বসন্ত পরামাণিক

কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ও আমি (বসন্ত পরামাণিক)

  ভবানীবাবুর সান্নিধ্য









বসন্ত পরামাণিক



 

ছড়া শিল্পী ভবানীপ্রসাদ মজুমদার সাহিত্যের সৃজনশীল পথে সুদীর্ঘ সময়ের যাত্রী। তাঁর সৃষ্টিশীল কলম জন্ম দিয়েছে হাজার হাজার শিশুকিশোর উপযোগী ছড়া যেগুলো শিশুকিশোরদের মনোরাজ্যে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে আপন মহিমায়। এমন মজার মজার বিষয়বস্তু সহজ সরল ভঙ্গিতে যেভাবে ছন্দে-সুরে গেঁথে তিনি ছড়া নির্মাণ করে চলেছেন, তা তাঁকে সার্থক ছড়া স্রষ্টা রূপে পরিচিতি দান করেছে। তাঁর লেখা কিছু জীবনবোধের কবিতা ও বাস্তবধর্মী কবিতা পাঠককে ভাবায়। নির্মম বাস্তবতাও কবির লেখায় প্রাণবন্ত। লেখার মুন্সিয়ানায় সত্যিই তিনি স্বতন্ত্র, সত্যিই তিনি ছড়া সম্রাট

যাই হোক, এবার বলি তাঁর সান্নিধ্যে আমার আসার কথা। তাঁর ছড়া পড়তে-পড়তেই আমার তাঁকে চিনতে শেখা। ছড়ার প্রতি আকর্ষণ থেকেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জন্ম নিয়েছিল অন্তরের অন্তঃস্থলে। তারপর নবীন ছড়াকার হিসেবে একটু-আধটু ছড়া লেখার সুবাদে তাঁকে স্বচক্ষে দেখলাম কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশের অনুষ্ঠানে ও সাহিত্যবাসরে। কয়েকবার অল্পবিস্তর কথাও হল। বিস্তারিত কথা হল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আমার জন্মভূমি বাওয়ালীতে, রথতলা ভেড়ি ভেটকাখালি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে। মঞ্চে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শৈলেন্দ্রনাথ পাড়ুই, ড. তপন অধিকারী, অপ্রকাশিত নজরুলগীতির স্বরলিপিকার প্রণব দাস প্রমুখদের সঙ্গে মঞ্চ আলোকিত করে বসলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের শেষে সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে বিস্তারিত কথা হল আমার সঙ্গে। ওঁর সঙ্গে কথা বলে লেখার অনুপ্রেরণা পেলাম আরও গভীরভাবে। এরপর থেকেই মাঝে-মধ্যে ফোনালাপ চলত। কথা হত লেখালেখির খুঁটিনাটি নিয়ে। আমার মতো সামান্য ছড়া-লিখিয়ের ছড়াও যে তাঁর ভালো লাগে, সে-কথা তিনি বহুবার উল্লেখ করেছেন কথোপকথনের সময়। ছড়া লেখক হিসেবে এটুকু যে পরম পাওয়া আমার

এরপর আমার নিজের কর্মস্থল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত বি-চণ্ডীপুরের (বিড়লামোড়) মিম অ্যাকাডেমির রজতজয়ন্তী উৎসব আয়োজিত হল ২৩শে মার্চ, ২০১৯। শিক্ষক হিসেবে আমি স্নেহের ছাত্রছাত্রীদের কথা দিয়েছিলাম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তাদের প্রিয় কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে আমন্ত্রণ জানাব। কবি উৎপলকুমার ধারাকে সঙ্গী করে আমন্ত্রণ জানাতে চলে গেলাম ভবানীবাবুর বাড়ি। প্রিয় কবিকে আবদার করলাম আমাদের স্কুলে আসার জন্য। কথা দিলেন আসবেন। ভবানীবাবুর লেখা কয়েকটি ছড়ার বই সেদিন উপহার হিসেবে পেলাম কবির হাত থেকে। এই স্নেহ, এই ভালোবাসাও আমার পরম পাওয়া হয়ে রইল। অবশেষে সকল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও এলাকাবাসীর আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে সেই বৃষ্টিমুখর বিকেলে মিম অ্যাকাডেমির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে হাজির হলেন প্রিয় কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ও তাঁর সহধর্মিণী শ্রীমতী পদ্মা মজুমদার। ভবানীবাবুর অসুস্থতার জন্য পদ্মাজেঠিমা (ভবানীবাবুর স্ত্রী) যেভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওঁকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়ে পাঠক সমাজের মনোবাসনা পূর্ণ করেছেন, তা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। প্রিয় কবিকে নিজেদের মাঝে পেয়ে ছাত্রছাত্রীদের যে অনাবিল উচ্ছ্বাস ও আনন্দ স্বচক্ষে দেখেছি তা ভোলার নয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে কবি ও কবিপত্নীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনাব আব্দুল গফুর, সাহিত্যিক বিমল পণ্ডিত, সংগীতজ্ঞ প্রণব দাস, কবি উৎপলকুমার ধারা, গবেষক সঞ্জয় গায়েন-সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলাম আমি। যথাযোগ্য সম্মাননা দেওয়া হল আমাদের সবার প্রিয় কবিকে। ছাত্রছাত্রীরা কবির লেখা ছড়া ও কবিতার আবৃত্তির সঙ্গে গানের কোলাজ পরিবেশন করে উপহার দিল সবাইকে। আর কবি ভবানীপ্রসাদ উপহার দিলেন আমাদের স্কুলকে নিয়ে লেখা তাঁর কবিতা। যেটি পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ের মুখপত্রছায়াপথপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে প্রাণখোলা বক্তব্যও তিনি রাখলেন সেদিন। আশীর্বাদ করলেন ছাত্রছাত্রীদের—তোমরা বড়ো হও, মানুষ হও।করতালিতে মুখরিত তখন মিম একাডেমির আকাশ-বাতাস। অনুষ্ঠানে ভবানীবাবু প্রকাশ করলেন আমার লেখা প্রথম ছড়া গ্রন্থমজায় ভরা ছন্দ ছড়া’, কবি শ্যামাচরণ কর্মকারের প্রথম ছড়া গ্রন্থযাচ্ছি উড়ে ছড়ার দেশেএবং কবি উৎপলকুমার ধারার লেখা ছড়া গ্রন্থকুর্চিকুঁড়ির ভোরএকটা মনোমুগ্ধকর মুহূর্তের সাক্ষী রইল আমাদের প্রিয় স্কুল মিম একাডেমি

