স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

                                                                                                                                                                                                                      ছবি - রাহুল মজুমদার

 আমার বন্ধু ভবানীপ্রসাদ









স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়





 

ভবানীর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ গত শতকের আটের দশকে। কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে (এখন যা ভেঙে বর্ণপরিচয় হয়েছে) নিউস্ক্রিপ্ট-এর আড্ডায়। সে সময় সেখানে প্রায় প্রতিদিনই সন্ধের পর লেখক-পাঠকদের আড্ডা জমত। আমিও মাঝে-মাঝেই যেতাম ছুটির পর

তখন সে-আড্ডার শিরমণি ছিলেন শিশিরকুমার মজুমদার। সত্যজিৎ রায়ের স্নেহধন্য। তিনি শুধু ভালো লেখকই ছিলেন না, ছিলেন দারুন আড্ডাবাজও। তাঁর আড্ডার গাড্ডায় তখনকার অনেক লেখক-শিল্পীই পড়েছিলেন, এই অধমের মতোই। তখন তো আর ফেসবুক-মোবাইলের যুগ ছিল না। আড্ডাই ছিল লেখকদের প্রাণের আরাম

সেখানে আরও অনেকের মতোই ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হয়েছিলাম, অত্যন্ত রসিক মনের মানুষ। কথায় কথায় ছড়ার ছড়াছড়ি। যে-কোনো সময় যে-কোনো বিষয় নিয়ে ছড়া লিখতে পারে ভবানীপ্রসাদ। এমনকি আমাকে নিয়েও একটা তাৎক্ষণিক ছড়া লিখে আমায় উপহার দিয়েছিল। অমি তা আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি। এই সঙ্গে সেটা উদ্ধৃত না করে পারছি না

ভবনী বয়সে আমার থেকে কিছুটা ছোটো, তাই সে বরাবরই আমায়স্বপনদাবলত। কিন্তু আসলে সে আমার প্রাণের বন্ধু। ওর নানা সাহিত্য কীর্তির কথা আমি জানি। আটের দশকে, নয়ের দশকে এমনকি এই শতকেও যে-কোনো বড়ো পত্রপত্রিকায় ওর ছড়া না থাকলে সে ছড়া বিভাগ বোধ করি সম্পূর্ণ হত না। নানা স্বাদের, নানারকম মজার সেইসব ছড়ায় ছন্দের দুলনি। বিষয়-বৈচিত্র্যে অসাধারণ

একসময় বেতারে (আকাশবাণী)তুবড়িনামে একটা হাসির অনুষ্ঠান হত। আমি সেখানে গোটা কয়েক হাসির নাটিকা লিখেছি। কিন্তু সেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের ছড়া

গত নয়ের দশকেওভারল্যান্ডনামে এক দৈনিক পত্রিকায় সাপ্তাহে একদিন ভবানীসবুজবুড়োছদ্মনামে ছোটোদের জন্য একটা বিভাগ পরিচালনা করেছিল। সেখানে আমাকে দিয়ে ধারাবাহিকভাবেপুরাণের চির-নতুন গল্পলিখিয়ে ছিল। ওর সম্পাদনায় বিভাগটি তখন খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল

ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের ছড়ার সবচেয়ে বড়ো গুণ রসবোধ। ভবানী সরস ভঙ্গিমা এবং ছন্দে অনেক সময় সমসাময়িক সামাজিক বিচ্যুতিকেও রসমণ্ডিত করে তুলে ধরতে পারত। সেক্ষেত্রে ওকে ছড়ার রাজা সুকুমার রায়ের যোগ্য উত্তরসূরি বলা যায়

আমার বন্ধু ভবানীকে আমি আমাদের শতবর্ষ প্রাচীন হেমচন্দ্র লাইব্রেরিতেও একাধিকবার এনেছিলাম। ছড়া, ছন্দ, রসিকতায় ও আসর জমিয়ে তুলেছিল

সম্প্রতি ও খুব অসুস্থ। ওর লেখা নতুন ছড়াও চোখে পড়ে না। ছড়াপ্রেমী বাঙালি পাঠক শ্রোতার কাছে এ দুঃখ যে কতখানি তা আমি অনুভব করি। কিন্তু মানুষ সময় এবং ভাগ্যের অধীন। তবু সবসময় কামনা করি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার আরোগ্য লাভ করে আবার স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠুক। বাংলা ছড়ার দুনিয়ায় ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের স্থান কোনোদিন পূরণ হবে কি না সন্দেহ



লম্বা-চওড়া লেখক তিনি

নাম শ্রী স্বপন বন্দ্যো!

গল্প-নভেল লেখেন দারুণ

নয়তো মোটেই মন্দ!

দিগ্-বিদিক ছড়াচ্ছে তাঁর

অসীম খ্যাতির গন্ধ!

আমরা মিছেই মারছি মাছি

খুঁজছি ছড়ার ছন্দ!



 

 

<