অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী এবং ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। হুগলির বদনগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে কয়েক বছর আগে। চোখের সামনে ভবানীপ্রসাদের সাফল্য দেখেছি
| | ভবানীপ্রসাদ মজুমদার বাংলা
শিশুসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তাকে আমি চিনি বহুদিন ধরেই। সে আমার থেকে
বয়সে কিছুটা ছোটো। ভাইয়ের মতো। আমাকে দাদা বলে ডাকে ও সম্মান করে। তার সঙ্গে
আমার প্রথম পরিচয় আটের দশকের শুরুতে। হাওড়ার ৮০ নম্বর বৈষ্ণবপাড়া লেনে
দিলীপকুমার বাগ সম্পাদিত ‘অভিনব অগ্রণী’ পত্রিকার
সাপ্তাহিক সাহিত্যসভায়। প্রতি বুধবার সভাটি বসত। সেই সভায় ভবানীপ্রসাদ ছিল
মধ্যমণি। মজার মজার ছড়া পাঠ করে শোনাত। আমরা মুগ্ধ হয়ে তার ছড়াপাঠ শুনতাম। তখন
ছড়া লিখতাম আমিও। তবে আমাদের দুজনের লেখার স্টাইল ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
বাংলা ও বাংলার বাইরের
অসংখ্য পত্রপত্রিকায় ছড়া লিখে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল ভবানীপ্রসাদ। চোখের সামনে
তার সাফল্য দেখেছি। দেখেছি আমাদের মধ্যে থেকেই কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। খুব
আনন্দ পেতাম ওর এগিয়ে চলা দেখে। জনপ্রিয় হলেও ওর পা ছিল মাটিতে। অহংকারের ছিটেফোঁটা
দেখা যেত না ওর মধ্যে। আমাদের সম্পর্ক ছিল স্বাভাবিক।
বহু আবৃত্তি শিল্পী ওর
ছড়া-কবিতা আবৃত্তি করেন। নতুন দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি ছোটোদের কণ্ঠে
ওর ছড়ার আবৃত্তি শুনেছি। আনন্দ পেয়েছি। বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছে
ভবানীপ্রসাদ। বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাকে প্রদান করেছিলেন
সুকুমার রায় শতবার্ষিকী পুরস্কার।
ছোটর দাবি পত্রিকার রজতজয়ন্তী বর্ষ উৎসবে অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, কৃষ্ণা বসু, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, রাসবিহারী দত্ত। কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে।
ভবানীপ্রসাদের ছন্দের হাত
খুব পাকা। তার ছড়ায় হাস্যরসের পাশাপাশি আছে করুণ রস। গরিব মানুষদের কথাও সে
ছড়ার মাধ্যমে তুলে ধরেছে।
আমি থাকি হাওড়ার
রামরাজাতলায়। ভবানীপ্রসাদ থাকে দাশনগর শানপুরে। কাছাকাছি থাকার সুবাদে একটা সময়
আমাদের নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ হত। মাঝে-মধ্যে আসত আমাদের বাড়িতে। আমিও গেছি ওর
বাড়ি। আড্ডা হত। মিটিং হত। ছড়া নিয়ে কথাবার্তা হত। আমাদের পারিবারিক এবং
সাহিত্য অনুষ্ঠানেও তাকে পেয়েছি। আমার সম্পাদিত ‘ছোটোর দাবি’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকেই সে অনেক
সুন্দর সুন্দর ছড়া উপহার দিয়েছে।
আজ আমাদের দুজনেরই বয়স
হয়েছে। শরীরে থাবা বসিয়েছে অসুস্থতা। এখন আর দেখাসাক্ষাৎ হয় না ভবানীপ্রসাদের
সঙ্গে। তবে যোগাযোগ আছে। আমার পুত্র অংশুমান নিয়মিত ভবানীপ্রসাদের খোঁজখবর রাখে।
সময় সুযোগ পেলেই ওর বাড়িতে যায়। এইভাবেই খবর পাই।
গতবছর আমার জন্মদিনে
ভবানীপ্রসাদ আমাকে নিয়ে সুন্দর একটি ছড়া লিখে পাঠিয়েছিল। খুব আনন্দ পেয়েছিলাম।
কত স্মৃতি। বহু অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গেছি। দীর্ঘ পথ। গাড়িতে কত গল্প হয়েছে। জমজমাট
আড্ডা হত কলেজ স্ট্রিটেও।
একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে।
একদিন সন্ধ্যায় দাশনগর স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন ধরব বলে। যেখানে বসেছিলাম, একটু অন্ধকার। কথা বলছিলাম একজন পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। সেই
সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল ভবানীপ্রসাদ। অন্ধকারে আমার গলা শুনে ঠিক বুঝতে পারে আমি
বসে আছি। এগিয়ে আসে। আমিও তাকে দেখে খুশি হই। জুড়ে দিই গল্প। এতটাই নিবিড় ছিল
আমাদের সম্পর্ক। আজও আছে।
এখনও লিখে চলেছে
ভবানীপ্রসাদ। কোনও পত্রিকায় ওর লেখা দেখলেই মন দিয়ে পড়ি। ভালো লাগে। আরও লিখুক
ভবানীপ্রসাদ। সুস্থ থাকুক ভাই আমার, বন্ধু
আমার।
<
|