বিকেলের ফ্লাইটে দিল্লি ফিরে যাবার কথা ছিল রিয়ার। সক্কাল সক্কাল পিড়িং আওয়াজ করে মোবাইলে মেসেজ এল— ‘Dear Customer, your flight to Delhi has been cancelled. Sorry for the inconveniences…’
“যাচ্চলে, ফ্লাইট ক্যান্সেল অর্কদা!” চেঁচিয়ে ওঠে রিয়া।
অর্ক মন দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিল। কাগজ থেকে মুখ সরিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বলল, “কাগজে লিখেছে, দিল্লি এয়ারপোর্টে
বম্ব থ্রেট আছে। অনেক ফ্লাইট বাতিল
হয়েছে। কখন পরিষেবা শুরু করা যাবে, বিমান পরিচালক সংস্থা জানায়নি। তার মানে তোর লেখাপড়া উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। পইপই করে বলেছিলাম, থেকে যা, কলকাতায় ভরতি হ, রান্নাবান্নায় মন দে—তা না…”
“লেখাপড়া উচ্ছন্নে যাবে কেন? ফ্লাইট কি চিরকালের জন্য বাতিল
হয়ে গেল নাকি? কলকাতায় ভরতি হলে বাবা-মা একা
হয়ে যেত না? আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে, নাকি?”
“হ্যাঁ, আছে তো! বারো ক্লাস পাস করতে না করতেই তোর মধ্যে কেমন
যেন একটা মাসি-পিসি ধরনের ভাব এসে গেছে। তা ভালো। তবে আমি জানি, দিল্লি
ফিরে গেলেই তুই রান্নার যাবতীয় পাঠ ভুলে মেরে দিবি। হয় পড়বি, না-হয় নাক ডেকে ঘুমোবি।”
“হ্যাং আউট না কী যেন বলে, সেটাও হবে।”
হাসতে হাসতে বলেন অর্কর বাবা। তিনি আবার কোথাকার
কোন জঙ্গলে নাকি ছবি তুলতে যাচ্ছেন। গাবদা ক্যামেরা হাতে
নিয়ে ড্রয়িং-রুমে ঢুকে মন্তব্য করে আবার গম্ভীর
হয়ে গেলেন।
“না না পিসো, হ্যাং আউট করতে আমার ভালো লাগে না। শুধু শুধু গাদা খানেক
সময় আর বাবা-মায়ের পয়সা নষ্ট।” রিয়া গম্ভীর হয়ে যায়।
ড্রয়িং-রুমে এক ঝাঁক উদ্বেগ
নিয়ে তখুনি সবেগে ঢোকে জ্যোৎস্না।—“গ্যাস ফুরিয়ে গেছে দাদা! এখন খবর দিলেও কাল-পরশুর আগে দেবে না। রান্না করব কী করে?”
অর্ক জ্যোৎস্নার দিকে ফিরে বলে, “টেনশন ইস ইকুয়াল টু হার্ট অ্যাটাক। বাড়িতে তো দুটো সিলিন্ডার!”
“ওটাও…”
“সে কি রে, তুই আগে দেখে
নিবি তো! দুটোই খালি? তোর বউদি কি হাসপাতালে চলে গিয়েছে?” ক্যামেরাটা টেবিলের উপর রেখে
জ্যোৎস্নাকে প্রশ্ন করেন অর্কর বাবা।
“সে তো আমি আসার আগেই… রান্না হবে, নাকি অনলাইনে অর্ডার করে
দেবে দাদা?” উত্তরে বলে জ্যোৎস্না।
জ্যোৎস্নার কাছে অর্ক ও তার বাবা—দুজনেই
তার দাদা। ব্যাপারটা বুঝে রিয়া
মনে মনে খুব হাসে। তাহলে তো পিসো আর
অর্কদা দুই ভাই হবার কথা।
‘আগুন জ্বালো, আগুন
জ্বালো, ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে দিয়ে রান্নাঘরে আগুন জ্বালো…’ সুর করে গান গেয়ে ওঠে অর্ক।
অর্কর বাবা অট্টহাসিতে
ফেটে পড়েন।—“ব্রাভো
মাই সন! যা একটা প্যারোডি বানিয়েছিস, এবার রবিঠাকুর
স্বর্গ থেকে লম্বা হাত বাড়িয়ে তোর কানটা না মুলে দেন। যাক গে, এবার গরম গরম কচুরি আর ছোলার ডাল অর্ডার করে দে দেখি। রিয়ার ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়ে যাওয়াটা সেলিব্রেট করতে হয়
তো, নাকি?”
