গল্প - ৩ । ভাদ্র ১৪৩১


  নতুন ঠিকানায় এসে 











পল্লব বসু

কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ



 

।।১।।

শহরের জনহীন একপ্রান্তে বাগান ঘেরা শান্ত, নিরিবিলি দোতালা বাড়ি। নিচের তলায় দুটো ঘর, ডাইনিং কাম কিচেন, একটা বড় হল ঘর, আর দুটো বাথরুম পায়খানা। দোতালায় কক্ষ-বিন্যাসটা সবটাই একতলার মতো হলেও সবচেয়ে সুন্দর এর ছোট্ট অথচ সুন্দর ঝুল বারান্দাটা। বারান্দায় বিদিশা একটা বেতের দোলনা আর কিছু বেতের চেয়ার রেখেছে। একটা আইভিলতা বারান্দার গ্রিল আঁকড়ে উঠে গেছে ছাদের কার্নিশে। সব মিলিয়ে একেবারে নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। তবে, বাগানটায় অবশ্য অযত্নের ছাপ স্পষ্ট, বহুদিন কোন মালির হাত না পড়ায় ঝোপ জঙ্গলে ছেয়ে গেছিলো, এখন একজন মালি একদিন এসে, কোনক্রমে কিছুটা কাজ চলার মতো পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে। 

বাড়িতে মানুষ বলতে ওরা তিনজন, মানে, বিশাখা, নয় বছরের মিঠি, আর রাতদিন ওদের সাথে থাকে, বছর পনেরো ষোলোর তিন্নি। তিন্নি এই বয়সেই যেমন পাকা গিন্নি, তেমনি মিঠির খেলার সাথীও বটে। মিঠির বাবা সমর, জাহাজের কুক, ন’মাস সে সমুদ্রে কাটায়, তিনমাস বাড়িতে। বিশাখা এখানকার একটা সরকারি মেয়েদের স্কুলে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। সেখানেই মিঠিকেও ভর্তি করে দিয়েছে। মেয়েকে সাথে করে নিয়ে সকালে স্কুলে চলে যায়, কিন্তু, মিঠির ক্লাস ফোর, আগে ছুটি হয়ে যায়, একটা টোটো ঠিক করা আছে, তাতে তিন্নি গিয়ে ওকে বাড়ি নিয়ে আসে। স্কুলটা বাড়ি থেকে টোটোয় প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের রাস্তা। মাস খানেক হল বিশাখারা এসেছে এখানে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সূত্রেই এক ভদ্রলোকের খোঁজ পেয়েছিল বিশাখা, এই বাড়ির চাবি যার কাছে থাকে। বাড়ির মালিক থাকেন ব্যাঙ্গালোরে, বাড়ি ভাড়া নিতে কেউ চাইলে এই বিমলবাবু লোক ডেকে ঘরদোর পরিষ্কার করিয়ে দেন। 

