বুঝি খেই !


তোমাকে দেখেছি জীবনের সাথে যুঝতে

তোমাকে দেখেছি হৃদয়ের ভাষা বুঝতে !


তোমাকে দেখেছি দুঃখের সাথে লড়তে

তোমাকে দেখেছি মিলনের সেতু গড়তে !


তোমাকে দেখেছি জ্ঞানের সাগরে ভাসতে

তোমাকে দেখেছি শিশুর মতোই হাসতে !


তোমাকে দেখেছি সাহসের কথা বলতে

তোমাকে দেখেছি বন্ধুর পথে চলতে !


তোমাকে দেখেছি দহন জ্বালায় জ্বলতে

তোমাকে দেখেছি বিহ্বলতায় গলতে !


তোমাকে দেখেছি শব্দেরই জাল বুনতে

তোমাকে দেখেছি শিশুকলতান শুনতে !


কতদিন ঠিক দেখিনি তো আমি তোমাকে,

ছড়ায় ছড়ায় স্পর্শ পেয়েছি যতটা

ততটাই আমি দিলাম অর্ঘ্য তোমাকে !

 

*****

 

 অ ন্ত্যে  শু ধু  মি ল টা  তো  চা ই

জয়শ্রী সরকার

 

'ঘটল যা তাই, শোনাচ্ছি তাই'

অন্ত্যে শুধু মিলটা তো চাই !


'সুখের বাহার দুখের পাহাড়'

কেউ মানে না সত্যি তো হার !


'মিঠির চিঠি খিটিমিটি'

জ্বলছে যেন মিটিমিটি !


'হাঁসফাঁস আটমাস'

কষ্টেতে ফেলি শ্বাস !


'ফুলু-জুলু-দুলু-টুলু'

য়ে চলে কুলু কুলু !


'মিঠেকড়া ধাঁধা-ছড়া'

পড়েছি তো ঘড়া ঘড়া !


'নদীর খুশি, খুশির নদী'

বয়েই চলে নিরবধি !


'চাচা হারুণ, নেশা দারুণ'

বদ অভ্যাসটা আগে ছাড়ুন !


'যত ভাবি, খাই খাবি'

মিলখানা খুঁজে পাবি !


'ভোঁদা-হাঁদা , দুই গাধা'

একই সুরে থাকে বাঁধা !

 

'অত বোকা নয় খোকা'

সবেতেই খায় ধোকা !


'ছবি আঁকি, ভয়ে থাকি'

মনে ভাবি, সবই ফাঁকি !


'ছবি বোঝা, নয় সোজা'

দুই চোখে শুধু খোঁজা !


'জবর জং, খবর রং'

ছুটির ঘন্টা বাজলো ঢং !


'গুপ্ত খবর, লুপ্ত খবর'

ছড়া তোমার সত্যি জবর !


 


<