সন্দীপ রায়









'বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ' ও 'সন্দেশ', 'কিংবদন্তী'র - পক্ষে শ্রীসন্দীপ রায় 'শিশিরকুমার মজুমদার শতবর্ষ পুরস্কার' (মরণোত্তর) তুলে দিচ্ছেন প্রয়াত 
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের পক্ষে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতী পদ্মা মজুমদার কে।    ছবি- 'বিচিত্রপত্র'  

     ভবানীপ্রসাদ প্রসঙ্গে









সন্দিপ রায়

 

একটা ব্যাপার গোড়াতেই বলা প্রয়োজন, ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ের দিকটা মোটেই তেমন জোরালো ছিল না।সন্দেশ’-এ উনি যে সময় লেখা শুরু করলেন, তখনসন্দেশ’-এর সম্পাদক ছিলেন লীলুদিদা (লীলা মজুমদার), নিনিপিসি (নলিনী দাশ) এবং বাবা। আমাদের বাড়িতেও উনি খুব একটা যে এসেছেন তা নয়। তবে, ওঁর লেখার সঙ্গে আমাদের পরিচয়টা দীর্ঘদিনের। সে প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর তো বটেই। আটের দশকের শেষ দিকে ১৯৮৭-তে আমার ঠাকুরদা সুকুমার রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বেশ কিছু অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ইত্যাদি আয়োজিত হয়েছিল। পাশাপাশি ওঁকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল অজস্র পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, গ্রন্থ। এমনকি বাবা ও পার্থ বসুর সম্পাদনায়সুকুমার সাহিত্য সমগ্রপ্রকাশিত হয়েছিল—যেটা এখনও পর্যন্ত সুকুমারের সমগ্র সাহিত্যের সেরা প্রকাশনা বলেই সবার কাছে সমাদৃত। বাবাসুকুমার রায়তথ্যচিত্র করলেন। যাই হোক, এসবের পাশাপাশিসন্দেশ’-এর তরফেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখনইসুকুমার স্মৃতি পদক’-এর প্রাপক হিসেবে ভবানীপ্রসাদবাবুর নাম নির্বাচিত হয় এবং বাবা নিজে সে-পদক ওঁর হাতে তুলে দেন

সত্যি বলতে কি, ভবানীপ্রসাদবাবু বছরের পর বছর নানান পত্রপত্রিকায় কত যে ছড়া-কবিতা লিখেছেন, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। আর সে-সব ছড়া আমি কেবল শিশুকিশোরদের কথা বলব না, সব বয়সি পাঠক-পাঠিকাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়—এ-কথা বলাই বাহুল্য।সন্দেশপত্রিকার সঙ্গে ওঁর একটা নিবিড় যোগসূত্র ছিল।সন্দেশ’-এর পাতাতে অজস্র ছড়া-কবিতাও লিখেছেন। এমনকি, ‘সন্দেশী সঙ্গীত’-ও রচনা করেছিলেন; যেটা তো একসময় খুদে সন্দেশী গ্রাহক-গ্রাহিকাদের কাছে বেশ ভালোরকম সাড়া ফেলেছিল

আজ অনেকের মুখেই শুনি, বাবা-মায়েরা নাকি ছেলেমেয়েদের সেভাবে বাংলা ভাষাটা শেখার দিকে নজর দিচ্ছেন না। অবিশ্যি, এটা একেবারে হালের ব্যাপার নয়! বেশ কিছুকাল ধরেই এই একটা অদ্ভুত ট্রেন্ড বাজারে এসেছে। আর এই ব্যাপারটা নিয়ে ভবানীপ্রসাদবাবু এমন একটি চমৎকার ছড়া লিখেছিলেন যে সেটা তো আজকাল রীতিমতো লোকের মুখে মুখে ঘোরে। এখন, শুধু মুখের কথাতেই তো আটকে থাকলে চলবে না, বিষয়টা নিয়ে সত্যিই ভাবা প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস, সেটার মাধ্যমেই কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধার্ঘ্যটা জানানো যাবে

ভবানীপ্রসাদবাবু আমার প্রায় সমবয়সি ছিলেন বলা চলে। খবর পাচ্ছিলাম, শেষদিকে শারীরিক অসুস্থতায় বড়ো কষ্ট পাচ্ছিলেন। উনি আমাদের মাঝে আর নেই ঠিকই, কিন্তু ওঁর অসংখ্য ছড়া-কবিতার মধ্যে দিয়েই উনি থেকে যাবেন আমাদের সবার মাঝে


১৯৮৮ সাল, ২ এপ্রিল কলকাতার অবন মহলে সুকুমার রায়ের পুত্র কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব শ্রীসত্যজিৎ রায় স্বর্ণপদক (সুকুমার রায় শতবার্ষিকী পুরস্কার) পড়িয়ে দিচ্ছেন কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের গলায়। 




ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের স্মরণে 'বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ' কর্তৃক প্রকাশিত 'শ্রদ্ধায় স্মরণে ভবানীপ্রসাদ' স্মারক-পুস্তিকা এবং ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের 'মিঠে কড়া পশুর ছড়া' গ্রন্থের প্রকাশে (বাঁদিক থেকে) - শ্রীপ্রসাদরঞ্জন রায়, শ্রীসন্দীপ রায় শ্রীমতী শ্রীলতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীসব্যসাচী চক্রবর্তী এবং শ্রীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।  

                                                                                                      ছবি- রাহুল মজুমদার



<
সূচিপত্র