ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস । অগ্রহায়ণ ১৪৩১

 

 পলাতকের খোঁজে











সৈয়দ রেজাউল করিম
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ



 

।। পর্ব : আট ।। 

পলাতকের আর এক অধ্যায়




বিংশ শতাব্দীর এক বিখ্যাত আবিষ্কার হলো কম্পিউটার এই কম্পিউটার কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি ধীরে ধীরে তা উন্নত হয়েছে কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধারণা দেন ফরাসি বিজ্ঞানী ব্রেইজ প্যাসকেল তিনি প্রথম মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন পরবর্তীকালে তাঁর তৈরি নকশা কম্পিউটারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় আধুনিক কম্পিউটার সেটি তৈরি করেছিলেন চার্লস ব্যাবেজ

কম্পিউটার শব্দটি এসেছে কম্পিউট ( compute ) শব্দ থেকে শব্দটি গ্রিক শব্দ যার শাব্দিক অর্থ হল গণনাকারী কিন্তু বর্তমান কম্পিউটার শুধু গণনা করে না এটা মানুষের চেয়েও অতি দ্রুত নির্ভুল, নিখুঁতভাবে গাণিতিক, যৌক্তিক সিদ্ধান্ত মূলক কাজের সমাধান করে দিতে পারে সে যেকোন বিষয় হোক যত কঠিন, দুর্গম হোক যত বিভাজন হোক প্রথম প্রথম এই প্রযুক্তির বিরোধিতা হলেও এখন তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে সকলে এর গুরুত্ব অপরিসীম সর্বক্ষেত্রেই এখন তা কাজে লাগে

অলক মিত্র সেই কম্পিউটারে বসে কাজ করছিলেন, আর মনে মনে ভাবছিলেন এই সব কথা গঙ্গাসাগরে নাই নাই করে প্রায় দশ/ বারো লাখ জমায়েত হয়েছে অনেকে পুণ্যস্নানের ক্ষণ ভুলে আগেই স্নান সেরে চলে গেছেন তাদের সকলের ছবির সাথে পলাতকের ছবি কম্পিউটারে ম্যাচ করতে দিয়েছিলেন মিত্র সাহেব যে কাজ সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনদিনই সম্ভব হতো না, তা আধঘণ্টার মধ্যে কম্পিউটার বার করে দিল কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠল 'টা ছবি আপাতদৃষ্টিতে 'টা ছবি হলেও, ছবিগুলো যে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়া একই ব্যক্তির ছবি, তা বুঝতে অসুবিধা হলো না মিত্র সাহেবের যিনি হলেন একজন গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীমাথায় তার জটহাতে কুমুন্ডুল ইনি কি সেই পলাতক? অলোক মিত্রের মনে সন্দেহ হলো সন্ন্যাসীর গতিপ্রকৃতি, ডিটেলস খোঁজার আগে যতীন দারোগার কথা মনে পড়ল অলোক মিত্রের তিনি একমাত্র লোক, যে পলাতকের সম্বন্ধে ডিটেইলস জানে কম্পিউটারের পর্দায় তাকে একপলক দেখলেই তাকে নিশ্চয়ই চিনতে পারবে যতীন সে কথা ভেবে মোবাইল ফোনে কল করলেন যতীন দারোগাকে

মোবাইল ফোনের কল ওপেন করে যতীন দারোগা বললেনহ্যাঁ স্যার! যতীন বলছি

                  আপনি এখন কোথায়? আপনি কি একটু কন্ট্রোল রুমে আসতে পারবেন?
                  হ্যাঁ স্যার! আমি কাছাকাছি আছি চলে আসছি এখুনি

মিনিট দশেকের মধ্যে যতীন দারোগা চলে এলেন কন্ট্রোলরুমে পুলিশি কায়দায় পা দুটো জড় করে স্যালুট দিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন অলোক মিত্রের কাছে অলোক মিত্র তাঁকে ইশারায় বললেন পাশের চেয়ারে বসতে তারপর কম্পিউটারে সন্ন্যাসীর সেই ছবিটা বড় করে যতীন দারোগাকে দেখিয়ে বললেনদেখুন তো যতীন বাবু! এই আপনার সেই পলাতক কিনা?