।।২।।

দুপুরে মিঠিকে চান করিয়ে খাইয়ে, নিজে খেয়েদেয়ে একটা জম্পেশ ভাতঘুম দেওয়া তিন্নির রোজকার স্বভাব। বাড়িতে ডাকাত পড়লে, কিম্বা আগুন লাগলেও এসময় বোধহয় ওকে ঘুম থেকে তোলা যাবে না। বারোটায় মিঠির ছুটি হয়, দেড়টার মধ্যে সবকিছু সেরে তিন্নি ঘুমিয়ে পড়ে, উঠতে উঠতে সাড়ে চারটে। বিশাখা ফেরে প্রায় সাড়ে পাঁচটা। ভোরে উঠলেও মিঠির চোখে কিন্তু ঘুম থাকে না দুপুরে। তিন্নি ঘুমিয়ে গেলে ও নতুন বাড়িটাকে ঘুরে ঘুরে আবিষ্কার করে রোজ। আগে এই বাড়িতে যারা থাকতো, তাদের বহু জিনিস, আসবাবপত্র বাড়ির বিভিন্ন ঘরে ছড়িয়ে আছে। বিশাখা বিমলবাবুকে জিজ্ঞেস করে জেনেছেন, আগের ভাড়াটেরা কোন প্রয়োজনে রাতারাতি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলো, বলেছিল, কিছু আসবাবপত্র থাক, ওগুলো আর নতুন জায়গায় নিয়ে যাবে না। দোতালার বারান্দার সংলঘ্ন মিঠির ঘরটায়, আগে একটা বাচ্চা মেয়ে থাকতো বলে মনে হয় মিঠির। একটা ড্রেসিংটেবিল প্রথম থেকেই আছে, তার আয়নায় কয়েকটা কালো ছোট্ট ছোট্ট টিপ লাগানো। তাছাড়া আছে লিপস্টিকের আঁচড়, টেবিলের উপরে বেশ কিছু সাজগোজের জিনিস। মিঠি মেসারিং টেপ দিয়ে মাটি থেকে আয়নায় লাগানো টিপের উচ্চতা মেপে দেখেছে, পঁচানব্বই সেন্টিমিটারের মতো। আয়নায় যদি মেয়েটি নিজের চোখের উচ্চতায় টিপটা লাগিয়ে থাকে, তবে ওর উচ্চতা আটানব্বই থেকে একশো সেন্টিমিটার হবে খুব বেশি হলে। মিঠি মোবাইলে গুগুল সার্চ করে দেখেছে, সাধারনতঃ একটা তিন থেকে চার বছরের মধ্যে বাচ্চার গড়পড়তা উচ্চতা এইরকম হয়। এই মোবাইলটা বিশাখা বাড়িতে রেখে যায়, যাতে মিঠি বা তিন্নি কোনরকম দরকারে তাঁকে ফোন করতে পারে। মায়ের কাছে দেখে ও মোবাইলে কোন অজানা জিনিস গুগুল সার্চ করে খুঁজে বার করতে শিখে গেছে। মিঠি মোটামুটি বাংলা পড়তে শিখেই ছোটদের রামায়ন, মহাভারত, ছোটদের রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, সারদা দেবী, এগুলো পড়ে ফেলেছিল। ক্লাস থ্রিতে জন্মদিনে বাক্স রহস্য  আর জয়বাবা ফেলুনাথ পেয়ে ও প্রথম গোয়েন্দা গল্পের স্বাদ পেলো। সেই থেকে মিঠি একেবারে রহস্যগল্পের পোকা। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যেটা খুব স্বাভাবিক, ও নিজেকে কখনো মিতিন মাসির সহকারিণী টুপুর আবার কখনো গোয়েন্দা গণ্ডালুর দলের কালু মনে করে। তবে এইটুকু বয়সেই ও অসম্ভব বুদ্ধিমান, দূরদর্শী এবং নিখুঁত পর্যবেক্ষক। জয়বাবা ফেলুনাথে ও পড়েছিলো হোটেলের ঘরে ফেলুদা দেয়ালে আয়না লাগানোর উচ্চতা দেখে বলে দিয়েছিলো ঘরের অন্য বোর্ডারের উচ্চতা। ও সেটা কেবল শিখেই নেয়নি, নিজের মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে সেই শিক্ষাকে সময়োপযোগী করে তুলেছে। ও বুঝেছে বড়দের ক্ষেত্রে উচ্চতা থেকে মানুষটির বয়স বোঝার কোন উপায় থাকে না। কিন্তু, ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওর ধারণা হয়েছে যে বয়সের সাথে সাথে উচ্চতাও ক্রমশ বাড়ে। ও বুদ্ধি খাটিয়ে গুগুলে খোঁজ লাগাতেই দেখেছে একেবারে অঙ্কের মতো মেলানো আছে সব। ফলে সেই বোনটার বয়সের একটা আন্দাজ ও করে ফেলেছে সহজেই। এই ঘরের একপাশে মিঠি গুছিয়ে রেখেছে তিয়াসা আর পিয়াসার ঘর-সংসার। তিয়াসা আর পিয়াসা ওর দুই বারবি ডল। আর চিনি আর পপিন্স, ওর লাল টেডি আর গোলাপি পাপ্পি, তাদের কোন আলাদা জায়গা নেই, মিঠির বিছানাখানা দখল করেই তারা দিন কাটায়। মুভারস প্যাকারসের কাকুরা মিঠির খাটটা যেখানটায় রেখেছে, মিঠি আগেই দেখেছে, সেখানে ঐ বোনটার খাট ছিল, কারণ মাটিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বর্গাকার চারটে দাগ ছিল, সেটা যে আগের ভাড়াটেদের খাটের পায়ার দাগ, ছোট্ট মিঠি সেটা বেশ বুঝে গেছে। তাছাড়া ঐ ফ্লুরেসেন্ট ছোট বড় তারাগুলো, তাদের মাঝখানে কি সুন্দর আধখানা চাঁদ, সিলিং-এর যে আয়তাকার আকাশটা জুড়ে আছে, ঠিক তার নিচেই তো শোবার খাটটা থাকবে নাকি বল? ঘরের সব আলো নিভিয়ে টেডি আর পাপ্পিকে জড়িয়ে রাতে যেই শুয়ে পড়ে মিঠি, চোখের উপরে এক টুকরো মায়াময় আকাশ যেন জেগে ওঠে। পূর্ণিমার রাত্রে আইভিলতার গা চুইয়ে চাঁদের আলো দেয়ালের গায়ে ঝিলমিল তৈরি করে। আগে বিশাখা ছিল বর্ধমান শহরের একটা স্কুলে। সেখানে যে বাড়িতে থাকতো সেটা তেমন খোলামেলা ছিল না, তাই এখানে এসে মিঠি পুরানো বন্ধুদের ফেলে আসার দুঃখও কিছুটা ভুলতে পেরেছে।  