“আজ্ঞে না। গতকাল মাকে জন্মদিনে
যে ইন্ডাকশন কুকার দিয়েছি, সেটাতে খিচুড়ি বসিয়ে দাও দেখি জ্যোৎস্নাদি। বাবা এখন বাইরের খাবার একদম খাবে না। জঙ্গলে যাচ্ছে ছবি শিকার করতে। ওখানে শরীর খারাপ হলে দেখবে কে? চলো, আমি ইন্ডাকশন চালিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে
দিচ্ছি। খুব সোজা।”
জ্যোৎস্না আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে, “আমি তো ইন্ডাকশন
কুকারে রান্না করি দাদা! ওই যে তিনটে গলি পরে প্রফেসর সাহেব আছেন না, উনি একাই থাকেন, সামান্য রান্না করে দিতে
হয়। গ্যাস জ্বলে না সেখানে। ইন্ডাকশনে কী তাড়াতাড়ি সব রান্না হয়ে যায়!”
“বাহ্, অতি সুখের কথা। তাহলে শুরু করে দাও। বাবার মুখটা শুকিয়ে গেছে। ক’টা বেগুনিও ভেজে দিও, তাহলে আবার মুখে
হাসি ফিরে আসবে।” জানায় অর্ক।
আপাতত দিল্লি যাওয়া হচ্ছে না ভেবে রিয়া একটু চিন্তিত হয়ে ডাইনিং
টেবিলে ফিরে আসে। অর্কর হাতেও কোনও
কাজ নেই। বিকেলে রিয়াকে এয়ারপোর্টে
ছেড়ে আসবার কথা ছিল। খিচুড়ির গন্ধ পেয়ে
বাতাসে নাক টেনে রিয়াকে সে বলে, “আহ্, দারুণ গন্ধ বেরিয়েছে
রে! এইমাত্র জ্যোৎস্নাদিকে ডিম ভেজে দিতে বলেছি সঙ্গে। আজ দিবানিদ্রা দেব ঘণ্টা তিনেক। তারপর তোর ফিরে যাবার টিকিট কেটে দেব আবার।”
রিয়া এইসব প্রসঙ্গে না গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা অর্কদা, মানুষ ঠিক কবে থেকে রান্নাবান্না শুরু করে বলো
দেখি! তার আগে তো গাছের ফলমূল চিবিয়ে বেশ কেটে যেত, তাই না? এই রান্নাই হয়েছে যত নষ্টের
গোড়া।”
“হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। সত্যিই তো, রান্নায় মানুষ যে-পরিমাণ সময় খরচ করে,
সেই সময়ে অন্য কত কী করে ফেলা যায়! কিন্তু আগুনের ব্যবহার যদি মানুষ না শিখত, তবে এতদিনে
তোর গায়ে বড়ো বড়ো লোম থাকত, গজালের
মতো দাঁত থাকত। এই সুন্দর চিবুকটার জায়গায় থাকত উঁচু হাড়ের চোয়াল। মাঠে-ঘাটে, গুহায় বসে মাথা থেকে উকুন বাছতিস।”
রিয়া অর্কর কথায় চেঁচিয়ে ওঠে, “ছ্যাহ্,
মা গো! ভাবতেই গা ঘিনঘিন করছে!”
অর্ক রিয়ার চেঁচানিতে কর্ণপাত না করে জানায়, “ডারউইন সাহেব
কী বলে গিয়েছেন জানিস? তাঁর মতে, মানবসভ্যতার দ্রুত
অগ্রগতির অন্যতম কারণ হল আগুনকে নিয়ন্ত্রণকে করতে পারার ক্ষমতা অর্জন, যা অন্যান্য
প্রাণীদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যদিও আগুনকে করায়ত্ত করতে আদিম মানুষদের লক্ষ লক্ষ বছর কেটে গেছে,
তবু এই সময়ে মানবজাতির তুলনায় অন্যান্য প্রাণীদের বিবর্তনের হার কম। তাহলে এই যে তুই শিম্পাঞ্জি থেকে আজকের মানুষ
হয়ে উঠলি, বারো ক্লাস পাস করতে না করতে বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন দেখছিস, আগুন নিয়ন্ত্রণ
করে রান্নাবান্না না শিখলে এসব কিছুই সম্ভব হত না।”
রিয়া ঘাড় নাড়ে।—“ঠিক। একেবারে যুক্তিপূর্ণ কথা। আমি পড়েছি, আনুমানিক দশ লক্ষ
বছর আগে মানুষ রাঁধতে শুরু করে। প্রত্নতাত্ত্বিক
গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে।”
“এই ব্যাপারে নানা