মিত্র সাহেবের কথায় এক ঝলক হাসি গড়িয়ে পরলো যতীন দারোগার মুখ থেকে রসিকতার প্রত্যুত্তরে তিনি বললেনপলাতক অমর হয়ে গেল স্যার?

অলোক মিত্র বললেননা, মানে, ওকে তো সেই ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছেন পলাতককে পলাশ বলে চিনেছেনএখনতো সে বেশ বড় হয়েছে এখন দেখুন তাকে চিনতে পারেন কিনা?

ছবিটা কে আরেকটু বড় করে সন্ন্যাসীর মাথার দিকটা দেখতে চাইলেন যতীন দারোগা অলোক মিত্র মাউসটা নিয়ে নাড়াচাড়া করে ছবিটা আরো বড় করে দেখালেন তা খতিয়ে দেখলেন যতীন দারোগা তারপর বিষণ্ন মনে বললেন -- হ্যাঁ স্যার! এটা পলাতকের ছবি

-- কি করে চিনলেন ওকে? সাথে সাথে জানতে চাইলেন মিত্র সাহেব

প্রত্যুত্তরে যতীন দারোগা বললেন-- ওর মাথার একপাশে একটা বড় আঘাতের চিহ্ন আছে হালকা চুলের ফাঁকে সেই আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে

স্ট্রেঞ্জ! তা এই আঘাতের চিহ্নটা কিসের? একরাশ বিস্ময়ের চোখে তা জানতে চাইলেন মিত্র সাহেব

-- একদল দুর্বৃত্ত ওকে খুন করবে বলে মাথায় লাঠির আঘাত করে নদীর জলে ফেলে দিয়েছিল আর সেটা করিয়েছিল ওর কাকা মন্টু দাস

-- তার মানে ? খুব অবাক হয়ে জানতে চাইলেন মিত্র সাহেব

তার আর মানে কি থাকবে স্যার? গ্রাম্য রাজনীতি যাকে বলে আরকি দাদার ভাগের সম্পত্তি হস্তগত করার জন্য আগেই খুন করেছিল দাদাকে সেই খুনের কিনারা পুলিশ করতে না পারলেও পলাশ তা পেরেছিল কিভাবে তার বাবাকে খুন করা হয়েছে, কে কে খুন করেছে, সব কথা বলে দিয়েছিল তার ভোম্বলদা তাই তার কাকা মন্টু দাস তাকে মৃত্যুদন্ড বরাদ্দ করেছিলেন কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহে বেঁচে গেছে পলাশ ওরফে পলাতক কিন্তু সেই আঘাতের দাগ আজও থেকে গেছে তার মাথায়

-- ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং অতি মর্মস্পর্শী খুব বেদনাদায়ক এবং দুঃখের ডিটেইলসটা জানতে ইচ্ছা করছে কিন্তু তার আগে দেখা প্রয়োজন ডাকু পলাতকের গতিবিধিটা

যতীন দারোগা বললেন-- ঠিক আছে স্যার!

একথা শুনে ছবিটা সিলেক্ট করে প্লে ডিটেলসে পুশ  করলেন মিত্রসাহেব তারপর দুজন উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন কম্পিউটারের পর্দার দিকে দেখতে পেলেন সন্ন্যাসী তার তল্পিতল্পা নিয়ে একটা দোকানে ঢুকল সেখানে জল খাবার খেলো তারপর একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে গঙ্গায় গিয়ে নামল কিন্তু তারপর….?