।।৩।।

আজ দুপুরে মিঠি এসেছে চিলেকোঠার ঘরে। এই ঘরের সামনেই অনেকটা জায়গা জুড়ে লম্বা ছাদ। এই ঘরটাও ছিল ঐ বোনটার পড়াশোনা আর খেলার জায়গা। তবে ঘরটা ছিল তালা বন্ধ, মা’কে না জানিয়ে তিন্নি আর ও মিলে এই ঘরের তালাটা হাতুড়ির বাড়ি মেরে ভেঙে ফেলেছে। আসলে এখানে এসে থেকে ঐ ঘরটা নিয়ে একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছিল মিঠির মনে। কিন্তু তালা থাকায় খুলতে পারেনি। গতকাল বিকেলে মা আসার একটু আগে দুজনে ভেঙে ফেলে ওটা। কিন্তু, ঘরে ঢুকে কিছু আর দেখা হয়নি। অনেক কষ্টে কৌতূহল চেপে কাল থেকে আজ কাটিয়েছিল মিঠি, এইবার এসেছে সেই শুভ সময়। 

নিতান্তই এক বাচ্চা মেয়ের তুচ্ছ জিনিসপত্রে ঘরখানা ভর্তি। টেবিলের উপরে মেয়েটি প্ল্যাস্টিকের এ, বি, সি, ডি আর অ, আ, ক, খ হরফ ছড়িয়ে রেখেছে। টেবিলের প্রায় কেন্দ্রে কয়েকটা ইংরেজি হরফ পাশাপাশি কিন্তু এলোমেলো সাজিয়ে রাখা, তাদের মাঝে আবার একটা সংখ্যা... “TI2R”। মিঠি এর মাথামুণ্ডু বুঝতে পারে না। তবে মোবাইলে টুক করে টেবিলের একটা ছবি তুলে নেয় ও। টেবিলের পাশে একটা স্টিলের র‍্যাক, সেটা ভর্তি করে থরে থরে বইপত্র। অধিকাংশই ছবির বই, ড্রয়িং বই, এছাড়া ক্রেয়ন, কালার পেন্সিল, ওয়াটার কালার এইসব। ছোট্ট একটা ক্যাম্প খাট পাতা আছে ঘরে, তার উপরে দুনিয়ার খেলনা ডাই করে রাখা। টেবিলে লাস্ট ইয়ারের ডেট ক্যালেন্ডার রাখা, তাতে নভেম্বর খোলা আছে। আট তারিখটা লাল পেন্সিলে গোল করে রাখা। 

।।৪।।

রাত্রে খাওয়ার টেবিলে মিঠি মায়ের কাছে সারাদিনের গল্পের ঝুলি উজার করে দিতে থাকে, গুছিয়ে বলতে থাকে নিজের আবিষ্কার কাহিনী, “জানো মা, এই বাড়িতে আগে একটা চার বছরের বোন থাকতো...”

“ওমা! তাই নাকি? তা আমার মিঠি কি করে সে কথা জানতে পারলো?”

“মিঠি নয়, মিঠি নয়, ঐন্দ্রিলা, ডিটেকটিভ ঐন্দ্রিলা মুখার্জ্জী।” মিঠি দুই উজ্জ্বল চোখ তুলে তাকায়।

“আর, কী জেনেছে মিস মুখার্জ্জী?”

“মেয়েটার নাম ছিল তিতির। আমি না মা প্রথমে ধরতে পারিনি, কিন্তু চিলেকোঠার ঘরে...”  ভয়ে মিঠি চুপ করে যায়।

“ঐ ঘরে তো তালা ছিল, তোরা তালা ভেঙেছিস?”

