কিশোর বার্তা পত্রিকার
তরফ থেকে আপনার কাছে বিখ্যাত কবি, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
সম্পর্কে জানতে চাই।
শিবাশিস দণ্ড — তাঁর সঙ্গে
বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আপনাদের এই উদ্যোগের সাফল্য কামনা করি। কী জানতে চান, বলুন।
— আপনি তো
সুদীর্ঘ সময় ধরে সাহিত্য জগতের সঙ্গে, বিশেষত
পত্রপত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন। আপনার কবিতার সিডিও বেশ জনপ্রিয়। ভবানীপ্রসাদ
মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় কীভাবে?
শিবাশিস দণ্ড — ১৯৮১ সালে
অমল ত্রিবেদী সম্পাদিত ‘টুকলু’ পত্রিকায়
আমার জীবনের প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয়। ভবানীদা তখন ‘টুকলু’
পত্রিকার নিয়মিত লেখক এবং অমলদার বন্ধু। সেই সময় তাঁর সঙ্গে আলাপের
সূত্রপাত হয়। এরপর ১৯৮৬ সালে পুরুলিয়ায় থাকাকালীন আমি ‘শিলালিপি’
বলে একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করি। ওই পত্রিকার সূত্রেই তাঁর
সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা দৃঢ় হয়।
— কীভাবে একটু
বিস্তারিত বলবেন?
শিবাশিস দণ্ড— উনি পোস্টকার্ডে
চিঠি লিখে ‘শিলালিপি’ পত্রিকার
ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিয়েছিলেন এবং নিজেও লিখেছিলেন। এরপর বেশ কিছু ছড়া সংকলনে
লেখার জন্য ভবানীদার আমন্ত্রণ পেয়ে লিখেওছিলাম। আর একটি কথা, ‘শিলালিপি’ ছাড়াও বেশ কিছু পত্রপত্রিকাও সম্পাদনা
করেছি। ঝাড়গ্রাম থেকে লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ‘সম্পাত’ বলে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছি। তারপরে কলকাতায় আসার পরে গোর্কি সদন
থেকে ‘ইউথ গিল সংবাদ’-এর সম্পাদনা
করেছি। সেই সময় আমাদের সভাপতি ছিলেন আর এক স্বনামধন্য বাচিক শিল্পী দেবদুলাল
বন্দোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেও আমার অনেক স্মৃতি। তারপর অডিও ইমফ্রেম হাউজ থেকে আমার
সম্পাদিত এবং প্রকাশিত ‘নন্দনকানন’, সেখানেও
অনেক কৃতবিদ্য মানুষরা লিখতেন। এইভাবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সম্পাদনা করার কালে আমি
ভবানীদার কাছে কখনও শুভেচ্ছা বার্তা, কখনও লেখা, কখনও তাঁর চিঠি পেয়ে বারংবার আমি উৎসাহিত হয়েছি, উদ্বুদ্ধ
হয়েছি।
— ওঁর দক্ষিণ
শানপুরের বাড়িতে গিয়েছিলেন নিশ্চয়ই? সে-ব্যাপারে
কিছু অভিজ্ঞতা যদি জানান ভালো হয়।
শিবাশিস দণ্ড— ২০০১ সাল
নাগাদ কলকাতায় থাকার সুবাদে ভবানীদার সঙ্গে যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়। বেশ কয়েকবার।
কারণে অকারণে ওঁর বাড়ি গিয়ে অনেক সময় কাটিয়েছি। সান্নিধ্যে এসে তাঁর সহজ, সরল আচরণে মুগ্ধ হয়েছি। শিশুসাহিত্য নিয়ে প্রচুর আলোচনা হত।
কবিতার সহজ সরল ছন্দ অনায়াসেই তাঁর আয়ত্তে ছিল। সময়ে অসময়ে ফোনালাপ চলত। শরীর
স্বাস্থ্য এবং লেখালিখি নিয়েই কথাবার্তা চলত।
— আপনার মতে
তাঁর এই অসাধারণ জনপ্রিয়তার কারণ কী?
