বেশ কয়েকদিন হলো পাড়ার লোকেরা শুনছে শম্পাদি আর গবুদার
মধ্যে ঝগড়া চলছে। পাড়ার লোকেরা অবাক। অবাক
এই কারণে নয় যে দুজনের মধ্যে ঝগড়া এই প্রথম হলো। ঝগড়া তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। নানা ছল-ছুতোয় লেগেই রয়েছে।
নতুন কিছু নয়। অবাক এই কারণে যে এতদিন ধরে যে
ভাষায় ঝগড়া চলত সেটা পাল্টে গেছে। ঘটি, বাঙ্গাল ভাষার অদ্ভুত মিশ্রণ ছিল সে ঝগড়ায়।
গবুদা ছিলেন ঘটি আর শম্পাদি বাঙ্গাল। একই বাঙ্গাল ভাষা তার উপর শম্পাদির তুবড়ির মতো মুখ ছোটা গবুদা বিশেষ সুবিধা করতে পারতো না। ওই
ঢাকের সাথে কাঁসির মত সঙ্গত দেওয়া। ওই মিনমিন
করে কিছু একটা বলে যেত। তবুও কষ্ট করে পাড়ার লোক শুনে নিত। যা বোঝার বুঝে নিত।
গায়ে গা লাগিয়ে সব বাড়ী, পাড়া পড়োশির কাছে অন্য বাড়ীর ঝগড়া শোনার মতো
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আর কি হতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের কাছে তো এ এক বিরাট
মনোরঞ্জন!
বছর তিনেক হল এই পাড়ায় এই দম্পতি এসেছে। যবে
থেকে এসেছে তবে থেকেই পাড়ার লোকেরা ওদের ঝগড়া
শুনতে অভ্যস্ত। ওরা দুজনেই চাকরি করে। যাবার আগে এক প্রস্থ আর ফিরে এসে এক প্রস্থ
ঝগড়া হবেই হবে। ছুটির দিন খোলা ময়দান। মেসি আর এমব্যাপের লড়াই। দুই দুই গোল।
শেষ হাসি যে শম্পা মাসি হাসবে সেটা পাশের বাড়ির কন্যা কলেজ পড়া ঘুন্টি (ডাকনাম)
ভালো করেই জানে। মেসি থুড়ি মাসিকে কেউ আটকাতে পারে? শম্পাদিকে ওই
একমাত্র মাসি বলে ডাকে।
পাড়াটিতে বেশিরভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্তদের বাস।
আস্ত একটা গোটা পাকা বাড়ি কারোরই নেই। কাঁচা, পাকা মিলিয়ে
বাড়িগুলো। দোতালা গুলো বেশিরভাগই আধা হয়ে পড়ে রয়েছে। ঘর উঠেছেতো পলেস্তারা
পড়েনি। নৃতন প্রজন্ম শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু তাদের বাবা-মায়েরা তেমন শিক্ষিত নয়।
শম্পাদি, গবুদা ওরা
নিঃসন্তান দম্পতি। দুজনেই চাকরি করে, এটাও কিছু পাড়ার লোকের কাছে প্রচ্ছন্ন ঈর্ষার
ব্যাপার হয়ে থাকতে পারে। আসলে কার মনোকষ্টের কারণ কি আমরা কেউই জানিনা, বুঝিনা কিন্তু
কাউকে নিয়ে হাসির খোরাক করতে আমরা কেউই ছাড়ি না।
কিন্তু এখন সমস্যা হল হঠাৎ করে ঝগড়ার ভাষা
পাল্টে যাওয়াতে। আগে পাতি বাংলায় ঝগড়া হতো এখন রীতিমতো ইংরেজিতে হচ্ছে। যারা
কান লাগিয়ে শুনতো এখন সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কেউই বুঝতে পারে না কিছুই। পেটে
তো ব্যথা হবেই। আর সবার মনে একই প্রশ্ন কেন হঠাৎ ভাষা পাল্টে গিয়ে বাংলার বদলে
ইংরেজি চলে এলো।
ভাষা পরিবর্তনের রহস্যের ভার এবার দেওয়া হল
পাড়ার ক্লাবের সেক্রেটারি গজমাধববাবু ওরফে গজু বাবুকে । কারণ একমাত্র গোজুবাবুর
সাথেই পাড়ার সবার আলাপচারিতা রয়েছে। যে কোনো দরকারে সবাই গুজুবাবুরই শরণাপন্ন
হয়। লোকটি ও পরোপকারী। সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকেন।
দেখা-সাক্ষাৎ করার বাহানায় এক ছুটির দিনে
গুজুবাবু ঐ বাড়িতে গিয়ে হাজির। গবুদা ও শম্পাদি চা জল খাবার সহ গজুবাবুকে বেশ
ভালো আপ্যায়ন করল। নানা কথার পর গজুবাবু জানতে পারলেন গবুদা ও শম্পাদি সম্পত্তি
এক স্পোকেন ইংলিশ কোর্সে ভর্তি হয়েছে। অফিস ছুটির পর একই সাথে ক্লাস করে বাড়ি
ফেরে। স্পোকেন ইংলিশ স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে এবং ক্লাসে সব সময় ইংরেজীতে
কথা বলতে হবে। ভুলভাল যাই হোক না কেন ইংরেজীতেই কথা বলতে হবে। ওখানকার টিচারেরা সে
সব ঠিক করে দেবে। কথা না বললে ভুলগুলো ধরবেই বা কি করে আর শোধরাবেই বা কেমন করে? তাই ওরা দুজনে ঠিক
করেছে এবার থেকে সব সময় ওরা ইংরেজিতেই কথা-বার্তা বলবে। এমনকি ঘরেও আজকাল তারা
ইংরেজিতে বলছে। গজুবাবু মনে মনে হাসলেন। যাক তার কাজ হয়ে গেছে। হাসিমুখে ওখান
থেকে বিদায় নিলেন।
শুনে পাড়ার লোকেরা বলল তা ঠিক। ওদের
কথা-বার্তা বলতে তো ঝগড়াটাই ওদের কথা-বার্তা। কিছু করার নেই। যাক ঝগড়া হলেও
উন্নতি তো হয়েছে। বাংলা থেকে ইংরেজি!