“মা, খুব কৌতূহল হচ্ছিলো। ঘরে তিতিরের সব পড়ার আর খেলার জিনিস আছে, ওরা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় কিছুই নিয়ে যায়নি। টেবিলে দেখি পাশাপাশি সাজানো ‘টি’, ‘আই’, ‘টু’, আর ‘আর’। প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে মনে হল, এই এলোমেলো হরফ সাজিয়ে ও নিজের নাম লেখেনি তো? কিন্তু, মাঝে ‘টু’ টা এসে সব গুলিয়ে দিচ্ছিল। নামের মাঝে সংখ্যা আসে কি করে? তারপর, মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা ছবিটা দেখতে দেখতে ক্লিক করলো মাথায়। প্ল্যাস্টিকের হরফগুলো তো একসেট করে থাকে। তাহলে, সেখানে একটা ‘টি’, একটা ‘আই’ আছে। এবার ধর তোমার নাম বিদিশা। কিন্তু, তুমি দুবার ‘আই’ পাবে কোথায়? যার নাম তিতির, সে দুটো ‘টি’ আর দুটো ‘আই’ পায় কই? তাই তার জায়গায় তিতির ‘দুই’ লিখে দিয়েছে। কি বুদ্ধি না?”

বিদিশা অবাক চোখে নিজের মেয়েকে নতুন করে যেন আবিষ্কার করতে থাকেন, আর কপট রাগে ওর মাথার চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে বলেন, “সারাদিন খালি এইসব, পড়াশোনা নেই নাকি?”

মুখ নামিয়ে নিয়ে মিঠি বলে, “করি তো, তুমি ফিরে এলেই তো পড়তে বসি...”

।।৫।।

আজ তিন্নি ঘুমিয়ে পড়তেই মিঠি একতলার ঘরগুলোয় অনুসন্ধান চালাতে এসেছে। বাড়ির এতগুলো ঘর প্রয়োজন হয় না বলে, একতলার ঘরগুলো খালিই পড়ে থাকে। ওরা দোতালাটাকে থাকার উপযুক্ত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। যদিও ওরা আসার আগেই বিমলকাকু লোক ডেকে ঘরদোর সব ভালো করে পরিষ্কার করিয়ে রেখেছিল। ওরা যেদিন এলো, সেদিন, মালি ডেকে বাগানের জঙ্গলও মোটামুটি সাফ করিয়ে দিয়েছিলো। তিন্নি এসে আবার একচোট সব ধোয়ামোছা করেছিলো। তবে এই একমাসে নতুন পরিবেশে আর নতুন স্কুলে মানিয়ে নিতেই মিঠির সময় চলে গেছে। স্কুল থেকে ফিরে মনমরা দুপুরগুলো বিছানায় উপুড় হয়ে পুরানো বন্ধুদের সাথে কাটানো স্মৃতি হাতড়ে, আর জায়গা পরিবর্তনের ঝামেলায় পিছিয়ে পড়া সিলেবাসের পড়া সামলেই কেটে গেছে। বাড়িটা আর মিঠির স্বভাবমতো ‘এক্সপ্লোর’ করাই হয়নি। এই একমাসের কিছু বেশি সময়ে ক্রমশ মিঠি সামলে নিয়েছে নিজেকে। এক, দুই করে স্কুলে নতুন বন্ধু হয়েছে, পেছিয়ে পড়া, পড়া অনেকটা গুছিয়ে এনেছে, ভালো লেগে গেছে এই খোলামেলা পরিবেশে এই চমৎকার বাড়িটা। আবার ওর একলা দুপুরগুলো সেজে উঠেছে আবিষ্কারকের ভূমিকায়।

