স্বপ্না রায়

                                                                                                                                                                                                                      ছবি - রাহুল মজুমদার

 ভবানীপ্রসাদ: ছড়ায় আঁকেন         জীবন ছবি










স্বপ্না রায়

 

আমরা ছড়া দিয়েই যেন গড়া তাঁর ভুবন। ছড়া নিয়েই কথা বলা, ছড়া দিয়েই হাঁটাচলা। ছড়া যেন তাঁর কাটুম-কুটুম। ছড়া ভাবছেন, ছড়া লিখছেন, ছড়া গড়ছেন, দিচ্ছেন ছড়া ছড়িয়ে৷ ছড়িয়ে যাওয়া, গড়িয়ে যাওয়া সেই সব ছড়ারা ভরিয়ে দিচ্ছে সব্বার মন। তিনি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

পৃথিবীর সব দেশেই যুগে যুগে কালে কালে দিদি-ঠাকুমার মুখে মুখে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে ছড়ার এগিয়ে চলা। গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে নগর। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই পথেই ক্রমশ মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রবীন্দ্রনাথ, যোগীন্দ্রনাথ, সুকুমার, সুনির্মল, অন্নদাশঙ্কর এবং আরও আরও অনেকের হাত ধরেই ছড়ার এগিয়ে চলা। ভবানীপ্রসাদও সেই পথেই হেঁটেছেন, আজও হাঁটছেন। তবে সে-চলা গড়নে-ধরনে ভাবে-ভাবনায় গঠনে-প্রকরণে নিজস্ব মহিমায় দীপ্যমান

শিক্ষকতা আর লেখালেখির প্রাঙ্গণে ভবানীপ্রসাদের নিরন্তর আনাগোনা আজ প্রায় পাঁচ দশক ধরে। ধীরস্থির, শান্ত স্বভাব ভবানীর সহজ সরল কথাবার্তা সকলের মন ছুঁয়ে যায়। আর তাঁর লেখনী তো কেড়ে নেয় সকলের মন। ভবানীপ্রসাদ যেন ছড়ার আর এক নাম। তাঁর নাম শুনলেই ছোটোরা নেচে ওঠে, মুখে ফোটে হাসি। তাঁর ছড়াগুলো পড়লে কে না খুশিতে মেতে ওঠে। তাই তো তাঁর ছড়ার দোলা আর ধ্বনি মাধুর্যের সুললিত উচ্চারণ বারে-বারেই শুনি আমাদের ছোটোদের কণ্ঠে। তবে শুধু ছোটোরাই শুধু নয়, তাঁর ছড়া রীতিমতো উপভোগ করেন বড়োরাও! তাঁরঐতিহাসিক জলসাছড়াটি অফুরন্ত মজায় মাতিয়ে তোলে শুরুতেই—

তিন দিন তিন রাত গালে ঠেসে পান

গান জোর গেয়েছিল চেঙ্গিস খান

তাক-ধিন ধিন-তাক তেরে-কেটে ধিন

তবলাতে কে ছিলেন?

আলাউদ্দীন! 

তারপর হিউয়েন সাঙ, মমতাজ বেগম, শাজাহান আর মেগাস্থিনিসকে নিয়ে সে এক ঐতিহাসিক জলসাই বটে। চিরদিন মনে রেখে দেওয়ার মতো। কিংবাহিস্ট্রির হিস্টিরিয়াছড়াটা যদি দেখি—

দেখলাম ভালো করে ইতিহাস খুঁজিয়া

শিবাজী খেতেন রোজ দেড়-কেজি গুজিয়া

বাবরের বড়দা

নাকে গুঁজে জরদা

দিনরাত ঘুমোতেন এক চোখ বুজিয়া।

এসব ব্যতিক্রমী পঙক্তিই হচ্ছে ভবানীপ্রসাদীয় ঘরানার উৎকৃষ্ট উদাহরণ

তবে শিবাজী বা বাবরের খোঁজ নিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, খোঁজ নিতে বলেছেন সুলতানা রিজিয়া বৃষ্টিতে ভিজে কবে কোথায় হেঁচে হেঁচে মরিয়া হয়েছিলেন বা হোমারের ভাগনা কোথায় বসে ঘুগনির শালপাতাখানা চেটে চেটে খেয়েছিল। ইতিহাসের চরিত্রকে এমন কৌতুকময় করে তুলতে পারেন ভবানীপ্রসাদ ছাড়া আর কে?