তারপর আর কিছু দেখা গেল না বোধহয় সিসি ক্যামেরায় কোন কাক টাগ বসেছিল কিংবা কোন কিছুতে ক্যামেরার লেন্সটা ঢাকা পড়েছিল মিত্রসাহেব অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু কম্পিউটারের পর্দায় আর কোন ছবি দেখা গেলোনা সন্ন্যাসীর

পরের দিনও বিস্তর চেষ্টাচরিত্র করলেন, কিন্তু কোন ছবি দেখতে পেলেন না সন্ন্যাসীর খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন মিত্রসাহেবলোকটা গেল কোথায়? প্রশাসনের কড়া সতর্কতা দেখে কি জলপথে পালিয়ে গেল ডাকু পলাতক? কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি তবে মনে মনে খুশি হলেন যতীন দারোগা ঈশ্বর যা করেন, মঙ্গলের জন্য করেন তা না হলে কোথায় সন্ন্যাসী গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তার হালহকিকত টেনে বার করতেন মিত্রসাহেব পূণ্যস্নান করার আগেই ধরা পড়ে যেত পলাতক একটা নিরাপরাধ ছেলে আবার ধরা পড়তো পুলিশের জালে

পলাশের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন ভালোবাসা জন্মেছিল যতীন দারোগার মনেএকটা সৎ, নির্ভীক, সাদাসিধে ছেলে সমাজের আবর্তে পড়ে আজ তার এই অবস্থা এর জন্য দায়ী এই সমাজ পুলিশ প্রশাসন সকলেই পলাতক তো ডাকাত হয়ে জন্মায়নিতাকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলা যেতে পারে, তাকে তৈরি করা হয়েছে আর বেঁচে থাকার তাগিদে অসহায়দের বাঁচাতে, সে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র যা সে মনেপ্রাণে কোনদিন চাইনি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে সে জীবন অতিবাহিত করতে চেয়েছিল কিন্তু সমাজ তাকে সে সুযোগ দেয়নি তাকে জোর করে অন্ধকারের আবর্তে ফেলে দিয়েছে তার নামে কেসের পর কেস রজু করেছে

-- কি এত ভাবছেন যতীন বাবু?

যতীনদারোগার থমথমে চিন্তিত মুখ দেখে অলোক মিত্র প্রশ্নটা করে বসলেনসেই প্রশ্নেই সম্বিত ফিরে পেলেন যতীন দারোগা অকপটে স্বীকার করলেন-- স্যার! পলাতকের কথাই ভাবছিলাম ছেলেটা যদি উপযুক্ত আলো বাতাস পেত, তাহলে সমাজের অনেক কাজে লাগত

-- তা যা বলেছেন যতীনবাবু! একেবারেই হক কথা তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত না হয়েও যেভাবে পলাশ আমাদের ঘোল খাওয়াচ্ছে, তা ভাবতেও অবাক লাগে উপযুক্ত  শিক্ষা পেলে সে যে কি করতো, তা ভাবলে মনে বিস্ময় জাগে এমন একটা সুপ্ত প্রতিভা ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে আমরা চিরকালের জন্য হারালাম

অন্তরের অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে আসা কথাটা ব্যক্ত করি কিছুক্ষণ গুম হয়ে ভাবলেন অলোক মিত্র তারপর যতীন  দারোগার দিকে তাকিয়ে বললেন-- যতীন বাবু! আপনি বলুন, তারপরে পলাতকের জীবনে কি ঘটেছিল? আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে

-- সে কাহিনী বড় করুন, বড় হৃদয় বিদারক আমরা অঞ্জলিকে খুঁজে বার করলাম পলাশের সহায়তায় তাকে নিয়ে এলাম থানায় অঞ্জলিকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে গেল তার বাবা মন্টুবাবু আর আমরা তখন পড়ে গেলাম গভীর জলে মহাফাঁপরে পলাশ ওরফে পলাতক তখন কাষ্টডিতেতাকে নিয়ে আমরা কি করব ভেবে উঠতে পারলাম না একটা নিরাপরাধ ছেলেকে জেলে পাঠাব, না ছেড়ে দেব? অঞ্জলির অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন করেছিল পলাশ নিজে অঞ্জলিও স্বীকার করেছিল, পলাশ তাকে কিডন্যাপ করেনি স্বভাবতই আমাদের মনটা দুর্বল ছিল পলাশের প্রতি তার সরলতা সত্যবাদিতার জন্য তাই আমরা স্থির করে ফেললাম, পলাশকে ছেড়ে দেওয়াই আমাদের কর্তব্য  আমরা বেলবন্ড, পি.আর. লিখে ওকে ছেড়ে দিলাম ওকে নিষেধ করলাম কয়েকদিন বাড়িতে না ফেরার জন্য বলল-- গোসাবা ঘাটের কাছে আমার মাসির বাড়ি আছে ওখানে কদিন থেকে যাব

রাত তখন দশটা থানাঘাট থেকে একটা ডিঙি গোসাবা ঘাটে যাচ্ছে শুনে পলাশ বায়না ধরল-- তাহলে স্যার! আমি ওটাতেই চলে যাই ?