 

মিম অ্যাকাডেমির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের (সস্ত্রীক) উজ্জ্বল উপস্থিতি
 
কবি উৎপলকুমার ধারা, সংগীত গবেষক প্রণব দাস, কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ও ওঁর স্ত্রী পদ্মা মজুমদার

 

মিম অ্যাকাডেমির মুখপত্র ‘ছায়াপথ’ (বসন্ত পরামাণিক সম্পাদিত) পত্রিকায় প্রকাশিত মিম অ্যাকাডেমিকে নিয়ে লেখা কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের ছড়া।


দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাওয়ালী রথতলায় অবস্থিত ভেড়ী ভেটকাখালী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

 

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পত্রিকার সূচিপত্রে প্রিয় কবির সঙ্গে একসঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। লিখেছি কবির সম্পাদিত ছড়া গ্রন্থেও। কবিও লিখেছেন আমাদের আদরের পত্রিকাপ্রেরণা’-য়

এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। অসুস্থতা বেড়েছে প্রিয় কবির। এখন আর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন না। তাঁর এই অসুস্থতা মনখারাপ করে দিল তাঁর সকল অনুরাগীদের। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর অসুস্থতার মধ্যেও। অসুস্থতার মধ্যেও কষ্ট করে কবি ফোন ধরে কথা বলছেন, এটা ভাবলে বুঝতে পারি আমাদের প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা একেবারে নিখাদ, অকৃত্রিম। জেঠিমাই ফোন ধরেন বেশি। কথা বলেন। তবে এত অসুস্থতা সত্ত্বেও প্রিয় কবি ভবানীপ্রসাদ কলম ছাড়েননি। হাতে কাগজ-কলম তুলে দিলে ঝরঝর করে নেমে আসে শব্দমালা। ভাবলে অবাক হই। তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিবন্ধের এই ছোট্ট পরিসরে সম্ভব নয়। তবু দু-একটি বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলাম এখানে। করুণাময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ভবানীবাবু ভালো থাকুন, আরোগ্য লাভ করুন এবং ছড়া-সাহিত্যে বটবৃক্ষের মতো বিরাজ করুন। তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা ও আশীর্বাদের হাত এভাবেই আমাদের মতো শত শত নবীনের মাথার ওপর থাকুক, এটুকুই আশা

 


ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের প্রতি

বসন্ত পরামাণিক

 

কেমন করে শব্দ সাজাও কবি

কেমন করে আঁকলে ছড়ায় এমন খুশির ছবি!

পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দিলে যে সকল অক্ষর,

সে-অক্ষরই আনল বয়ে আলোমাখা ভোর।

শিশুর ভুবন জুড়ে

তোমার ছড়া স্বপ্ন আঁকে ছন্দে সুরে সুরে।

কোন জাদুতে লিখলে এমন ছড়া

ছড়ায় ছড়ায় ঠিক যেন এক স্বপ্ন-ভুবন গড়া!

শিশুর ঠোঁটে ছড়িয়ে দিলে শিউলি ফোটা হাসি,

ছড়িয়ে দিলে ছড়ার বুকে খুশি রাশি রাশি।

তোমার ছড়ার মাঝে

চিরদিনের প্রাণ-জাগানো শৈশব-সুর বাজে

প্রত্যহ তাই তোমার ছড়া এসে

সব শিশুদের ডাক দিয়ে যায় এমনি ভালোবেসে

ছড়ায় বাঁধা পশুপাখি, অনেক মজার কথা

কাব্যে আবার এঁকে দিলে কঠোর বাস্তবতা।

হে ছড়া সম্রাট

তোমার ছড়ায় বন্ধ মনের খুলল যে কপাট  

 


   

<