অপূর্ব সূন্দর এই
দ্বীপটিকে ঘিরে আছে নীল সফেন সমুদ্র। আর মাথার ওপরে দিগন্ত ছাপানো অফুরন্ত নীলা
আকাশ।
প্রায় এক
কিলোমিটার লম্বা এই দ্বীপটি এক সময় ছিল মৎস্যজীবীদের স্বর্গ। ১৯৪৫ সালে এই দ্বীপে
বাস করতেন প্রার ন’শোর মতো মৎস্যজীবী। তাঁরা এই দ্বীপের পার থেকেই প্রচুর মাছ
ধরতেন এবং বিপুল অর্থ রোজগার করতেন।
তবু হঠাৎই কমতে
শুরু করল তাঁদের সংখ্যা। না, সমুদ্রে মাছের
জোগান বিন্দুমাত্র কমেনি। তবু তাঁরা দল বেঁধে বেঁধে দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে লাগলেন।
অবশেষে ২০১৮ সালে মৎস্যজীবীদের সংখ্যা এসে দাঁড়াল মাত্র তেরো জনে। না, রোগভোগ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই দ্বীপে মানুষের সংখ্যা কমেনি।
মানুষের সংখ্যা
কমেছিল পুরো দ্বীপটি বিড়ালদের দখলে চলে যাওয়ার জন্য। তাদের উৎপাতে। বলা বাহুল্য,
মৎস্যজীবীরা ভালবেসেই
জাপানের মূল ভূখণ্ড থেকে নিয়ে এসেছিলেন কয়েকটি বিড়ালকে। এখানে আসার পরে উল্কার
গতিতে বংশ বিস্তার করেছিল তারা। শুধুমাত্র নিজেদের সংখ্যা দিয়েই এই দ্বীপ ছাড়া
করেছিল মনুষ্যপ্রজাতিকে।
সুন্দর, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মানে যেহেতু শুধুমাত্র দূষণমুক্ত জগৎ গড়ে
তোলাই নয়, আমাদের চারপাশে
যে পশুপাখি-কীটপতঙ্গ থাকে, তাদেরও বাঁচিয়ে
রাখা , সে জন্য ১৯৭৪ সাল থেকে
প্রতি বছর মহাধুমধাম করে ৫ জুন পালিত হয়, আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
জাতিসংঘের ঘোষণার
বহু আগেই গ্রামের মানুষেরা যে সেটা মনে প্রাণে বুঝতে পেরেছিলেন, সে জন্যেই এওশিমা দ্বীপের মৎস্যজীবীরা
বিড়ালদের জীবনে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য নিজেরাই ওদের ছেড়ে দিয়েছিলেন ওই দ্বীপটি।
এই মুহূর্তে
এওশিমা দ্বীপে বাচ্চাকাচ্চা মিলিয়ে বিড়ালের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো ছুঁই
ছুঁই।
এক সময় গমগম করা
মৎস্যজীবীদের এই গ্রাম এখন প্রায় জনমানব শূন্য। সাকুল্যে মাত্র ৬ জন মানুষ থাকেন
সেখানে। তাও শুধুমাত্র বিড়ালদের দেখাশোনা করার জন্য।
সেই ছ'জন বাসিন্দাকেও খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।
দেখে দেখে পা ফেলতে হয়। যাতে কোনও বিড়াল পায়ের তলায় চাপা পড়ে মারা না যায়।
যদি মারা যায়, তা হলে আর দেখতে
হবে না, মুহূর্তের মধ্যে শুরু
হয়ে যাবে বিড়ালদের তাণ্ডব। শান্তশিষ্ট নরম লোমওয়ালা তুলতুলে বিড়ালগুলো হয়ে
উঠবে প্রচণ্ড হিংস্র।
এওশিমা দ্বীপে এত
বিড়াল যে, যে-দিকে তাকাবেন,
সে দিকেই দেখতে পাবেন
বিড়ালদের জটলা। সারাক্ষণই যেন মিটিং করছে তারা।
এরা সাধারণত
মৎস্যজীবীদের ছেড়ে যাওয়া ঘরবাড়িগুলোতেই থাকে। তবে তারা মানুষদের বিছানায়
ঘুমোয় না। তাদের পছন্দের জায়গা হল ভাঙা পিয়ানোর খোল, নষ্ট টিভির বাক্স বা খাটের তলা।
স্থানীয়দের কাছে এই
বিড়ালগুলোর উৎপাত যতই বিরক্তির কারণ হোক না কেন, দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক কিন্তু এই বিড়াল
দ্বীপেও বেড়াতে আসেন। শুধুমাত্র রংবেরঙের বিভিন্ন মাপের অদ্ভুত সুন্দর এই
বিড়ালগুলোকে একবার চাক্ষুষ করার জন্য।
আর পর্যটকেরা এই
দ্বীপে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ঘিরে ধরে বিড়ালেরা। যতক্ষণ তাঁরা থাকেন,
ততক্ষণই তাঁদের পায়ে
পায়ে ঘুরঘুর করে। কারণ, এত দিনে তারা
বুঝে গেছে যে, পর্যটকেরা যখন
এখানে আসছেন, তাদের জন্য কিছু
না কিছু উপহার নিয়ে আসছেনই।
উপহার মানে
বিড়ালদের জন্য পর্যটকেরা মূলত নিয়ে আসেন মাছ আর চকোলেট। সেগুলো খাওয়া হয়ে
গেলেই খুশি মনে তারা বসে পড়ে পর্যটকদের ক্যামেরার সামনে। নানান পোজে। কখনও একা,
কখনও সপরিবারে, কখনও আবার পুরো দল বেঁধে। সেই দলে বিড়ালের
সংখ্যা এতটাই থাকে যে, সেটাকে আর ফ্রেমে
ধরা যায় না।
সাধারণত দিনে এসে
দিনেই ফিরে যান পর্যটকেরা। আর তাঁরা চলে গেলেই বিড়ালেরাও ফিরে যায় যে যার নিজের
ঘরে, নয়তো খেলার মাঠে। না,
এই দ্বীপে কোনও খেলার মাঠ
নেই। তবে অধিকাংশ মৎস্যজীবীরা চলে যাওয়ার পরে পুরো দ্বীপটাই এখন ওদের কাছে খেলার
মাঠ হয়ে গেছে।