জানা অজানা । মাঘ ১৪৩১





  শূন্যের আবিস্কার ও গুরুত্ব 











সুদীপ্ত শেখর পাল

কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ




 

শূন্য শব্দটির সঙ্গে আমার পরিচয় বিদ্যালয়ের সবচেয়ে নীচু শ্রেণিতে। এক-দুই-তিন-চার পড়তে পড়তে এক সময় দশে পৌঁছে গেলাম। সেখানেই দেখতে পেলাম শূন্যকে। এর আগে যখন লেখাপড়া শুরু করিনি, তখনো ‘দশ’ গুনেছি, কিন্তু সেগুলো না লেখায় শূন্যের সঙ্গে দেখা হয়নি। 

          দেখা হওয়া মাত্র পড়লাম একের পিঠে শূন্য দশ। যদি এই শূন্য না থাকত, তবে কি দশ লেখা যেত না? তা কেন! এক থেকে নয় যেমন ন’ রকম চিহ্ন দিয়ে লেখা হয়, সে রকম দশও লেখা হত অন্য কোন চিহ্ন দিয়ে।  অনেক প্রাচীন সভ্যতায় করতও তাই। যেমন, রোমানরা ইংরাজী এক্স (X) দিয়ে দশ বোঝাত। এই দশের চিহ্নের সঙ্গে একের চিহ্নের (I) কোন মিল নেই। মায়া সভ্যতায় দুটি সমান্তরাল লাইন (=) দিয়ে দশ বোঝাত। এর সঙ্গেও তাদের এক নির্দেশক চিহ্নের (.)  কোন মিল ছিল না। এই সব পদ্ধতিতে যে সব অসুবিধা দেখা যেত, সেসব মেনে নিয়েই প্রয়োজনীয় কাজ চালাতে হতো। আমরা দশের কথা এত করে বলছি কেন, সে কথা বলি। দশকে ভিত্তি করে বেশ কিছু সভ্যতায় গননা পদ্ধতি চালু হয়েছিল। এর কারণ হিসাবে বলা যায় মানুষের হাতের দশ আঙুল দিয়ে প্রাথমিক গনণার কাজ চালানো হত। কোন রাখাল তার পশুদের হিসাব রাখার জন্য এক একটা পশুর জন্য এক একটা আঙুল ধার্য করল। দশটা আঙুল শেষ হয়ে যাওয়ার পর হয়তো একটা নুড়ি তার কাপড়ের এক প্রান্তে বাঁধল। তারপর আবার এক একটা আঙুল এক একটা পশুর জন্য ধার্য করল। যদি তার চোদ্দটা পশু থাকে তাহলে, তার কাপড়ে থাকবে একটা নুড়ি, আর হাতের চারটি চিহ্নিত আঙুল। আমরা একে বলি চোদ্দ, আসলে সে এক দশ চার। আবার যখন তার কাছে যদি দশটি নুড়ি জমে যায় তখন সেই দশটির বদলে একটি বড় নুড়ি রাখতে পারে। সে নুড়ি হলো একশোর সমান।

          লিপি আবিস্কার হওয়ার পর বিভিন্ন চিহ্ন দ্বারা এক, দশ, একশো ইত্যাদিকে লিখে রাখা শুরু হল। যদিও অনেক সভ্যতায় দশকে ভিত্তি না করেও  গনণা পদ্ধতি গড়ে উঠেছিল। কালক্রমে ভারতের কিছু চিন্তাশীল মানুষ সংখ্যা লিখন পদ্ধতির নূতন দিশা দেখালেন। এক থেকে নয় পর্যন্ত যে সব সংখ্যা ছিল শুধুমাত্র তাদেরকে কাজে লাগিয়ে যাবতীয় সংখ্যা লেখার ব্যবস্থা করলেন। তারা ডানদিক থেকে ক্রমশ বামদিকে কতকগুলি ঘর তৈরি করলেন। একেবারে ডানদিকের ঘরের নাম একক। তারপর যথাক্রমে দশক, শতক, হাজার ইত্যাদি। এক থেকে নয়ের মধ্যে কোন সংখ্যা যেখানে বসবে তার মান সেই ঘর অনুযায়ী হবে। যেমন চার যখন দশকের ঘরে থাকে তার মান হয় চল্লিশ, শতকের ঘরে থাকলে চারশো। 

          এই পদ্ধতির নাম হল– দশমিক স্থানিক অঙ্ক পাতন পদ্ধতি। এবার একশো লিখতে গেলে ‘এক’ এর চিহ্নকে শতকের ঘরে লিখলেই চলবে। তার জন্য আলাদা চিহ্নের দরকার নেই। কিন্তু সেই ‘এক’ (১) যে শতকের ঘরে আছে সেটা বোঝাতে গেলে ‘এক’ এর ডানদিকে দশক ও এককের ঘরও তৈরি করতে হবে। সেখানে যেহেতু কিছু বসানোর থাকে না তাই প্রথম প্রথম একটা বিন্দু দিয়ে রাখা হত। তার নাম হল ‘শূন্য বিন্দু’, কালক্রমে সংক্ষেপ হয়ে থেকে ‘শূন্য’  নামে পরিচিত হয়েছে। আর বিন্দু আকারে পরিবর্তিত হয়ে ‘বৃত্ত’ হয়ে গেছে। এই বৃত্তই আজকের শূন্যের চিহ্ন

          এই আবিস্কার ভারতবর্ষ থেকে যখন অন্য সভ্যতায় প্রবেশ করল তখন নিজেদের সংখ্যার চিহ্নের সঙ্গে শূন্য কে জড়িয়ে নিয়ে সংখ্যা লিখন পদ্ধতি চালু করল। তাই দেখা যায় এক থেকে নয়ের চিহ্ন আলাদা হলেও অন্য ভাষায় শূন্যের চিহ্ন একই ।  

 


আরও পড়ুন  -








ধীরে ধীরে জ্ঞানের গভীরে


 




 

ছবি আঁকার পথে মানুষের বিচরণ

বেচারা তিমি

নানা রকম দেখা

মাধ্যাকর্ষণের পথ ধরে

ইংরাজি ভাষা ও তার অক্ষর পরিচয়