ছড়ার জাদুকর ভবানীপ্রসাদের জাদু-কলমের ছোঁয়াতেই যেন প্রাণ পেয়ে ওঠে একের পর এক ছড়া। আর তাঁর ঝুলিও যেন অফুরন্ত। কখনও সেখান থেকে বের হয় পশুপাখিদের নানান মজার কাহিনি, কখনও বাজনা-বাদ্যির বৃত্তান্ত, কখনো-বা ভূতের দলবলের অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা। হাট-বাজার, শাকসবজি, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, স্বদেশ-স্বজন, দেশ-বিদেশ, উৎসব-মেলা, ফুল-ফল—কী নেই? ভূতপ্রেত, জীবজন্তু, শিশু-কিশোর-বুড়ো-বুড়ি—কে নেই তাঁর ছড়ায়?

হাওড়া থেকে হুতুম এসেই বললে ওরে, ভূতুম

ভালোই ছিলাম হাওড়া ব্রিজের মাথার ওপর শুতুম

ঘুম ভাঙলেই লাফিয়ে নেমে গঙ্গাতে মুখ ধুতুম

খেলার ছলে চাঁদ তারা আর মেঘগুলোকে ছুঁতুম। 

আবার কে ভুলবে তাঁরছাগলের কাণ্ডছড়ার কথা? সেই যে ছাগলটা উলের গোলা খেয়ে ফেলেছিল, তার বাচ্চা হবার পর কী দেখলাম আমরা?

বাচ্চার রূপ দেখে

হাসি প্রাণ খুলে রে

গায়ে তার সোয়েটার

বোনা সেই উলে রে!


আবারশীতে হিতে বিপরীতছড়ায়—

বললে কালু শোনরে লালু

মালদাতে কী ঠান্ডা!

গোরুর বাঁটেই দুধ জমে যায়

যতই মারিস ডাণ্ডা।


ভূতপ্রেতকে নিয়েও তাঁর মজার শেষ নেই

ভূতের ছড়া লিখবে বলে

সেদিন হরেন হাটি

যেই বসেছেন, হঠাৎ মাথায় মারল কে জোর চাঁটি

তাকিয়ে দেখেন কেউ ঘরে নেই/

তিনি একদম একা

ভয় নয় ঠিক একটু খানিক

খেলেন ভ্যাবাচ্যাকা।

(ভূতের ছড়া, ভীষণ কড়া)


এত ভূতপ্রেতের কথা শুনিয়েছেন, হাসিয়েছেন, ভয় দেখিয়েছেন, পিলে চমকে দিয়েছেন বটে কিন্তু সত্যিই কি তিনি ভূতে বিশ্বাস করেন? কী বলেন তিনি উদভট্টম ভূতভট্টম ছড়ায়?

ভূতপ্রেত দত্যি আছে নাকি সত্যি? জানি না জানি না জানি না

জিন নিশি ডাইনি দেখা কারো পাইনি মানি না মানি না মানি না

রাক্ষস রাক্ষুসি গল্পেই থাক খুশি তাইরে ভাইরে তাইরে

খোক্কস খোক্কুসি অল্পেই হোক খুশি চাইরে তাইরে ভাইরে।


আবার পাশাপাশিজীবন যন্ত্র মরণ মন্ত্রনামের ছড়াটিতে দেখতে পাই—

আমাদের খুঁটি নেই, ছুটি নেই, রুটি নেই

ছেঁড়া জামা দুটি নেই, কোনও লুটোপুটি নেই

নেই মনে খুশি খুশি গন্ধ!