মত আছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের। দশ লক্ষ বছর আগে
হোমো স্যাপিয়েন্সরা আগুন জ্বালাতে জানত, কিন্তু
রান্না করত কি না সঠিক বলা যায় না। রান্নাবান্নার প্রমাণ খুঁজতে প্রত্ন-বিজ্ঞানীদের যেতে হয়েছে
গুহায়। সেখানে অপেক্ষাকৃত কম প্রকৃতির হানা এসেছে,
কাজেই লক্ষাধিক বছর আগের কিছু প্রমাণ সেখানেই পাওয়া
যায়। তবে প্রথম
থেকেই তো আর মানুষ গুহাবাসী হয়ে যায়নি। মাটিতে বাস করতে
শুরু করার পর প্রথম প্রথম জঙ্গলের বুনো জন্তুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে তারা রাতে আগুন জ্বালাত। জঙ্গলের মধ্যে যদি তারা কাঠকুটো জ্বালিয়ে মাংস পুড়িয়ে
যদি খেয়েও থাকে, শিকার করা প্রাণীদের হাড়গোড়ের অস্তিত্ব লক্ষ লক্ষ বছর পর আর খুঁজে
পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এই বিরাট সময়
জুড়ে পৃথিবীর বুকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে গুহার ভিতরে
অনেক জায়গাতে পোড়া কাঠ, মরা প্রাণীদের হাড়ের ফসিল পেয়ে গবেষকেরা কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
“মিশরের লোহিত সাগরের
তীরে এক পাহাড়ের গুহায় বিরাট এক আগুন যজ্ঞের ফসিল পাওয়া গিয়েছে, যার আনুমানিক বয়স লক্ষাধিক
বছর। পাওয়া গিয়েছে হাতির পোড়া হাড়ের ফসিল। আনুমানিক ৪০০০০ বছরের আগে মানুষ যে রান্না করা নিয়মিতভাবে
শুরু করে, সেটা আবার জানা যায় গুহাচিত্র দেখে। যেসব মানুষ গুহাচিত্র আঁকত, তাদের মাথা অবশ্যই উন্নত ছিল। মস্তিষ্কের উন্নতি না হলে কি আর শিল্পী হওয়া যায়?”
রিয়া অর্ককে থামিয়ে দেয়।—“আচ্ছা, তাহলে রান্না করার সঙ্গে মাথার উন্নতি হয়েছিল মানুষের, এটাই বলতে চাইছ তুমি?”
অর্ক ঘাড় নাড়ায়।—“ব্যাপারটা একবারে
তাই। আমি বলছি না, বিজ্ঞানীরা বলছেন। যখন মানুষ রান্না করা শুরু করল তখন মাথাটা বড়ো হতে লাগল, শরীরটা হতে লাগল ছোটো। রান্না করার জন্য খাবার হজম হতে সুবিধে হল,
পুষ্টিকর ভিটামিন-মিনারেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক
রক্তে মিশতে লাগল চট করে। ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে
একটা বিপ্লব এল। ক্রমশ মানুষ আয়ত্ত করতে লাগল শিল্প
এবং সংস্কৃতি। কিন্তু বহুবছর ধরে
ঘটে চলে এই বিপ্লব, যা একটা মানবজীবনে টের পাওয়া সম্ভব নয়।”
“কিন্তু অনেকে বলে
রান্না করলে খাবারের খাদ্যগুণ নাকি নষ্ট হয়ে যায়? যেমন বেশি তাপে রান্না করা মাংসের
প্রোটিন শক্ত হয়ে যায়।”
“এইবার তাহলে আর একটা
জিনিস বলি। আমাদের যে হজম যন্ত্র
আছে শরীরে, সেটা মুখ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রান্ত্র পর্যন্ত—সে-কথা আমরা আগেই শুনেছি। যদি আমরা কাঁচা খাবার চিবিয়ে খাই, তার বেশিরভাগটাই এই হজম যন্ত্র সহজে ভেঙে
ফেলতে পারে না। সে প্রোটিনই হোক
বা কার্বোহাইড্রেট। হজম না হওয়া বেশিরভাগ
খাবার তখন বর্জিত হয়, বা পেটের কোটি কোটি ব্যাক্টিরিয়ার খাবার হয়ে যায়, আমাদের শরীরের
জন্য কাজে আসে না। সেইখানে রান্না করা
খাবার অনেক সহজে হজম হয়ে শরীরে পুষ্টি জোগায়।”
“অন্য প্রাণীরা যে
রান্না না করেই খায়, সেই বেলা?”