শিবাশিস দণ্ড— সমাজের
সমস্যাকে মজার ছলে বা ব্যঙ্গাত্মকভাবে সুছন্দে লেখার জন্য পাঠকের মনে তাঁর লেখা
অতি সহজেই দাগ কেটে যায়। আশির দশকে পূজাবার্ষিকী পত্রিকা ছাড়া নানা পত্রপত্রিকায়
আমার দাদা দেবাশিস দণ্ড আর ভবানীদার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত। বাড়িতে সেসব পত্রিকা
এলে আমার মায়ের অনুরোধে আমাকে প্রথমেই ভবানীদার কবিতা পড়তেই হত। বাড়ির সবাই
একসঙ্গে বসে সে-কবিতার রসাস্বাদন করতাম। আশির দশক থেকেই আমার মা ভবানীদার
লেখনশৈলীর গুণমুগ্ধ পাঠিকা ছিলেন। পরবর্তীকালে পরিবারের সবাই তাঁর লেখার ভক্ত হয়ে
যাই।
— আপনার একক ছড়া
সংকলন ‘আক্কেল গুড়ুম’ গ্রন্থে ভবানীপ্রসাদ
মজুমদার মুখবন্ধ লিখেছিলেন। সেটা কীভাবে সম্ভবপর হয়েছিল?
শিবাশিস দণ্ড— ২০০৯ সালে
কলকাতা বইমেলায় ‘আক্কেল গুড়ুম’ বের
হয়। এর আগে বিভিন্ন সংকলনে লিখেছি, অন্য ধরনের গ্রন্থও বের
হয়েছে, কিন্তু নিজস্ব ছড়া সংকলন সে-ই প্রথম। ভবানীদার সঙ্গে
দীর্ঘদিনের আলাপের সুযোগটুকু আমি ছাড়তে চাইনি। বিয়াল্লিশটি ছড়ার সংকলনের মুখবন্ধ
লেখার আবদার করতেই উনি ছড়ার ছন্দে এক অসাধারণ মুখবন্ধ লিখে দিয়ে আমার বইয়ের
ঔজ্জ্বল্য এবং মান বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই ছড়া উনি নিজে পাঠ করে শুনিয়েও ছিলেন।
সেদিনের সেই আবৃত্তি আমি ডিজিটাল ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ডিংও করি। সেসবই আমার
সংগ্রহে সযত্নে রাখা আছে।
— উনি নিজে
প্রচুর সম্মান, পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু সমসাময়িক
কবিদের সম্পর্কে কীরকম মনোভাব ছিল?
শিবাশিস দণ্ড— প্রচুর কবি, লেখককে সাধ্যমতো লেখার ব্যাপারে সাহায্য করতেন, পত্রিকায় লেখার সুযোগ করে দিতেন, অনেক অনুষ্ঠানে
নিজে তাঁদের সকলের সামনে উপস্থাপিত করতেন। ওঁর স্মরণে আসা তৎকালীন প্রথম সারির
দশজন সেরা কবিদের মধ্যে আমাকে একজন হিসেবে গণ্য করতেন। সেটাও উনি বলেছিলেন আমার
সহজাত নিজস্ব লেখার ধরন দেখে। নব্বইয়ের দশকে উনি জনপ্রিয়তার মধ্যগগনে, তাঁর কাছ থেকে এই স্বীকৃতি আমার পরম পাওনা। আমি ওঁর পদধূলি নিয়ে আশীর্বাদ
পেয়ে ধন্য হয়েছি।
প্রশ্নকারী— ভবানীপ্রসাদ
মজুমদারের সঙ্গে তাঁর লেখা নিয়ে কিছু সমালোচনা করেছিলেন কি? তাতে ওঁর মনোভাব কী হয়েছিল?
