| | মাঝ রাতে কার শব্দ আসে, ডাকছে যেন খাটের পাশে! চিঁ চিঁ করছে কারা খোকার চোখ ঘুমহারা। কান পেতে সে শব্দ শোনে একি বিপদ! খোকা গোনে। ঝোপের ধারের বিড়ালছানা কেমনে দিল ঘরে হানা? ঘুমের চোখে খোকা নামে কিছুই না দ্যাখে ডাইনে-বামে। মিশকালো অন্ধকারে। খোকা ঘোরে খাটের ধারে। এমন সময়, মিনির গায়ে পা পড়ে যেই মিনি পালায়। বুঝতে বাকি রইল না খোকার কান্ড এ যে মিনি ঢ্যাটার। ঝোপের ধারে গর্ত থেকে মিনিই ওদের এনেছে রেখে! উঠলে পরে মা এবার করবে তার মজাটি বার।
সেদিন, ভাঁড়ার ঘরে তাকের পরে, বিড়ালছানার জন্ম ঘিরে বেধেছিল এক কান্ড! হৈ হৈ, রৈ রৈ করে, বিড়ালছানাদের বস্তা ভরে, তুলে দিয়েছিল মা হাতে ধরে বলেছিল, ‘দূর কর এদের, যা ছেড়ে আয় গাঁয়ের পারে।’
খোকার ভারি কষ্ট লাগে, তাই তো সে আগে ভাগে ঝোপের ধারে গর্ত খুঁড়ে বস্তাভরা ছানাদের নিয়ে দিয়েছিল এক লম্বা হাঁটা- যেন গাঁয়ের পারেই পৌছবে সে। মিনির নজর এড়িয়ে শেষে।
কিছুটা পথ পেরিয়ে এসে খোকা দেখেছিল আশেপাশে কেউ কোথা নেই যেথা। বস্তাভরা ছানাগুলোকে রেখে ফেরে গর্তের মাঝে মিনি তো নেই সেথা। ওদের কান মূলে, বলেছিল, ‘খবরদার! এই জায়গা ছেড়ে যাবি না ঘরে।
এখানে দুধ-মুড়ি দেব সকাল বিকেল খাবি, বড় হলে তবেই তোদের ঘরের ভিতর নেব। কেউ তখন আর তোদের করবে না দূরছাই। দাঁত উঠলে রোজই পাবি ভাতের সাথে মাছ, আমরা যা খাই।’
কথা না শুনে ওদের বাড়িতে এনে মিনি বাঁধিয়েছে কী বিপদ! মিঁউ, মিঁউ, মিঁউ শব্দ ঘরে- মা কি নিশ্চিন্তে ঘুমতে পারে? উঠেছে জেগে, এবার টর্চের মাথা থেকে ঠিকরে পড়ছে আলো।
দেখে, ঘরে ঘুরছে সব সাদা-কালো।
ভয়ে প্রাণ খোকার প্রায় মুঠোয় চলে এল। সভয়ে খোকা খাটে চড়ে মায়ের বুকে মাথা ধরে বললে, ‘মা রে, ওরা শিশু, গাঁয়ের পারে আসলে রেখে ওরা পেত না কিচ্ছু। তাই, রেখেছিলেম গর্তে-ঝোপের ধারে। শর্ত দুধ-মুড়ির দেব, সকাল বিকেল দেখব,
বড় হলে বাড়িতে এনে তুলব। তুই রাগ করিস না মাগো,
সত্যি আমি বলছি কথা, মা,
তুই আমায় ভুলে যা,
তবু ওদের তাড়াস না।’
মায়ের চোখে জল, অবশ করে দিল মাকে।
রাতের শেষে দিনের পরে, মা বেড়াল ছানাদের ধরে
পুরনো এক সিন্দুক সাফ করে , তাদের রাখল ধরে।
এখন মিনির সাথে ছানারা থাকে
খোকার আনন্দ বাড়ে তাতে।
ছানারা যত বড় হয়
খোকাও খেলার সাথী পায়।
|