গল্প - ৫ | শ্রাবণ ১৪৩১






  সুমনা











বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী 

আগরতলা, ত্রিপুরা









এই গল্পের      >
মুদ্রিত সংখ্যাটি
রেজিঃ ডাকে পেতে -

 

চার বছর বয়স থেকেই শুরু হয়ে গেছে সুমনার স্কুল। আনন্দ নিকেতনে পড়ে সুমনা। কেজি ওয়ান, সেকশান বি, রুল নাম্বার পচিশ। সকালে স্কুল। ছয়টা থেকে নয়টা। বাবা-ই তাকে সাইকেলে বসিয়ে নিয়ে যায়, নিয়ে আসে। যেতে যেতে সুমনা প্রতিদিন ছাদের উপর বসানো জলের ট্যাঙ্ক গুনে। কোনদিন দশটা কোনদিন বারোটা। পথ বদল করলে কখনও কম কখনও বেশি।

      এভাবে চলে কিছুদিন। তারপর কিছুদিন চলে কয়টা বাড়ি কয়টা গেইট। কখনও আবার লাল ফুল নীল ফুল। কখনও পাখি ফিঙে চড়ুই বুলবুলি।

তাদের স্কুলে রাগ আন্টি আছে, মিষ্টি আন্টি আছে, বন্ধু আন্টি আছে। রাগ আন্টি ক্লাশে এলে তার ভীষণ ভয় হয়। যদি পড়া ভুলে যায়। রাগ আন্টি মানে হেড দিদিমণি। ভীষণ কড়া, গোল গোল চোখে তাকায় বলে সুমনার তাকে ভীষণ ভয়। দেখলেই মনে হয় তিনি ভীষণ রেগে আছেন। বাড়িতে, পাড়ায় দাদা বন্ধুরা দুষ্টুমি করলে সুমনা সবাইকে রাগ আন্টিকে সব বলে দেবে বলে ভয় দেখায়। একদিন রাগ আন্টির ক্লাশ। পড়ার শেষে পরিচয় পর্বে...

- তোমার বাড়ি কোথায় সুমনা?

- রামনগর ম্যাম।

- বাড়িতে তোমাকে কে পড়ান?

- ঠাকুর্মা, বাবা, মা, রাজ দাদা ও শুভ্র দাদা মাঝে মাঝে এসে অঙ্ক দেখান।

- তোমরা কয় ভাই বোন?

- তের জন ম্যাম।

- তের মানে থার্টিন?

হ্যা

ম্যাম, রাজ দাদা, মম দাদা, শুভ্র দাদা, দীপ

- তাহলে তো তোমার খুব মজা।

- হ্যাঁ ম্যাম, আমরা একসাথে খেলি, জন্মদিনে ভাই ফোঁটায় খুব মজা।

- রাগ দিদিমণি এই প্রথম একটু হেসে সুমনাকে খুব আদর করলেন। আশীর্বাদ

করলেন।

এভাবেই সুমনা একদিন বড় হয়। ক্লাশ টপকে টপকে এবার ক্লাশ ফাইভ থেকে সিক্সে। সিক্স মানে বড় স্কুল। সকাল এগারোটা থেকে বিকেল চারটা বিশ অব্দি ক্লাশ।

বাড়ির পাশেই বড় রাস্তা । স্কুল বাসে আসা যাওয়া। এখন তার অনেক বন্ধু। জানালার বাগান, মস্ত মাঠ, নদী, নৌকা, ট্রেনের দ্রুত ছুটে যাওয়া তাছাড়া পাখিদের উড়ুৎ ফুডুৎ আরও কত কি। শুধু জোর বৃষ্টি হলেই বাসের আঙ্কেল সব জানালা বন্ধ করে দেন।

স্টাইপেন্ডের ফর্ম দিয়েছে স্কুল থেকে। ছাত্র ছাত্রীদের নিজ হাতে ফর্মের সমস্ত কিছু লিখে জমা দিতে হবে স্কুলে।

রাতে সুমনার সাথে ফর্ম নিয়ে বসেছেন তার বাবা । সুমনা প্রথমে তার নাম লিখলো, তারিখ, বাড়ির ঠিকানা, বার্ষিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নাষার। তারপর ভাইবোনের কলামে সুমনা থার্টিন লিখতে গেলেই তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন এখানে থার্টিন হবেনা।

- থার্টিন হবে না বাবা, রাজ দাদা, শুভ্র দাদা, গুড়িয়া দিদি, দীপ দাদা...

- নামা এখানে লিখতে হবে সিঙ্গেল গার্ল চাইন্ড।

- সিঙ্গেল!

- হ্যাঁ মা, সিঙ্গেল, সিঙ্গেল গার্ল চাইন্ড।

সুমনার হাসি মুখটা এবার কেমন যেন কালো হয়ে গেল হঠাৎ । বাবার মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল তারপর সুমনা লিখলো সিঙ্গেল গার্ল চাইন্ড।