শিবাশিস দণ্ড— এ ব্যাপারে
এক মজার ঘটনা মনে পড়ছে। একবার হয়েছে কী, ভবানীদা
তাঁর একটা লেখা আমায় পড়তে দিয়েছেন। পড়তে পড়তে প্রতি লাইনে ছন্দের মাত্রা যেন
অতিরিক্ত মনে হচ্ছে। আমার পাঠ শুনে এবং মুখের অভিব্যক্তিতে উনি সেটা বুঝে মুচকি
মুচকি হাসছিলেন। এরপর উনি নিজে যখন লেখাটি নিয়ে আমাকে পড়ে শোনাচ্ছিলেন, তখন বুঝেছিলাম যে আমি যে-ছন্দে পড়ছিলাম, এই ছন্দটি
একেবারেই সম্পূর্ণ আলাদা এবং উনি যখন সেই লেখাটি প্রাঞ্জলভাবে গড়গড় করে পড়ছিলেন
তখন শুনে খুব শ্রুতিমধুর লাগছিল। আমি যেহেতু গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত আছি তাই গানে
তাল বা ঠেকা সম্পর্কে কিছুটা জানি। আমি যখন ভবানীদার মুখে তাঁর স্বরচিত কবিতা পাঠ
শুনেছি, তখন তো আর আবৃত্তির এত কিছু আনুষঙ্গিক ব্যাপার ছিল
না। তখন খুব সহজভাবে মানুষ আবৃত্তি করছেন, সেটাই দেখে
অভ্যস্ত ছিলাম। এখন তো সাউন্ড লাইট ইত্যাদি নানারকমের ব্যাপার এসেছে। তা সেই যুগে
ভবানীদা ওই ধরনের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন এবং সেগুলো যে কী আনন্দ
সহকারে উনি পাঠ করতেন, সেগুলো খুব শিক্ষণীয়। যেমন আমি আপনাকে
বলছি ফোর ফোর মানে চার চার ছন্দের বা ছয় আট ছন্দের আমাদের যেরকম গান হয়, আবার ৭ মাত্রা ১৪ মাত্রা ১২ মাত্রা ১৬ মাত্রা এরকম থাকে। কবিতার ক্ষেত্রে
আমি দেখেছি ওঁর ছন্দের জায়গাটা এত স্বতঃস্ফূর্ত ছিল এবং সেটাকে উনি নিজের
নিয়ন্ত্রণে রেখে ছন্দকে খেলাতে পারতেন। এইজন্যই ওঁর রচিত বিভিন্ন ছড়া বা কবিতা যখন
পাঠ করতেন, খুব প্রাঞ্জল লাগত। দেখলে কিন্তু বোঝা যাবে না।
সেই এক্সপেরিয়েন্সটা উনি ওঁর বাড়িতে সেদিনই আমাকে পাঠ করানোর মাধ্যমে বুঝিয়ে
দিয়েছিলেন। আমি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলাম যে সত্যিই আমি এই ছড়াটির যে-মাত্রায়
পড়া উচিত, সেই মাত্রা আমি চিনতে ভুল করেছিলাম। তো এমন অনেক
কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আমি ওঁর কাছ থেকে শিখেছি।
এরপর আমার মনে আছে স্টেট
ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার হেড অফিস ‘সমৃদ্ধি
ভবন’, সেখানে তৎকালীন কালচারাল সেক্রেটারি ছিলেন ওঁদের
ডিপার্টমেন্টের অমিতাভ গুহঠাকুরতা। উনি আমার খুব অনুরাগী এবং বন্ধু মানুষ ছিলেন।
তো উনি আমাকে বললেন যে তাঁদের অ্যানুয়াল ফাংশনে এমন একজন ব্যক্তিত্বকে আনতে চান
যাঁকে দেখলে মানুষ আশ্চর্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব খুশিও হবে। যেহেতু অমিতাভদারও
সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল এবং তিনি কালচারাল সেক্রেটারি, তাই সেই মুহূর্তে আমি তাঁকে ভবানীদা-সহ আরও দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম।
অমিতাভদা তখন আমাকে ভবানীদাকে সমৃদ্ধি ভবনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই
অনুষ্ঠান ভবানীদার উপস্থিতিতে এত অদ্ভুত সুন্দর হয়েছিল এবং ভবানীদা যেভাবে কোনও
খাতা, কাগজ বা পত্রিকা না দেখেই শুধু স্মৃতি থেকে সেইসব
লেখাগুলি অপূর্বভাবে পাঠ করেছিলেন, তা একেবারে অভাবনীয়। একদম
মন থেকে তিনি আবৃত্তি করে সেগুলোর প্রাসঙ্গিকতা খুব মজার ছলে বুঝিয়েও দিয়েছিলেন।
সেদিন সমৃদ্ধি ভবনে উপস্থিত সবাই খুব আনন্দ সহকারে তাঁর পাঠ উপভোগ করেছিলেন।
— ছন্দের
ব্যাপার বোধ হয় ওঁর সহজাত ছিল, তাই না?
