বিশেষ - সোহাগে শাসনে আমার সন্তান - নন্দিতা দত্ত । ফেব্রুয়ারি - ২০২৪


সোহাগে শাসনে আমার সন্তান







ন ন্দি তা 
দ ত্ত






....

....

কিশোর বার্তা-র 
এই গল্পটির ছাপা সংখ্যাটি রেজিঃ ডাকে পেতে -



প্যারেন্টিং হলো এমন একটি শৈলী যেখানে পিতা-মাতা সন্তানের জীবন যাপনের প্রতিটি মুহূর্তকে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন বা তার জীবনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।

কিন্তু এই প্যারেন্টিং এর মূল যে জায়গাটি হল একজন শিশুর সাথে তার মা-বাবার আচরণ কি হবে কিভাবে বড় করবেন তা তার পারিবারিক পরিমণ্ডল কে বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। তারপরেও আমরা অনেকেই জানি পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে সমস্ত ভালোবাসা আবেগ দিয়ে আগলে রাখতে হয়। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তার জন্য প্রয়োজন নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুশাসন যেগুলো পিতা-মাতা নিজেরা তাদের আচরণের মাধ্যমে সন্তানদের কাছে নিজে আগে গ্রহণযোগ্য হবেন । এই সময় নরম কাদা মাটির মত থাকে তার মন। তখন সে যেভাবে দেখে তাই তার মনের মধ্যে ক্রিয়া করে। বাবা মা যদি সন্তানকে বলে মিথ্যে কথা বলবে না অথচ প্রতি পদে পদে তারা মিথ্যে কথা বলেন তাহলে সে সন্তান কি শিখবে?

আসলে আমরা ভুলে যাই সন্তান কিন্তু প্রতিনিয়ত তার মা বাবাকে দেখে তারপর বাইরের মানুষজনকে দেখে‌। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মনের মধ্যে বিশেষ জায়গা করে নেন শিক্ষক। শিক্ষকের যেকোনো কথা তাদের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বন্ধুদের কথাও। এই সময়টাতে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, সন্তান স্কুল বা তার পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে মা-বাবাকে যদি প্রশ্ন করে সেই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দেওয়া এবং মিথ্যে না বলা বা এড়িয়ে না যাওয়াই উচিত। তুমি ছোট বুঝবে না এসব না বলে ছোট বাচ্চাটিকে তার মত করে বুঝিয়ে বলা। আসলে এই ব্যাপার গুলো বাবা মায়ের চাইতে বাইরের কেউ বেশি বোঝেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নজরে কোন ছাত্র-ছাত্রীর আচরণের বিশেষ দিক ধরা পড়ে যেটা অভিভাবকরা লক্ষ্য করেন না। সে ক্ষেত্রে তার স্কুল আঁকা র স্কুল গানের স্কুল আবৃত্তি ক্লাস, সাঁতারের ক্লাসে (কো কারিকুলার একটিভিটি) বোঝা যায়। তাই এই বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলে একজন অভিভাবক তার সন্তানের ঘরের বাইরের আচরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারেন। অনেক অভিভাবকের একটা ধারণা থাকে তার সন্তান শান্ত ভদ্র দুষ্টুমি করে না যা করে সব তার বন্ধুরা করে সহপাঠীরা করে এই ভ্রান্ত ধারণার ফলে সন্তানটির মঙ্গলের চাইতে অমঙ্গল বেশি হয়। এই অভিভাবকরা যে বোঝেন না তার পেছনে মূল কারণ কিন্তু সে ছোটবেলা থেকে যেভাবে বড় হয়েছে তাই তার সন্তানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাহলে উপায়!