ভগবান, আপনি কি অন্ধ?

আমাদের পুঁজি নেই, রোজগার রুজি নেই

চাল-গম-সুজি নেই, কোনও গলিঘুঁজি নেই

দুনিয়ার সাথে লড়ি দ্বন্দ্ব

ভগবান, আপনি কি অন্ধ?’

স্বাধীন ভারতে জন্ম কবি ভবানীপ্রসাদের। মনে ছিল অনেক আশা, চোখে ছিল স্বপ্ন। গড়ে উঠবে স্বপ্নের এক দেশ। কিন্তু কী দেখলেন কবি? কী দেখছেন? সেই একই ছবি। দেশের বেশিরভাগ মানুষই আজও পেটভরে খেতে পায় না; তাদের জোটে না পরনের কাপড়। মানুষের মন থেকে জাতিভেদ, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতার অন্ধকার যেমন ঘুচল না তেমনি সাম্প্রদায়িকতার কুটিল কালো বিভীষিকাকে সরিয়ে এসে পৌঁছল না প্রভাত সূর্যের অরুণ আলো। বইল না সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির সুপবন। হতাশ কবির সেই আক্ষেপ অভিযোগ আর অসন্তোষ দেখতে পাইজননী জন্মভূমিশ্চছড়ায়।—

পেরিয়ে গিয়েছে স্বাধীনতার ওই অর্ধশতক বর্ষ

আজও কি সবাই পেয়েছি মনেতে সুখ-শান্তির স্পর্শ?

আজও জাতিভেদ, ধর্ম বিভেদ নিয়ে হয় মারামারি

দুমুঠো ভাতের তরে কুকুরের সাথে চলে কাড়াকাড়ি

(জননী জন্মভূমিশ্চ)

বারে-বারেই তাঁর ক্ষোভ, বিদ্রূপ, ধিক্কার উচ্চারিত হয়েছে মানুষের লাঞ্ছনা বঞ্চনার বিরুদ্ধে। অসহায়, অনাথ মানুষের জ্বালা, যন্ত্রণা তিনি অনুভব করেছেন যেন তাদেরই মতো করে। তাই তিনি প্রতিবাদে মুখর। মানুষেরই বিরুদ্ধে মানুষের অন্যায়, অবিচার, অসাম্য, অসঙ্গতি তাঁকে করে তুলেছে অস্থির। সেই অস্থিরতা, সেই অভিযোগের প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর লেখায়

বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুক সৃষ্টিতে সিদ্ধহস্ত ভবানীপ্রসাদ পাঠককে যেমন ভরিয়ে দিয়েছেন অনাবিল আনন্দ আর নির্মল হাস্যরসে, তেমনি জীবনের কুটিল, জটিল, নিষ্ঠুর দিকটির দিকেও তাঁর দৃষ্টি ছিল সমান তীক্ষ্ণ। দায়বদ্ধ একজন কবির মতোই তিনি সমাজ জীবনের পথে সর্বত্রগামী

পারিপার্শ্বিক জীবনই তাঁকে উদ্দীপ্ত করে, উদ্বুদ্ধ করে, জাগ্রত করে তাঁর চেতনা, অনুভূতির সূক্ষ্ম তারে জাগায় স্পন্দন। পৃথিবী ব্যাপী অন্যায়, অবিচার, হিংসা আর লোভ-লোলুপতার দাপট কবি অনুভব করেন আপন অন্তরে। পরশ্রমভোগী, বিলাসবৈভবে মগ্ন মানুষের উদ্দেশে জীবন সংগ্রামরত দুঃস্থ, বিপন্ন, বঞ্চিত মানুষের সপক্ষে কবির ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শানিত উচ্চারণ—

তোমরা রয়েছ যারা ঝালে ঝোলে অম্বলে

ফ্যান-ফ্রিজ-ফোন-টিভি নয় কিছু কম বলে!

...