শিবাশিস দণ্ড— একদমই তাই।
আমি সংগীতের তাল, লয় সম্পর্কে কিছুটা জানি। বর্তমানে
সেসবের প্রয়োগ নিজের সিডিতে প্রয়োগ করি, কিন্তু ভবানীদার
সময়ে এত লাইট আর সাউন্ডের ব্যবহার ছিল না। অথচ উনি কিন্তু তখনই এধরনের প্রচেষ্টা
চালিয়েছেন। গানের ক্ষেত্রেও যেমন ছন্দ, মাত্রা থাকে, কবিতার ক্ষেত্রেও থাকে। আর ভবানীদা সেই ছন্দ আর মাত্রাকে এত স্বতঃস্ফূর্ত
আর সাবলীলভাবে লিখতেন, তা অকল্পনীয়। স্বরচিত কবিতা পাঠ করলে
তা শ্রুতিমধুর হয়ে শ্রোতার মনে দোলা দিত, আর এখানেই তাঁর
গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য।
— মানুষ হিসেবে
কেমন ছিলেন?
শিবাশিস দণ্ড— নিপাট ভদ্রলোক বলতে যা বোঝায়, এক্কেবারে
তাই। শিক্ষকতা করতেন, সহজ সরল মানুষ। সহজে কিছু পেতে চাইতেন
না। একটা ঘটনা বললে পরিষ্কার বোঝা যাবে; উনি তখন সদ্য অবসর
নিয়েছেন, নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যাংকে যেতে ভবানীদাকে নাকি জোর
করে ক্রেডিট কার্ড ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই ক্রেডিট কার্ড পেয়ে উনি খুবই বিপদগ্রস্ত
হয়েছেন বলে ওঁর মনে হয়েছিল। ফোনালাপে সেটা জানিয়েছিলেন। এরকমই সরল প্রাণের মানুষ
ছিলেন। সরল চোখে জগৎটাকে দেখতেন বলেই বাস্তবের কঠিন রুক্ষ জগৎ তাঁর চোখের সামনে
অতি সহজেই ধরা পড়ত। তিনি ছড়ার ছন্দে হাসির ছলে মজা করে সে কথাগুলি অতি অবলীলায়
লিখে ফেলতেন।
গোয়েন্দা হরিশ- এর স্রষ্টা কিশোর লেখক আমনরূপ দন্ড
আরও একটা ঘটনা মনে পড়ছে।
২০১০ সালে আমার পুত্র, সাত বছরের আমনরূপ জীবনে প্রথম ছড়া
লিখে ছবি এঁকে ‘মানসরোবর’ বলে একটি
পত্রিকায় পাঠিয়েছিল। সারা বাংলার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছড়া লেখা, কবিতা লেখা এবং ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হত। তো সেখানে আমনরূপের ছবি এবং
লেখা প্রথম হয়। মিলেনিয়াম পার্কে ২০১০-এ প্রখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর হাত
থেকে আমনরূপ সেই প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করেছিল। সেদিনের অনুষ্ঠানে আমি, আমনরূপের মা, ঠাকুরদা, ঠাকুরমা
এবং দাদু-দিদিমা ছাড়াও সেখানে ভবানীদাও উপস্থিত ছিলেন। সেই প্রথম ভবানীদার সঙ্গে
সরাসরি আমনরূপের আলাপ। ভবানীদার পায়ে হাত দিয়ে আমনরূপ প্রণাম করতেই উনি ওকে
সস্নেহে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। এখনও আমার চোখের সামনে সে-দৃশ্য ভাসে।
এর পরে আর একটি ঘটনা আমার
মনের মধ্যে দাগ কাটে। সম্ভবত ২০১১ সালের কথা। আমি তখন কোন্নগরে থাকি। সে-বারে
কোন্নগর বইমেলা উপলক্ষ্যে কোন্নগরে নবগ্রাম বিদ্যাপীঠে ভবানীদা প্রধান অতিথি হয়ে
এসেছিলেন। ভবানীদা আমাকে ফোন করে সেই সভায় সন্ধে নাগাদ চলে আসতে বলায় আমিও আমনরূপকে
