অলোক কুমার প্রামাণিক



  ছড়া সম্রাট ভবানীবাবু









অলোক কুমার

প্রামাণিক





 

আমাদের ঠিক একটি গ্রাম পরেই তখন বইমেলা চলছিল। রবিবার ছুটির দিনে এক বন্ধুর অনুরোধে গিয়েছিলাম ওই বইমেলাটিতে। সেই বন্ধুটি প্রতিবছরই ওখানের ওই মেলাতে একটি বড়ো বইয়ের স্টল দেয়। মেলাতে গিয়ে দেখলাম জানুয়ারি মাসের কনকনে শীতকে উপেক্ষা করেই অনেক মানুষ এসেছে মেলাটি উপভোগ করতে। অবশ্য প্রথমদিকে তেমন ভিড় ছিল না। ঠিক সন্ধ্যা নামার সঙ্গে-সঙ্গেই যেন ভিড়টা বেড়ে গেল। বিশেষ করে যখন মাইকে ঘোষণা করা হল, ‘আজকের এই মেলার সাহিত্য সম্মেলনে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে উপস্থিত হচ্ছেন আজকের সভার প্রধান অতিথি তথা ছড়া সম্রাট কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার।তখনই বুঝেছিলাম, আজকের ভিড়টা হওয়ার এটা একটা বিশেষ কারণ

আমার মেলা থেকে বেরিয়ে একটি নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু ছড়া সম্রাট আসছেন শুনে একটু দাঁড়িয়ে গেলাম। মেলার এক স্বেচ্ছাসেবক বন্ধু আমাকে একটি চেয়ার ম্যানেজ করে দিলে মুক্তমঞ্চের সম্মুখেই আমি একটু বসে গেলাম

তখন স্থানীয় সাহিত্যিকরা মঞ্চটিকে আলো করে বসে আছেন। চলছে কবিতাপাঠ ও অনুগল্প-পাঠ। মাঝেমধ্যে কোনো-কোনো সাহিত্যিক সাহিত্যের উপরে ছোটো ছোটো বক্তব্যও রাখছেন। সেগুলো শুনতেও বেশ ভালোই লাগছিল

হঠাৎ দূর থেকে একটা ব্যান্ডপার্টির সুর কানে ভেসে এলে দেখলাম, মঞ্চে উপবিষ্ট সাহিত্যিকদের মধ্যে যেন একটা আলোড়ন পড়ে গেল। বুঝতে পারলাম, ছড়া সম্রাটকে স্বাগত জানানোর জন্যই ব্যান্ডের দল রাস্তার মোড়ে অপেক্ষাতে ছিল এবং উনি গাড়ি থেকে নামতেই ওঁকে অনার দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, তাই ব্যান্ডের ঝংকার উঠেছে

আমি ভবানীবাবুর অনেক লেখা পড়েছি এবং প্রতিটি লেখা পড়েই যেন মুগ্ধ হয়েছি, আর দূর থেকে কবিকে কুর্নিশ জানিয়েছি। কোনোদিনও সামনে থেকে দেখার মতো সৌভাগ্যটি আর আমার আর হয়ে ওঠেনি। আজ কী ভাগ্যে বন্ধুর কথা রাখতে এখানে এসেছিলাম! তাই তো প্রিয় লেখককে সামনে থেকে দেখার সুযোগটা পেয়ে গেলাম। তখন ওঁর বয়সটা অনেক কম ছিল, মুখে ছিল প্রাণ-উজ্জ্বল হাসি। খুব ভালো লাগছিল

মঞ্চে কবিকে বরণ করে নেওয়ার পরেই উনি নিজে মাইকটি হাতে তুলে নিলেন এবং ছড়া, কবিতা ও ছন্দ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলেন। ছড়ার এ-কাল এবং সে-কাল নিয়ে ওঁর কথায় উঠে এল মহাকবি বাল্মীকি, বেদব্যাস, কাশীরাম দাস থেকে আজকের আধুনিক কবিদের কথা। উপস্থিত মানুষজনকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো হয়ে সেদিন শুনতে দেখেছিলাম ওঁর কাব্য বিষয়ক আলোচনা

পরিশেষে মঞ্চ সঞ্চালকের একান্ত অনুরোধে উনি ওঁর লেখা কালজয়ী একটি ছড়া পাঠ করে শোনালেন, ‘বাংলাটা ঠিক আসে নাসেই কবিতাখানা পাঠের শেষে আট থেকে আশির স্রোতা, কেউই বোধ হয় আর করতালি দিয়ে কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে বাদ গেল না

তবে তারপর অবশ্য কয়েকবার ওঁকে সামনে থেকে দেখার এবং কথা বলারও সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তবে সেই দিনটির কথা আজও যেন বার বার মনে পড়ে

   

<