আমরা আর নিষেধ করলাম না তাছাড়া থানাতে থাকলে অনেক সমস্যা নানাজনে নানা কথা জিজ্ঞেস করবে বড়বাবুকে কত পয়সা দিতে হলো? যেমন থানাতে হয় আর কি

পরের দিন সকাল আটটার সময় মেয়ে অঞ্জলিকে নিয়ে মন্টু বাবু হাজির হলেন থানাতে আমরা ভেবেছিলাম মন্টুবাবু আর থানাতে আসবেনা, মেয়ের মুখে সব কথা শোনার পর কিন্তু তাদেরকে থানায় দেখে টনক নড়ে গেল আমাদের অঞ্জলিকে জিজ্ঞেস করতে সে একেবারে নব্বুই ডিগ্রি ঘুরে গেল পলাশ তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করল মন্টুবাবুর জোরাজুরিতে অঞ্জলীকে পাঠাতে হল আলিপুরেতার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করার জন্য তার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করলেন ম্যাজিস্ট্রেট মন্টুবাবুর শেখানো বুলি নির্দ্বিধায় সেখানে বলে এল অঞ্জলি আর তারপরেই শুরু হলো মন্টুবাবুর তাণ্ডবপলাশকে জেলে না পাঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? এই নিয়ে শুরু হলো তোলপাড় সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা হলো আমাদের খবর গেলো বড়সাহেবের কাছে বড়সাহেবের কৈফিয়তের জবাব দিতে পারলেন না বড়বাবু দিতে পারলাম না আমি পলাশের ভালো করতে গিয়ে ফেঁসে গেলাম আমরা আমাদের নামে প্রসেডিং ড্র হলো বদলি করে দিল থানা থেকে

অলোক মিত্র গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্বগতোক্তি করলেন-- এটাই আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বড়-সড় দুর্বলতা সাহেবরা কখনো বিচার বিবেচনা করে দেখেন না কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই কাজটা করেছে? মানবিকতার দিক থেকে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আদৌ আসামীরা দোষী কিনা? তার প্রথম বিচার তো সেই তদন্তকারী অফিসারকে করতে হয়না হলে অর্থবল, লোকবল তো বিচারের মানদণ্ড হিসাবে পরিণত হয়

যতীন দারোগা বললেন--সবই সিস্টেম স্যার! আমি আপনি একদিনে তার পরিবর্তন করতে পারব না টেপ রেকর্ডারে অঞ্জলির স্টেটমেন্ট রেকর্ড করে রেখেছিলাম আমি শুনিয়েছিলাম সাহেবদের তারাও নেতাদের মতো মন্তব্য করে ফেললেনএসব কথা থাক স্যারআসি আসল কথায় তিন মাস পরে আমার পোস্টিং হলো ঠাকুরপুকুর থানাতে আমার জ্ঞান ফিরলআমি দেখেশুনে পা ফেলতে শুরু করলাম