উপায় বলতে যা বোঝায় অন্যের কথা শুনে নিজের সন্তানের আচরণ দেখে যাচাই করে নেওয়া কারণ এর মূল কথা হলো নিবিড়ভাবে সন্তানকে পর্যবেক্ষণ করা এতে পিতা-মাতাকেও শৃঙ্খলার মধ্যে জীবন যাপন করতে হয় সন্তানের ওপর কঠোর সত্য আরোপ করে সন্তানকে আগলে রাখেন অনেকেই কিন্তু সন্তানের চাহিদার বিশেষ যত্ন তাড়া নেন না এর ফলে সেইসব বাচ্চাদের আচরণে অসংলগ্নতা দেখা দেয় অভিভাবক যখন নিজের অপূর্ণ চাহিদা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চান একটা কথা মনে রাখতে হয় শিশু তার বয়স অনুযায়ী আচরণ করে কিন্তু কিছু বাবা-মা তাদের অহং ত্যাগ করতে চান না তার ফলে প্যারেন্টিং এর মূল জায়গা থেকে তারা সরে যান ১৫ বছর বয়স অব্দি যে অনুষ্ঠান দরকার সেখান থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসে তখন সন্তানকে কিছুটা স্বাধীনতা দিতে হয় এক্ষেত্রে মূলত তার ব্যক্তিগত মতামতের গুরুত্ব দেওয়া তার মতামতটাকে শুনে যদি গ্রহণযোগ্য হয় অপ্রিশিয়েট করা আর যদি গ্রহণ করার মত না হয় সে ক্ষেত্রে তাকে বোঝানো কেন এটা ঠিক হবে না বোঝানোর আগেই যদি তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এর ফল ভালো হয় না অনেক অভিভাবকই দেখা যায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত দেখানো ভালোবাসা এবং যেকোনো বিষয়ে তাকে সমর্থন করে ভবিষ্যতে সমস্যার দিকে এগিয়ে দেন কিশোর বয়স থেকে যদি কোন ছেলে মেয়েকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায় তাহলে কিন্তু সন্তানের কিছুক্ষণ মন খারাপ হয়তো থাকে তারপরে সে সেখান থেকে সরে আসে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে তার ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করে তাকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হয় শিশুরা অনেক সময় অনুভব করেন যে তাদের বাবা-মা তাদের জীবন যাপনে নিয়ন্ত্রণের দড়িতে আটকে রাখেন

এতে শিশুর মধ্যে অপমান, ভালবাসা হারানোমানসিক ব্ল্যাকমেইল, অনুভূতি উপেক্ষা করার মত বিষয়গুলো ক্রমশ ব্যাধির মত বাসা বাঁধতে থাকে অনবরত প্রতিযোগিতায় তাকে ঠেলে দেওয়া বা অন্যের সঙ্গে তুলনা করা শিশু বা কিশোর মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে বর্তমান বিশ্ব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে শিশুদের এই সময়ে কিউ অনেক বেশি তীক্ষ্ণ অভিভাবকদের তুলনায় পরবর্তী প্রজন্ম অনেকটাই এগিয়ে থাকে উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে আমি আপনি মোবাইল বা কম্পিউটারের টেকনোলজি যতটা বুঝি তার থেকে অনেক গুণ বেশি বোঝে আপনার সন্তান কারণ এই সময়ে অনুসন্ধিতসু মন তাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে তাই অযথা মিথ্যা অহংকারে আটকে থেকে শিশুকে কাল গহ্বরের দিকে ঠেলে দেবেন না কথা না শুনলে ভয় ভিতি দেখিয়ে একদিন কি দুদিন তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কিন্তু তারপরেই সে প্রতিবাদ করে বা নিজেকে প্রটেক্ট করতে চেষ্টা করে পেরেন্টিং এর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো বাইরে থেকে কেউ বললেই নিজে থেকে সম্পন্ন হয়ে যাবে এমন নয় প্রত্যেক বাবা-মাকে যত্ন নিয়ে বিষয়টাকে ভাবতে হবে

আমরা যখন ছোট ছিলাম পাড়ার জেঠু কাকু অন্যায় দেখলে অনায়াসে নিজের সন্তান ভেবে তাকে শাসন করতেন এতে সেই সন্তানের অভিভাবক সেটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখতেন কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে অভিভাবকরাও অন্যের সন্তানের আচরণগত বৈকল্য দেখলেও তার অভিভাবককে জানাতে কুণ্ঠাবোধ করেন কারণ প্রত্যেকের মধ্যেই একটা আমিত্বের অহং মুখোশের মতো চেপে বসেছে যেখান থেকে অভিভাবকরা বেরিয়ে আসতে পারেন না এই বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস পত্রের যোগান অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ এবং ধৈর্যহীনতা এর বিপরীতে যারা রয়েছেন তারাই কিন্তু গুড প্যারেন্টিং এর উদাহরণ হয়ে তার পরিবারের অন্যদিকে সমাজের সুশৃংখল যে ধারা তা ধরে রাখছেন যত গেল গেল বলা হয় তা যদি সবটাই এমন হতো তাহলে সমাজ থাকত না কিন্তু তারপরেও কোথাও একটা হাহাকার অনবরত যেন হা করে নিঃশব্দে আমাদের গিলে ফেলছে। 

একটি পরিবার একটি স্কুল একটি রাষ্ট্রের সুনাগরিক গঠনে যে কাজ করে তাই হল গুড প্যারেন্টিং 

ছোটবেলা থেকেই শিশুকে এমন পরিবেশ দেওয়া দরকার যেখানে সে দেখবে আমার বাবা-মা যেটা মুখে বলে সেটাই করে তাহলে সেও সেভাবেই তৈরি হবে ভাবনার আকাশ প্রসারিত হবে তার