ওর ঘরের ঠিক নিচের এই ঘরটায় এক কোণে একটা খালি কম্পিউটার টেবিল একাকী পড়ে আছে। মিঠি আঁতিপাঁতি খুঁজে দেখে টেবিলটা, এটা ওর কাছে একটা মজার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুচ্ছ জিনিসপত্র থেকে অতীত খুঁজে বের করা। টেবিলের উপর পিলার দিয়ে আবার একটা তাক করে রাখা আছে। তার উপরে হয়তো প্রিন্টার জাতীয় কিছু থাকতো। ঐ তাকের সামনের বর্ডারের বাঁদিকে কাগজের ছোট স্লিপ লাগানো আছে, আর তাতে সঙ্কেতে কিছু অক্ষর, কিছু চিহ্ন আর কিছু সংখ্যা লেখা। মিঠির মনে হয় ওগুলো বিভিন্ন পাসওয়ার্ড। টেবিলের ঠিক নিচে একটা স্লাইডিং ট্রে আছে, ওতে কী-বোর্ড আর মাউস থাকতো বুঝতে অসুবিধা হয় না মিঠির। কিন্তু, মাউস-প্যাডটা ট্রের বাঁদিকে। মিঠি বেশ আবিষ্কার করে, এই টেবিলে যে মানুষটি কাজ করতেন বসে, তিনি লেফ্টি না হয়ে যান না। শুধু তাই নয়, তাঁর পছন্দের সংখ্যা ছিল ‘সাত’, প্রত্যেকটা পাসওয়ার্ডেই সাত সংখ্যার বহুল ব্যবহার। দরজার পিছনে জামাকাপড় ঝুলিয়ে রাখার কয়েকটা হুক লাগানো। মিঠি মাটি থেকে হুকের উচ্চতা, মাটি থেকে কম্পিউটার টেবিলের উপরের ঐ তাকটার উচ্চতা মেপে নিয়ে হিসেব কষে ফেলে গুগুল খুঁজে। একজন মানুষ চেয়ারে বসে ঐ উঁচু তাকের গায়ে কিছু লিখতে গেলে কোমর থেকে তাঁর উচ্চতা, বা হুকে জামা ঝোলাতে গেলে তাঁর উচ্চতা বার করে ফেলে মিঠি বেশ অবাক, মানুষটা অন্ততঃ ছয় ফিট উঁচু তো হবেই। দরজার পাশে, দেয়ালের গায়ে একটা হুক লাগানো আছে সেখানে হুকের ঠিক নিচে আয়তাকার একটা অংশের রং দেয়ালের বাকি অংশের রঙের তুলনায় উজ্জ্বল, অর্থাৎ ঐ অংশ, ধুলো এবং জলীয়বাষ্পের ছোঁয়া পেয়েছিলো অনেক কম। মিঠি ওর বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারে ওখানে একটা বেশ বড় আকারের একটা ছবির ফ্রেম ছিল বেশ অনেকদিন ধরে। কিন্তু, ঐ আয়তাকার অংশেই একাধিক অর্ধ চন্দ্রাকৃতি আড়াআড়ি আঁচড়ের দাগ, দেখে মিঠির মনে হয় ছবিটা কোন কারণে দেয়ালে ঘষটে গেছিলো আড়াআড়ি আর তাতেই ফ্রেমের আঁচড়ে ঐ দাগ পড়েছে। কিন্তু সেটা একবার নয়, হয়েছে একাধিক বার। মিঠি মেসারিং টেপ আর আতস কাঁচ সাথে নিয়েই ঘোরে সর্বদা। চেয়ারের উপরে উঠে ভালো করে আতস কাঁচে দেয়ালের ঐ জায়গাটা এবং আশেপাশের অংশ খুঁজে দেখে ও। পেরেকের গায়ে কিছু একটা কালচে চটচটে জিনিস লেগে আছে, আশেপাশে রঙের মধ্যেও কিছু কালচে রঙের ছিটে রয়েছে যেন। 

।।৬।।

রাত্রে ঘুমের মধ্যে খালি ছটফট করেছে মিঠি। অদ্ভুতভাবে স্বপ্নে ভেসে উঠেছে চিলেকোঠার ঘরটা। মেঝেতে ক্যাম্প-খাটের পায়াগুলো বরাবর ঘষ্টানোর দাগ, অনেকদিন ধরে এক জায়গায় থাকা খাট টেনে সরালে যেমন হয়। খাট সামনে দরজার দিকে ঠেলে সরিয়ে, সেই ফাঁকের মধ্যে রাখা আছে একটা দুই ধাপের সিঁড়ি দেওয়া টুল। ইলেকট্রিক লাইনের কাজ যারা করেন, বা রঙের মিস্ত্রী, তাঁদের এমনি টুলে উঠে উঁচুতে কাজ করতে দেখেছে মিলি। চিলেকোঠার ছাদটা অ্যাসবেস্টসের, তার নিচেই ফলস সিলিং করা আছে। সাদা সিলিং-এর গায়ে একটা ধুলোমাখা হাতের ছাপ স্বপ্নের মধ্যে চোখে ভেসে ওঠে মিঠির। ছাপটায় কি একটা গণ্ডগোল আছে যেন...

