ছন্দে লেখেন আমার
বিয়ের কার্ড
| | ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের মতো
মানুষের শিশুসাহিত্যে অবদান বিশ্লেষণ করে কিছু বলার মতো যোগ্যতা কোনোদিনই অর্জন
করতে পারব না হয়তো, কিন্তু আমার প্রিয় ভবানীকাকুকে
নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের
লেখা পড়তে কোন ছোটোদের না ভালো লাগে! আমি আর আমার ভাইও খুব মজা পেতাম ওঁর লেখা
পড়ে। সম্ভবত সরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত ‘আলোর
ফুলকি’-তে প্রথম পড়ি ওঁর লেখা।
একবার কালনার একটা
সাহিত্যসভায় ওঁর আসার কথা। সঙ্গে কবি লেখক প্রবীর জানা, রাহুল মজুমদার—ওঁদেরও আসার কথা। ওই সময় আমরা ‘কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান’ পত্রিকার পাতায় ‘ছড়া গড়া’ আসরের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম। ভাই ছড়া
গড়ায় নিয়মিত অংশ নিত।
সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা
আমাদের সামনের বাড়ির বৈঠকখানায় ওঁদের বসার আয়োজন করেছিলেন। আমি আর ভাই
উত্তেজনায় কাঁপছিলাম। দুপুরের খাওয়াটুকু কোনোরকমে শেষ করে রাস্তায় তাকিয়ে
ছিলাম, কতক্ষণে ওঁদের দেখা পাব! তারপর অবশ্যই আলাপ হল। আর দুজনেই
পেলাম টাটকা ছড়ার অটোগ্রাফ।
আমার বাবা স্বর্গীয়
সমরকুমার চট্টোপাধ্যায় একটি ছোটোদের পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন ১৯৯৯ সালে। ‘ছড়াপত্র পরত’। সেই সময় থেকে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে আরও ভালোভাবে জানতে পারলাম। পত্রিকাটির
উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ফোনে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। তাঁর লেখা ডাকে এসে
পৌঁছত দপ্তরে। সেই গোটা গোটা অক্ষরে নানা স্কেচ পেনের রঙে সজ্জিত লেখাগুলো খাম
খুলে পড়ার একটা আলাদাই আনন্দ ছিল। মনে হত, সবাই ছাপা
পড়বে; আমি টাটকা পড়লাম। মাঝে মাঝে অনেক লেখা একসঙ্গে
পাঠিয়ে দিতেন বাবার কাছে। বাবা স্থানীয় অন্য পত্রিকার সম্পাদকদের হাতে লেখাগুলো তুলে
দিতেন। তবে অবশ্যই ছড়াপত্র পরতের জন্য আমি প্রিয় লেখাটা বেছে নিতাম আগে।
বিভিন্ন সময়ে লেখালেখির
ব্যাপারে তাঁর যে সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছি, তা-ই এই
জীবনের পাথেয়। আমার সমসাময়িক অনেক কবি ভাইবোন এই পাথেয় লাভ করেছেন। আর তা সম্ভব
হয়েছে এই কারণে যে, অতি বিখ্যাত হয়েও সহজ মেলামেশায়
বিশ্বাসী ভবানীকাকু।
আমার জীবনের যে
মহামূল্যবান সম্পদটি সবার সঙ্গে ভাগ করে নেব বলে এই লেখার অবতারণা, তা এবার বলি। আমার বাবার অনুরোধে আমার বিয়ের নিমন্ত্রণ
পত্রটি লিখে দিয়েছিলেন ভবানীকাকু। স্বাভাবিকভাবেই অন্যরকম একটি নিমন্ত্রণ পত্র
সকলের মন জিতে নিয়েছিল।
আমার ছেলেও তাঁর লেখার বড়ো
ভক্ত। ২০১৭ সালে কালনাতেই ভাষাপথের বসন্ত উৎসবে ওঁর সঙ্গে ছেলেকে পরিচিত করতে পেরে
খুব তৃপ্তি লাভ করেছিলাম। হাত পাকানোর এই বয়সে ওঁর আশিস থাকুক আমার ছেলে
প্রবাহনীলের মাথায়। কয়েক বছর দেখা হয়নি। শুনছি উনি খুব অসুস্থ। আমার বাবাও এর
মাঝেই চলে গেছেন অনেক দূরের পথে। সে-খবর ওঁকে জানাবার শক্তি আমি সঞ্চয় করে উঠতে
আজও পারিনি। কাকু ভালো থাকুন, আমাদের
ধ্রুবতারা হয়ে থাকুন—এই প্রার্থনা জানাই সর্বশক্তিমানের কাছে।
<
|