“বিবর্তনের কারণেই
রান্না করা খাবার খেয়ে মানুষের শরীর এমন করে গড়ে উঠেছে। আগে দাঁত ছিল বড়ো বড়ো, এখন দাঁত ছোটো ছোটো। পাকস্থলী বড়ো থেকে ছোটো হয়ে গিয়েছে। তোকে যদি দিনের পর দিন শুধু কাঁচা চাল-ডাল-মাছ-মাংস খেয়ে
বেঁচে থাকতে বলা হয়, কী হবে ভেবে দ্যাখ! খিদের চোটে কাঁচা খাবার খেয়ে নিবি সব, কিন্তু
পুষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে কাঠি হবি। আবার গোরুকে ঘাস না দিয়ে রোজ ভাত-ডাল রেঁধে খাওয়া, ঘাস সরিয়ে রেখে দে, গোরুটা খেয়ে তো নেবে, কিন্তু শরীরে পুষ্টি হবে না। প্রকৃতি ঘাস খেতে খেতে ওকে গোরুর জীবনে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। বিখ্যাত বিবর্তনবাদী এক বিজ্ঞানীর মতে, আমাদের শরীরে গঠন গড়ে উঠেছে আমরা
যা খাই তার উপর নির্ভর করে নয়, কীভাবে খাবার হজম করতে পারি তার উপর ভিত্তি করে।”
“তাহলে বোঝা যাচ্ছে
নেহাত প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ রান্না করা শুরু করে এবং ইভোলিউশন হচ্ছে আসল কারণ।”
“ঠিক। বিজ্ঞানীদের মতে, রান্না করার কারণে খাবারের মধ্যে দিয়ে পুঞ্জীভূত শক্তি শরীরে প্রবেশ করে। তাতে যেমন হজম ভালো হয়, কম খাবারে বেশি শক্তি পাওয়া যায়।”
“মানে এনার্জি-রিচ
ডায়েট খেয়ে থাকি আমরা, তাই তো?”
“হ্যাঁ, তা তো বটেই। তবে এই ধরনের ডায়েট বেশি করে খেলে
আবার শরীরে একগাদা অসুখ বাসা বাঁধে। যেমন রক্তে চিনি
মানে সুগার বেড়ে যায়, কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে কারো-কারো
হার্টের অসুখ করতে পারে। তুই বা আমি কেউই
কি সুষম আহার খেয়ে বেঁচে থাকি?”
“সুষম মানে ব্যালেন্সড
ডায়েট মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, তা খাই না ঠিকই, তবে একটু জেনে-বুঝে
খাবার খেলে বিপদের সম্ভাবনা কম হতে পারে।”
“অবশ্যই তাই। মস্তিষ্ক
ঠিক রাখতে গেলেও সুষম আহার করতে হবে। সেটার জন্যই রান্নাঘর একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।”
“রান্নার জন্য আবার
মানুষের সমাজের চিত্রও বদল হয়েছে বলে মনে করেন
অনেকে।” ড্রয়িং-রুমে
ঢুকে বলেন অর্কর
বাবা।
“সেটা কেমন ধরনের বলো দেখি পিসো।” রিয়া আগ্রহী হয়ে ওঠে।
“এই যে ছেলে আর মেয়েদের
কাজের পার্থক্য করে দেওয়া হয়েছে সেই প্রাচীন যুগ থেকে, সমাজবিজ্ঞানীদের অনেকেই সেই
ব্যপারে সহমত। আগে তো মানুষ বনে-জঙ্গলে গিয়ে ফলমূল কুড়িয়ে আনত, শিকার করে কাঁচা মাংস খেত। ক্রমশ আগুন জ্বলিয়ে রান্নার পদ্ধতি আবিষ্কারেও মেয়েদের হাত আছে বলে মনে
করেন তাঁরা। জঙ্গলে শিকার করতে
যেত পুরুষেরা আর মেয়েরা বাড়িতে সন্তানাদি পালন করত। তাদের হাতে যেমন চাষবাস আবিষ্কার হল, তেমনি করেই হয়তো ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করা আবিষ্কার হল একদিন। তাতে হলটা কী, কাঁচা খাবার চিবিয়ে খেতে যত সময় অপচয় করত
মানুষ, ততটা আর হল না। কাজেই বাড়তি সময়
ব্যবহার করে পুরুষেরা যুদ্ধবিগ্রহ, শিকার ইত্যাদি নিয়ে বেশি সময় কাটাতে লাগল। পুরুষ আর নারীদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি হয়ে গেল, যাকে এখন
আমরা ‘ডিভিশন অফ লেবার’ বলে থাকি। যাই হোক, মানুষের
বিবর্তনে রান্নার যে একটা বিশেষ ভূমিকা আছে, তাতে আমার কোনও সন্দেহই নেই।”
“আমারও না বাবা। আর আজ রান্নাঘের একটুও আগুন না জ্বালিয়ে, স্রেফ ইন্ডাকশন
কুকারে কীভাবে জ্যোৎস্নাদি খিচুড়ি রান্না করে আমাদের বাড়িতে এক ইতিহাস রচনা করেছে,
সেটা পরখ করার জন্য আমার জিভ এখন লকলক করছে।”
অর্কর কথা শেষ হতে না হতেই সবাই হেসে ওঠে। আর জ্যোৎস্না এসে খিচুড়ি
আর ডিম ভাজা একেবারে ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে দেয়।