আহার ও বাহারে

ফুর্তির পাহাড়ে

মেতে থাকো বারো মাস আমাদেরই সম্বলে

আমরা শরীর ঢাকি ছেঁড়া কাঁথা কম্বলে।


শিশুরাই আমাদের সম্পদ। সমস্ত পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। তারা একদিন শতধারায় বিকশিত হবে—এ আমাদের স্বপ্ন। কবিও সেই স্বপ্নই দেখেন। কিন্তু এখনও তারা অনাহারে, অপুষ্টিতে, অশিক্ষায় জর্জরিত। অনাথ অসহায়। এখনও তাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, কৈশোরেই অকাল বার্ধক্য। কবে কখন যে তাদের শৈশব-কৈশোরের রঙচঙে স্বপ্নের দিনগুলো হারিয়ে যায়, তারা টেরই পায় না। দু-মুঠো ভাত আর দু-টুকরো রুটির পেছনে ছুটেই দিন শেষ হয়ে যায়, না-ফোটা কুঁড়িগুলো আর ফোটে না। অকালেই ঝরে যায়। ফুটপাতে জুতো পালিশ, ট্রামে-বাসে লজেন্স ফেরি, বস্তা কাঁধে কাগজ কুড়ানো—সেই শৈশব আর কৈশোরকে পাঠক জীবন্ত দেখতে পান ভবানীপ্রসাদের লেখনীতে

চারদিকে লক্ষ লক্ষ শিশু যখন অনাহারে, অসুখে, অপুষ্টিতে দিন কাটাচ্ছে; রোগ-ব্যাধিতে পাচ্ছে না ওষুধ তখন মহা আড়ম্বরে পালিত হচ্ছে শিশু দিবস।শিশু দিবস যীশু বিবশ’, বাকাঁদছে শিশু জাতির যীশুছড়ায় কবি তুলে ধরেছেন সমাজ-জীবনের এই মিথ্যে চটক আর লোকদেখানো বাহ্যিক জাঁকজমকের ছবিটি। তখন বড়ো বড়ো স্লোগান-মুখরিত, নাদুসনুদুস শিশুর ছবিসহ মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে শিশুদিবস।সুস্থ শিশুই জাতির গর্ববলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হচ্ছে প্রচার; বিতরণ করা হচ্ছে দুধ, লেবু আর লজেন্স—মাত্র একদিনের জন্য। ছড়াকার ভবানীপ্রসাদকে এই ছলনা, এই কপটতা ক্রুদ্ধ করেছে। শ্লেষ বিদ্রূপে তীব্রতর উচ্চারণে কবি বলেন—

ধুঁকছে অযুত-নিযুত শিশু, মরছে বিনা পুষ্টিতে

শিশু দিবস করেই আমরা নাচছি আত্মতুষ্টিতে

লক্ষ শিশু গুমরে কাঁদে আমার হৃদয়-মন জুড়ে

তাদের হয়েই এই আবেদন, হবে কবে মঞ্জুর এ?’

(কাঁদছে শিশু, জাতির যীশু)

দেশ-কাল পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে কবি জড়িয়ে আছেন আষ্টেপৃষ্ঠে। তাই কখনও তিনি আনন্দে অধীর, কখনও ব্যথা-বেদনায় বিষণ্ণ, কখনও আবেগে আত্মহারা, আবার কখনও হতাশায় ক্ষোভে ক্রোধে ফেটে পড়েন। কবির সে অনুভব হৃদয় রসে সঞ্চারিত হয়ে পাঠককেও নাড়া দেয় বইকি। কবি যখন বলেন—

আমি ভালোবাসি সেই সাথীদের, যারা জীবনের দামে

পৃথিবীর বুকে জাগাচ্ছে আশা—অশ্রু-রক্ত ঘামে!

