লেখাপড়ার শুরুতে শুনতাম
ভালো করে ইংরাজি শিখতে হবে। এই শেখাটা ঠিক কী তা কেউ বলেনি তাই নিজেদের মতন করে ভেবে
নিতাম। তার মধ্যে প্রধান ছিল grammer এর নিয়ম শেখা।প্রথমেই তো a না an হবে এই নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ। নিয়ম, নিয়মের ব্যতিক্রম এই নিয়ে ভাবনার অন্ত ছিল না।
যেকোন ভাষা শেখা বলতে
সাধারণত বুঝি বলতে পারা, পড়তে পারা ও লিখতে পারা। পরে বুঝেছি, অন্যের বলাটা বুঝতে পারাও ভাষা শিক্ষার অঙ্গ। আমাদের ভাষা শিক্ষার ক্রম ছিল বিপরিতমুখি। লিখতে পারা দিয়ে শুরু।
ইংরাজি ভাষা হল ইংরাজদের
মাতৃভাষা। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে ইংল্যান্ড প্রধান। মূলতঃ তারাই ইংরাজ। তবে তাদের মাতৃভাষা এসেছে
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে। বিভিন্ন ভাষার সমজাতীয় শব্দের মধ্যে মিল -অমিল বিচার করে সারা পৃথিবীর প্রায়
চার হাজার ভাষাকে মোটামুটি বারোটি প্রধান ভাষা বংশে ভাগ করা হয়, তার মধ্যে প্রধান এই ইন্দো
ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী। তিনটি অতি সমৃদ্ধ প্রাচীন ভাষা সংস্কৃত,
গ্রীক ও লাতিন এই গোষ্ঠীর
অন্তর্ভুক্ত। আবার আধুনিক কালের জার্মান, ফরাসী, বাংলা প্রভৃতি ভাষাও এর
মধ্যে পড়ে। আমাদের দেশে বহু প্রধান ভাষা থাকায় কোন একটি ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা
করার অসুবিধা দেখা যায়। তাই আঞ্চলিক ভাষার পরেই ইংরাজি হল সরকারি ভাষা। আর যেহেতু পৃথিবীর অধিকাংশ
দেশে ইংরাজি ভাষার চর্চা হয়, তাই আমাদের ইংরাজি শেখার উৎসাহ থাকা স্বাভাবিক।
আমাদের শিক্ষা শুরু হয়
অক্ষর পরিচয় বা লেটার পরিচয় দিয়ে। তাই, এ, বি, সি, ডি এই সব বলে বলে লিখতাম। তবে সব দুটো করে। যতই বলুক না কেন ২৬ টি লেটার, আমরা জানতাম, আমাদের লিখতে হবে ৫২ টা। বাংলায় এই জাতীয় লুকোছাপা
না থাকলেও অক্ষরের পিঠে অক্ষর উঠে নিজেদের দল বাড়ানো আছে অনেকটাই। প্রথমে লিখতাম বড় হাতের
লেটার। পরে জেনেছি লিপি তৈরির সময়
বড় হাতের লেখা বা capital leter আগে সৃষ্টি হয়েছিল। যখন দেখল যে অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে লিখতে, একটানা লেখা যাচ্ছে না তখন আস্তে আস্তে ছোট হাতের লেখা তৈরি হল। এও একধরনের বিবর্তন, একদিনে নিশ্চয় হয়নি।
আমরা নয় আগে লেখা শিখি, কিন্তু প্রথম লেখার আগেই
সৃষ্টি হয়ে যায় ভাষা। সেই ভাষা চলতে থাকে মুখে মুখে। মনের ভাব মুক্ত হয় শব্দে। সেই শব্দ চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে leter সৃষ্টি।
চাষী তার উৎপন্ন ফসল রাখতে
নিজেই যে ঝোড়া তৈরি করে এমন নয়। অন্যের তৈরি ঝোড়াতে যদি সুবিধা হয় সংরক্ষণ করতে আপত্তি থাকতে পারে না। সেই রকম যাদের ভাষা তারাই
যে সব সময় লিপি তৈরি করেছে এমন নয়। ইংরাজি ভাষা যে লিপিতে লেখা হয় সেটা আসলে রোমানদের তৈরি, রোমান লিপি। এরা
খ্রীস্টপূর্ব ৭০০ থেকে ৬০০ সময় কালের মধ্যে গ্রীকদের কাছ থেকে গ্রীক লিপি লেখার কৌশল শিক্ষা করে, পরে তাদের হাতে পরিবর্তিত
হয়ে আজকের রোমান লিপির সৃষ্টি। তখন শুধু বড় হাতের অক্ষর ছিল। আরও আট ন'শো বছর পরে ছোট হাতের
অক্ষর সৃষ্টি হয়।
ইউরোপের অনেক ভাষা মূলতঃ
এই রোমান অক্ষর কে ভিত্তি করে লেখা হয়। আমাদের বাংলা ভাষাও এই লিপিতে লেখার প্রস্তাব উঠেছিল।
ইংরাজি হরফে কোন ভাষা লেখা
হলে পড়া যেতে পারে কিন্তু বোঝা যাবে এমন কোন কথা নেই। বুঝতে গেলে সেই ভাষার
শব্দের অর্থ জানতে হবে ও সেই ভাষার ব্যকরণ অর্থাৎ নিয়ম কানুন জানতে হবে। তাই বলা যায়, ভাষা শিক্ষার সঙ্গে অক্ষর
পরিচয় আবশ্যিক নয়, সাহায্যকারী মাত্র।