ধড়মড় করে উঠে বসে মিঠি, ঘামে সমস্ত শরীরটা ভিজে গেছে ওর। চুপিচুপি বিছানা থেকে নেমে, মায়ের ঘরে উঁকি মারে ও। মা বিছানায় অঘোরে ঘুমোচ্ছে, পাশে ক্যাম্প-খাটে তিন্নিও তথৈবচ। মিঠি প্রথমে এক রকম পা টিপে টিপে ছাদের চিলেকোঠা ঘরে আসে। ভয়ে সিঁড়ির বা ছাদের আলো জ্বালাতে পারেনি, যদি মা বা তিন্নি জেগে যায়, তবে আবার হাজার কৈফিয়ত দিতে হবে। অন্ধকারে অন্যরকম একটা ভয়ে বুকের ভিতরটা শুকিয়ে যায় ওর। টর্চ হাতে চিলেকোঠার লাইটটা জ্বালিয়ে একটু যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে আসে। সিএফেল লাইটটা থাকতেও ও সিলিং এর শেষের দিকে টর্চের আলো ফেলে। একটা পূর্ণ-বয়স্ক মানুষের বাঁ-হাতের ধুলো মাখা ছাপ ফলস সিলিং-এ, আরেক পাশে কয়েকটা আঙুলের ডগার ছাপ, সম্ভবতঃ ডান হাতের। কিন্তু, বাঁ-হাতের ছাপে কড়ে আঙুলের দাগ কই? ফলস সিলিং অনেকগুলো বর্গাকার প্ল্যাসটার অফ প্যারিসের ব্লক জুড়ে তৈরি। এই জায়গায় কয়েকটা ব্লক খুলে পরে আবার জুড়ে দেওয়া হয়েছে মনে হয়, খুব তাড়াহুড়োয় করা বাজে কাজ, জোড়ের বাইরেও জায়গায় জায়গায় সিমেন্ট লেগে গেছে।

মিঠি পা টিপে টিপে এবার পৌঁছায় একতলার সেই ঘরে, যেখানে দুপুরেই ঘুরে গেছে ও। ঘরের আলো জ্বালিয়ে দরজার পাল্লার উপরে আলো ফেলে ও। এই ছাপটার ছবিই চোখে ভাসছিলো স্বপ্নে। দরজার পাল্লার ধারে, পাল্লার সবুজ রঙের উপর কালচে রঙের হাতের ছাপ, বাঁ-হাতের, কিন্তু কড়ে আঙুলের ছাপ নেই।

।।৭।।

আজ তিন্নি ঘুমাতেই, মিঠি ছুটেছে বাগানে। এই বাড়িতে আসার পর থেকে ছাদে গেলেও মিঠি বাগানে গিয়েছে হাতে গোনা এক কি দুইদিন। আসলে মালি মোটামুটি বাগানের ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে গেলেও, এখনো প্রচুর অপ্রয়োজনীয় গাছের ভিড় জমে আছে। একটা বড় কাঁঠাল গাছ আছে, তাতে একটা বড় মৌচাক, বেলগাছের গোরায় কাঠ পিঁপড়ের বাসা। সূর্য পশ্চিমে ঢলতে থাকলেই, মশাদের আক্রমণে দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়। খুব বাজে ধরণের কিছু পোকামাকড় আছে বাগানে। মিঠির প্রথমদিনের অভিজ্ঞতাই খুব খারাপ হয়েছিল। পা চাপা লেগিংসের মধ্যে দিয়েও কি একটা পোকা যে ঢুকে পায়ে কামড়ে দিয়েছিল কে জানে, লাল হয়ে ফুলে গিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলো ও। তাছাড়া, বোলতা, ভীমরুল, কেন্নো, শামুক থেকে অনেক অজানা অচেনা পোকামাকড় ছড়িয়ে চারদিকে। কিন্তু, মিঠি নিজেও জানে না, কি এক অদম্য কৌতূহল ওকে কাল যেমন বহ্নিপতঙ্গের মতো মধ্যরাত্রে ছাদে এবং একতলায় টেনে নিয়ে গেছিলো, আজ তেমনি আঠার মতো ঐ আতঙ্কের বাগানে টেনে নিয়ে চলেছে। মনের মধ্যে কোথাও একটা অসঙ্গতি...

ও আজকে লেগিন্সের তলাটায় দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নিয়েছে, সাথে স্নিকার পড়েছে, যাতে পোকামাকড় পথ না পায়। ফুল-স্লিভ জামার সাথে শরীরের মুক্ত অংশে বেশ করে ওডোমস মেখে নিয়েছে। এরপরও হাতে রেখেছে একখানা মশা তাড়ানোর র‍্যাকেট। কুয়োতলা পেরোলেই বাগানের তথা বাড়ির পেছনের অংশ। এদিকে বেশকিছু নারকেল সুপুরির গাছ, একটা ডুমুর গাছ আর বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক আছে তিনটে। পুরো বাগানটাই লম্বা ঘাসে ছেয়ে গেছে। মালি আবার বাড়ির পেছনটা সেভাবে হাতই দেয়নি, ফাঁকি দিয়ে দায়সারা কাজ সেরে পালিয়েছে। ফলে এদিকে ঘাসের সাথে বুনো গাছেরাও ভিড় জমিয়ে আছে। 