নিয়ে নবগ্রাম বিদ্যাপীঠে হাজির হয়ে ওই বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের ঘরে ভবানীদার
সঙ্গে বসে আমরাও চা-বিস্কিট খেয়ে বাক্যালাপ শেষে পরবর্তী অনুষ্ঠান উপভোগ করেছিলাম।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়ে গেলে ভবানীদা মঞ্চে উঠে ছোট্ট আমনরূপকে ডেকে নিয়ে তার
প্রশংসা করে আমারও নাম ঘোষণা করে কবি পরিচিতি জানিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়, এরপর ভবানীদা আমনরূপকে ছড়া বলতে বলায় সে ‘আক্কেল গুড়ুম’ থেকে আমার লেখা ‘সাদাকালোর কাজিয়া’ ছড়াটি আবৃত্তি করেছিল। সে এক বিরল
দৃশ্য! জানি না সেই সন্ধের ছবি তুলে রেখেছি কি না। আমার পরম শ্রদ্ধেয় ঈশ্বর তুল্য
গুরু, ছন্দ-ছড়ার জাদুকর ভবানীদা কর্ডলেস মাইক্রোফোনটি আমার
সন্তানের মুখের সামনে ধরে আছেন আর আমনরূপ দৃপ্ত ভঙ্গিতে প্রাণ খুলে ছড়া বলে
যাচ্ছে। দর্শকাসনে বসে আমি লজ্জিত হচ্ছিলাম এই ভেবে যে আমনরূপ আমার রচিত ছড়ার
পরিবর্তে কেন ভবানীদার লেখা আবৃত্তি করছে না। ভবানীদা যে কত উদার এবং নতুন
প্রজন্মের কাছে উনি যে কত বড়ো একটা দৃষ্টান্ত, সেটা উনি
প্রমাণ করেছিলেন। আবৃত্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত উনি মাইক্রোফোনটি ধরে ছিলেন এবং
কবিতাপাঠের শেষে আমনরূপের ভূয়সী প্রশংসার পরে উনি নিজের অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন।
এসব ঘটনা কখনও ভোলা যায় না।
— আপনি যে এত
তথ্য, ঘটনা জানিয়ে সমৃদ্ধ করলেন, তার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিবাশিস দণ্ড— ওঁর
সিমপ্লিসিটি জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখা। কোথাও কোনও জোর না খাটানো, কোথাও কোনও চালাকির দ্বারা কিছু না করা; এগুলো ওঁর কাছে প্রতি মুহূর্তে শিখেছি। আজকে ওঁর অসুস্থতার খবরে মনখারাপ
হয়। তার মধ্যে আপনারা যে এইরকম একটা মহান উদ্যোগ নিয়েছেন, এতে
আমি যে কতটা আনন্দিত এবং কতটা উদ্বুদ্ধ হয়েছি ধারণা করতে পারবেন না।
— পত্রিকার
পাঠকরা ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে নতুনভাবে জানুক, চিনুক—এই আশাতেই এই সাক্ষাৎকার। আশা করি নতুন প্রজন্ম তাঁর লেখায় আগ্রহী
হবে।
শিবাশিস দণ্ড— আপনারা আমার
সঙ্গে এইভাবে যোগাযোগ করেছেন বলে আমি খুবই কৃতজ্ঞ এবং আনন্দিত। চোখ বন্ধ করে সব
স্মৃতিপটে ভেসে উঠল, আমি বলে গেলাম। এগুলো দিয়ে যদি
আপনারা একটি লেখা তৈরি করে ফেলতে পারেন, সেখানে শিবাশিস দণ্ড
নাম দিয়ে আপনারা সেটা ছাপতে পারেন। তাতে আমার কোনও আপত্তির কিছু নেই বরঞ্চ আমি খুব
নিজেকে ধন্য মনে করব। এও গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো। এক কৃতজ্ঞ শিষ্যের গুরু প্রণাম।
— অসংখ্য
ধন্যবাদ।
<
|