হঠাৎ জলের ভেতর থেকে মাথা
তুলে এক কদাকার ব্যাঙ জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে রাজকন্যে, এমন করে
কাঁদছ কেন?
রাজকন্যা আঙুল তুলে জলের
দিকে দেখিয়ে বলল, আমার বল ওখানে পড়ে গেছে।
--- ও, এই কথা? ঠিক আছে, অমন করে
আর কেঁদো না। জলের তলা থেকে আমি তোমার বলটা এনে দিচ্ছি। কিন্তু তুমি তার বদলে
আমাকে কী দেবে বলো?
রাজকন্যা তো বল পেলে বর্তে
যায়। তাই সে কোনও কিছু না ভেবেই বলল, তুমি যা চাইবে তাই-ই দেব।
সেই কথা শুনে ব্যাঙ তখনই
জলের তলায় ডুব দিল আর এক নিমেষের মধ্যেই সেই বল নিয়ে রাজকন্যার সামনে হাজির হল।
বলল, এই নাও
তোমার বল। কিন্তু মনে আছে তো, তুমি বলেছ, আমি যা
চাইব, তুমি
আমাকে তাই-ই দেবে। তা হলে এ বার থেকে আমি তোমার বন্ধু হব। তোমার সঙ্গে খেলব। তোমার
থালা থেকে খাব। তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমার সঙ্গে ঘুমোব। ঠিক আছে তো?
--- হ্যাঁ হ্যাঁ, ষঠিক
আছে। বলেই, রাজকন্যা বল নিয়ে দৌড় লাগাল। আসলে ওই বিচ্ছিরি
ব্যাঙটার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার তার কোনও ইচ্ছেই নেই। শুধু বলটা পাওয়ার জন্যই সে
ব্যাঙকে ওই কথা বলেছিল।
পর দিন সকালে ঘুম থেকে
উঠেই রাজকন্যা দেখল, কুচ্ছিৎ ব্যাঙটা তার শোবার
ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অমনি তার মেজাজ চড়ে গেল। রেগে গিয়ে বলল, তুই
এখানে কী করছিস? দূর হ এখান থেকে, দূর হ।
ব্যাঙ বলল, তুমি যে
কাল কথা দিয়েছিলে! আমি তো সেই জন্যই তোমার সঙ্গে থাকতে এসেছি।
রাজকন্যা একদম চায় না
ব্যাঙ তার সঙ্গে থাকুক। কিন্তু রাজামশাই ভারী ভাল লোক। সব কিছু শুনে তিনি তাঁর
মেয়েকে বললেন, তুমি যখন কথা দিয়েছ, তোমাকে তখন কথা রাখতেই
হবে। ও এখন থেকে এই রাজপ্রাসাদেই তোমার সঙ্গে থাকবে। সে তোমার ভাল লাগুক আর না-ই
লাগুক।
ব্যাঙ তাই রাজপ্রাসাদেই
থেকে গেল।
খাবার সময় ধাইমা ডাকতেই এক
ছুট্টে রাজকন্যা চলে গেল খাবার টেবিলে। সেটা দেখে তার পিছনে পিছনে থপথপিয়ে সেখানে
গিয়ে হাজির হল ব্যাঙও। বলল, রাজকন্যে, তোমার
সঙ্গে আমি তোমার থালায় খাব। তুমি কথা দিয়েছিলে, মনে আছে তো?
ব্যাঙের কথা শুনে রাজকন্যা
ভীষণ রেগে গেল। কিন্তু তার আচরণ দেখে রাজামশাই যদি বিরক্ত হন, তাই অতি
কষ্টে নিজেকে সামলে রাখল সে। ব্যাঙের কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই সে দিকে। রাজকন্যার থালা
থেকে সে খাবার তুলে খেতেই রাজকন্যার গা ঘিনঘিন করে উঠল। ঘেন্নায় কিছুই মুখে তুলতে
পারল না। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেল সে।
ব্যাঙ বলল, ও
রাজকন্যে, আমায়
ফেলে যাচ্ছ কোথায়? দাঁড়াও দাঁড়াও, আমি
তোমার সঙ্গে যাব। তোমার সঙ্গে খেলব। তোমার ঘরে গিয়ে তোমার সঙ্গে ঘুমোব। মনে নেই, তুমি
কথা দিয়েছিলে?
ব্যাঙের কথা শুনে রাজকন্যা
আর নিজেকে সামলাতে পারল না। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে ব্যাঙটাকে খপ্পাত করে ধরে সটান
ছুড়ে মারল সামনের দেওয়ালে। আর দেওয়ালে আছাড় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাঙটা হয়ে গেল
এক অপরূপ রাজপুত্র।
সেটা দেখে রাজকন্যা তো
একেবারে হতবাক।
তখন রাজপুত্র বলল, অনেক
দিন আগে এক দুষ্টু ডাইনি আমাকে জাদু করে এই সরোবরে ব্যাঙ করে রেখেছিল। আমি যখন
কেঁদেকেটে একসা, তখন বুঝি তার মায়া হয়েছিল। তাই সে বলেছিল, কোনও
রাজকন্যা যদি তোমাকে দেওয়ালে ছুড়ে মারে, একমাত্র তা হলেই এই জাদুর
মায়া থেকে তুমি মুক্ত হবে। তুমি আমাকে দেওয়ালে ছুড়ে ফেলে ওই ডাইনির জাদু থেকে
মুক্ত করেছ। তোমার জন্যই ব্যাঙ থেকে আমি আবার মানুষ হতে পারলাম। আমার আগের রূপ
ফিরে পেলাম। তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তুমি আমাকে বিয়ে করবে রাজকন্যে?
রাজকন্যা লজ্জায় চোখ
নামিয়ে নিল। তার পর আর কী! দু’জনের বিয়ে হয়ে গেল মহাধুমধাম করে। সুখে-শান্তিতে
তারা বসবাস করতে লাগল।