কুয়োর বাঁধানো চাতাল আর নারকেল গাছে মধ্যের জমির বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে ঘাসের দৈর্ঘ্য তুলনামূলক কম, ঝোপজঙ্গলও বেশ কম, কিন্তু, সেখানে যে খুব টাটকা হাত পড়েছে তেমনও কোন চিহ্ন নেই। মাটিতে শেওলা হয়ে গেছে, কিন্তু যেখানে ঘাসের দৈর্ঘ্য কম সেখানে মাটি একটু এলোমেলো, অন্য অংশের তুলনায় কিছুটা উঁচু, অনেকটা হালকা ঢিপির মতো, শেওলাও সেভাবে নেই। মিঠি টেপ বার করে মেপে নিয়েছে, ছয় ফিটের কিছু বেশিই হবে। কিছু দূরে একটা মর্চে পড়া কোদাল পড়ে আছে, গায়ে শেওলা আর মাটি লেগে। মিঠি দেখেছে, মালিরা কোদাল, শাবল সব নিজেদের সাথে এনেছিল, আবার কাজের পর ফেরত নিয়ে গেছে। এই কোদালখানা বাগানে আগে থেকেই ছিল।

।।৮।।

পিঙ্কি মিঠির বেস্ট ফ্রেন্ড, আবার মিঠিরা টোটোয় যে পথে ফেরে, সেই রাস্তায় পিঙ্কির বাড়ি। তাই ওকে রোজ যাবার এবং ফেরার পথে ওরা বাড়ি থেকে তোলে আবার নামিয়ে দিয়ে যায়। আজ ফেরার পথে মিঠি হঠাৎ টোটোকাকুকে বলে, “কাকু একবার থানায় নিয়ে চল তো...”

ঘ্যাঁস করে নিমাই গাড়ি থামায়, “কি বলছ দিদিভাই? তোমার মাথা খারাপ হল নাকি? থানায় গিয়ে কি করবে?”

পিঙ্কি এবার মুখ খোলে, “আমার দিদি বহ্নি সেন, থানার ওসি, একবার একটু দেখা করেই চলে যাবো...”

“ওমা, ম্যাডাম তোমার দিদি হন! বেশ বেশ, আমি নিয়ে যাচ্ছি...”

টোটোর মুখ থানার দিকে ঘোরে, দ্বিপ্রাহরিক ঘুমের বারোটা বাজবে ভেবে তিন্নি একটু ব্যাজার হয়ে পড়ে।


বহ্নিদিদি পুলিশের বড়বাবু হলে হবে কি, কি মিষ্টি তাঁর ব্যবহার। কোমরে চামড়ার খাপে পিস্তল থাকলেও পকেটে আবার ক্যাডবেরিও রয়েছে। মিঠিরা যেতেই ওদেরকে ক্যাডবেরি বার করে দিল। মিঠির কাছে ওদের ভাড়াবাড়ি নিয়ে সব সন্দেহের কথা শুনে পিঙ্কি আগে থেকেই দিদিকে, ওদের থানায় আসার এত্তেলা দিয়ে রেখেছিলো। 

“বল ক্ষুদে গোয়েন্দা, তুমি নাকি তোমাদের নতুন বাড়িতে কি সব গোলমাল খুঁজে পেয়েছো?”

“দিদি, বাড়ির কোন ঘরে তালা দেওয়া নেই, অথচ চিলেকোঠা, যেখানে একটা ছোট বাচ্চার কতগুলো তুচ্ছ খেলনাপাতি, বইপত্র আছে, সেখানে তালা দেওয়া। তখনি একটু খটকা লেগেছিলো। তারপর দেখলাম, ঘরের ঐ বই ভর্তি ভারী ক্যাম্প-খাট, যেটা তিতিরের পক্ষে ঠেলে সরানো সম্ভব না, বড়রা কেউ সরিয়েছে ওটাকে। ওটা  সরিয়ে এবং ঐ ফলস সিলিং-এর চারটে স্ল্যাব সরিয়ে তাড়াহুড়ো করে ঠিক কি করেছিলো সেখানে? যে করেছিল, সে বাঁহাতে সাবলীল, কিন্তু, সেখানে কড়ে আঙুল নেই...”

“তুমি কি মনে করছ? কোন দামি কিছু সিলিং-এর আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়েছে?”

“যারা চলে যাবে, দুর্লভ জিনিস তারা এখানে লুকিয়ে রেখে যাবে কেন?”

“তবে?”