এইভাবে চলছিল দিন হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমার কোয়ার্টারে এসে হাজির হল পলাশ তাকে দেখে আমি ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম বাড়ির খবর-টবর সব জানতে চাইলাম শুনলাম ওর মা খুব অসুস্থ হয়তো বাঁচবে না আর বেশি দিন কিন্তু মাকে সে দেখতে যেতে পারেনি কারণ জানতে চাইলে সে বলল-- সেদিন থানা থেকে ছাড়া পাবার পর নৌকাতে করে আমি যাচ্ছিলাম মাসির বাড়ি পথে অন্য একটা নৌকা এসে আমাদের নৌকাটাকে থামাল সেই নৌকা থেকে দু'জন লোক উঠে এল আমাদের নৌকাতে তাদের মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা হাতে লাঠি কাউকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করল না তাদের মধ্যে একজন সজোরে আমার কোমরে লাঠি দিয়ে মারলো অন্যজন লাঠি দিয়ে আঘাত করল মাথায় আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম নদীর জলে আমাকে মেরে ওরা তাদের নৌকা থেকে পালিয়ে ছিল ওরা চলে যেতে আমাদের নৌকার লোকজনেরা আমাকে উদ্ধার করে ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছিল পুলিশের কাছে ভয়ে বলেছিল তাদের নৌকাতে ডাকাত পড়েছিল তাই আর কোন উচ্চবাচ্য করেনি ক্যানিং থানার পুলিশ

আমি অবাক হয়ে ভাবলাম নিশ্চয়ই মন্টুবাবুর কাজ না হলে একটা বাচ্চা ছেলেকে কে মারতে আসবে ? ডাকাতেরা হলে তারা জিনিসপত্র, টাকাপয়সা, সব ছিনতাই করে নিয়ে যেত কিন্তু তারা তা করেনি মনে মনে কথাটা ভাবলেও পলাশকে তা বললাম না কি জানি, যদি ক্ষোভে, দুঃখে, আক্রোশে, প্রতিশোধ নিতে মন্টুবাবুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! তাই চুপচাপ ছিলাম

            আমি তখন অবিবাহিত কোয়াটারে একাই থাকি এত রাত্রে পলাশ কোথায় যাবে একথা ভেবে তাকে থাকতে বললাম আমার কাছে পলাশ খুশি হল দুজন মিলে রান্না করলাম একসাথে বসে খেলাম পলাশ তার মাথার চুল সরিয়ে দেখাল তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন আঘাত দেখে আমি মনে মনে ভাবলাম, ঈশ্বরের অপার অনুগ্রহে সে আজ বেঁচে আছে কথা বলছে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছে কোনক্রমে

পরদিন কিছু টাকা পয়সা দিয়ে ওকে বিদায় জানালাম যাবার সময় আমাকে বলল-- মাকে দেখতে বড় ইচ্ছে করছে স্যার! আমি একদিন বাড়িতে যাব স্যার?

যদিও গোসাবা থানাটা আমার এলাকাভুক্ত নয় যদিও জানি মন্টুমাস্টার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে তবুও আমি তাকে না বলতে পারলাম না একটা ছেলে, সে তার মায়ের সাথে দেখা করবে, সেখানে আমি তাকে বাধা দেওয়ার কে? আমার মানবিকতায় বাধল তাকে বললাম-- কচুবেড়েতে যাবার আগে গোসাবা থানার বড়বাবুর সাথে দেখা করে যাস আমি ফোন করে বড়বাবু কে বলে দেব

দেখতে দেখতে বেলা অনেকটা বেড়ে গেল পলাতকের জীবনকাহিনি শোনার আগ্রহে মিত্র সাহেব উঠতে পারছিল না অবস্থা দেখে যতীন দারোগা বললেন -- কাহিনী অনেক লম্বা, অনেক বড় স্যার! বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে কিভাবে সেদিনের কিশোর পলাশ আজকের পলাতক হল, তার মর্মস্পর্শী কাহিনী আপনাকে একদিন শোনাব যা শুনলে অবাক হবেন স্যার আমাকে এখনো দেবতার মত শ্রদ্ধা করে পলাশ আজও অবহেলিত শোষিত, বঞ্চিত, মানুষদের জন্য কাজ করে বীরভূমজেলার সোনারগাঁ তো আপনি দেখেছেন এসেছেন স্যার! রেইডও করেছেন বহুবার সেখানকার মানুষজন দেবতার মত ভক্তি শ্রদ্ধা করে পলাতককে

             এসব কথা বলতে বলতে যতীন দারোগার কথা বলা হঠাৎ থেমে গেলএস.পি. রাউত সাহেব এসে ঢুকলেন কন্ট্রোলরুমে মিত্র সাহেবের কাছে সারাদিনের খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন তিনি

( ক্রমশ)