হলেও নিঃস্ব শপথে ভীষ্ম শোষিত বিশ্ববাসী

আমি তোমাদেরই জয়গান গাই, তোমাদেরই ভালোবাসি।

তখন পাঠকও সেই স্বর্গীয় ভালোবাসার পরশ পান আপন হৃদয়ে

তাই মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাননি তিনি। মানুষের প্রতি অগাধ আস্থা তাঁর। মানুষই তো পারে সমস্ত বাধা, সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে। মানুষই পারে অশুভ শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এগিয়ে চলতে। সেই লড়াকু মানসিকতাকে কবি-ছড়াকার জানান কুর্নিশ। তিনি জানেন মানুষই একদিন ছিনিয়ে আনবে জয়, গড়ে তুলবে এক স্বপ্নের পৃথিবী

দুনিয়াটা জাগছে

শোষিতেরা রাগছে

শোনো, ওই শোনো, বাজে জয়বাদ্য

আমাদের আটকাবে? আছে কার সাধ্য?

...

আশার আকাশটাকে আলো দিয়ে ভরাতে

কেটে যাবে কালো রাত

আছে এই দুটি হাত

আমরা ফোটাব ফুল জরা-ভরা ধরাতে

খুশির ঝরনা বুকে পারবোই ঝরাতে


অপার আশাবাদী ভবানীপ্রসাদের লেখনীতে তাই আশার সুর। জীবনের খোঁজেই তো তাঁর কলম ধরা। চেয়ে থাকা জীবনের দিকে। অপরাজেয় জীবন। অপরিমেয় তার প্রাণশক্তি। একদিন মেঘ যাবে সরে। রৌদ্রকরোজ্জ্বল প্রভাতে প্রাণচঞ্চলতায় ভরপুর শিশুকিশোরেরা হেঁটে যাবে জীবনের পথে পথে, হাসি-গান-কলতানে মুখরিত হবে পৃথিবীর আকাশ বাতাস—এ কবির স্বপ্ন, দৃঢ় আশাও বটে। তাই বার্তা ছড়িয়ে যান সম্প্রীতির, সংহতির। শোনান মিলনের গান। যুদ্ধ নয়, চাই শান্তি। শাসন-শোষণ-লাঞ্ছনা-বঞ্চনা নয়, চাই মানবতার জয়

সম্প্রীতি এক ফুলের নাম, মানবপ্রেমের মূলের নাম

হুলের ভয়, ভুলের ভয়, তাড়িয়ে দেয়

সংহতি এক মালার নাম, জীবনযাত্রা পালার নাম

সবার দিকেই প্রীতির দু-হাত বাড়িয়ে দেয়।

(সম্প্রীতি এক গান, সংহতি তার তান)


ছন্দ-তাল-মাত্রার নিখুঁত উপস্থাপন আর বিষয়বস্তুর সঙ্গে কল্পনার জাদু-বাস্তবতায় তাঁর ছড়া হয়ে উঠেছে অনন্য। সমাজ-জীবনের আনন্দ উৎসব মেলা প্রকৃতির রূপ রস গন্ধের আলোছায়া, মাস বছর ঋতুর নানা আঁকিবুকি যেমন নিপুণ দক্ষতায় তাঁর ছড়ায় ধরা পড়েছে তেমনি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জ্বালা যন্ত্রণা ক্ষুধা রোগ ব্যাধি দৈন্য জীবন জীবিকা—বাদ পড়েনি কিছুই, কিছুই এড়ায়নি ভবানীপ্রসাদের সন্ধানী দৃষ্টি। জীবনকে তিনি দেখেছেন চোখে ঠুলি পরে নয়, খোলা চোখে, খোলা মনে। একদিকে যেমন আনন্দের স্রোতধারায়, হাসিকৌতুক আর মজার রসে ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন তেমনি সমস্যাসঙ্কুল জীবনের বিচিত্র ঘাত, প্রতিঘাত, চলমান জীবনের রুক্ষ কঠোর বাস্তবতা কবির মনে তুলেছে আলোড়ন, জাগিয়েছে প্রশ্ন। মানুষকে, জীবনকে ভালোবেসেই কবি-ছড়াকার ভবানীপ্রসাদের ছড়া লেখা, আর সেই ছড়ায় ভবানী আঁকেন জীবনের ছবি

  

<