“নিচের ঘরে যে কম্পিউটারে কাজ করতো, সে বাঁহাতি, ছয় ফুটের মতো লম্বা। ঐ ঘরে একটা ধ্বস্তাধস্তি হয়েছিলো আমি নিশ্চিত। একজন আরেকজনকে দেয়ালে ঠেসে ধরেছিল। তাঁর পিঠের পেছনেই দেয়ালে ছিল একটা ফটো ফ্রেম। ধাক্কাধাক্কিতে সেই ফ্রেম দেয়ালে ঘষা খেয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপর দেয়ালে সেঁটে থাকা লোকটির মাথা সজোরে ধাক্কা খায় ফটো ঝোলানোর পেরেকে, একেবারে গেঁথে গেছিলো মাথার খুলি। পেরেকের গায়ে সম্ভবতঃ রক্ত চটচটে হয়ে লেগে আছে আজও। যথাসম্ভব রক্তের চিহ্ন মুছে ফেললেও কিছু ছিটে দেয়ালে থেকে গেছে। রক্তমাখা হাতে দরজা খুলতে গিয়ে ছাপ লেগেছে দরজার পাল্লায়, সেটা আর খেয়াল পড়েনি। তাতে কড়ে আঙুল নেই। যার মাথায় আঘাত লেগেছে সে অবশ্যই ছয় ফিট লম্বা, পেরেকের উচ্চতা থেকে তাই মনে হয়। আবার রক্ত মাখা হাতের ছাপ দরজার যে উচ্চতায় লেগেছে, তারও উচ্চতা ছয় ফিট, যার বাঁহাতে কড়ে আঙুল নেই...”

বহ্নি কিন্তু এবারে যথেষ্ট গম্ভীর হয়ে যায়, “বাগানে কি দেখেছ তুমি?”

“ছয় ফুটের মতো জায়গায় আমার ধারণা গভীর খুঁড়ে কিছু পুঁতে দিয়ে কোনক্রমে অসমান মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিলো। দুরমুজ করে সমান করার সুযোগ হয়নি। ওখানে একটা পরিত্যক্ত কোদাল আছে। তার গায়ে চাইলে কড়ে আঙুল বিহীন হাতের ছাপ পেতে পারো দিদি...”

পরিশিষ্ট

ক্ষুদে গোয়েন্দার সন্দেহের সূত্র ধরে বাগানের মাটি খুঁড়ে শার্ট প্যান্ট পড়া প্রায় ছয় ফিটের এক নরকঙ্কাল বেরিয়েছে, তবে তাঁর বাঁহাতে কড়ে আঙুল আছে। চিলেকোঠার ফলস সিলিং-এর উপরে লুকিয়ে রাখা একটা নাইলনের বস্তা বেরোল। তারমধ্যে প্ল্যাস্টিকে জড়ানো এক শিশুর কঙ্কাল, পরনে গোলাপি ফ্রক। বিমলকে জেরা করে লোকটি, অর্থাৎ অর্জুন এবং তিতিরের ছবি আঁকিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিমলের বক্তব্য অনুযায়ী শেষদিন গাড়ি ডেকে ভাড়া মিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে সব জিনিসপত্র নিয়ে অর্জুন, অর্থাৎ এই বাড়ির আগের ভাড়াটেই বিদায় নিয়েছিল, তবে তাঁর সাথে বাচ্চা মেয়েটি ছিল না। বিমল একটা বড় ভুল করেছিলো, ভাড়া দেওয়ার সময় অর্জুনের থেকে কোন আইডি চেয়ে নেয়নি। ফলে ওদের হদিশ পেতে কালঘাম ছুটে গেল পুলিশের। তবে, বিভিন্ন থানায় ছবি ফ্যাক্স করে, সোর্স কাজে লাগিয়ে অর্জুনের যমজ ভাই অরুণ পুলিশের জালে অবশেষে ধরা পড়লো একটি অন্য সূত্রে। সাইবার ক্রাইম সেল একটি ব্ল্যাকমেলের কেসের তদন্ত করতে গিয়ে অরুণকে ধরে, পরে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসে দুই ভাইয়ের ধারাবাহিক সাইবার ক্রাইমের দীর্ঘ ইতিহাস। শেষে বখরা নিয়ে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি, এবং বেকায়দায় পেরেকের আঘাত লেগে মৃত্যু। তিতির সব দেখে ফেলায়, খুনের সাক্ষ্য লোপাট। আটই নভেম্বর চার বছরের জন্মদিনের দিন, কাকার হাতে মৃত্যু হল তার। অর্জুনের যমজ ভায়ের কথা বিমল না জানায়, সুযোগ বুঝে ‘অর্জুন’ সেজে চুপচাপ কেটে পড়েছিল অরুণ, দুজনের চেহারায় অসম্ভব মিল, কেবল ছোটভায়ের বাঁহাতে কড়ে আঙুলটা নেই। তবে শেষরক্ষা হল না, এক অত্যন্ত বুদ্ধিমান কৌতূহলী শিশুর বিচক্ষণতায় গোপন কথাটি আর গোপন রইলো না...