দেবাশীষ চিন্যা

ছবি - স্নেহাশীষ চক্রবর্তী  
  আমার জামাইবাবু









দেবাশীষ চিন্যা





 

আমার দিদির বিয়েতে প্রথম আলাপ এই রক্তমাংসের স্বনামধন্য মানুষটির সঙ্গে। পাত্র শ্রীমান ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। খুব সুন্দর চেহারা, একটু লজ্জা লজ্জা ভাব। বিয়ের আসর থেকে বাসরঘর—সবটাই উপভোগ করেছিলাম। বয়স তখন আমার খুব কম; বাসরঘরে থাকব, এটাই আনন্দ। প্রথম বাক্যালাপ—কোন ক্লাসে পড়ো?” উনি শিক্ষাকতা করেন, তাই শিক্ষকের মতন আমায় বললেন, “ভালো করে পড়াশোনা কোরো। বড়ো হতে হবে, অনেক বড়ো।

ইনি আমার জামাইবাবু

কবিতা আমার ছোটো থেকে ভালো লাগে। কবিতার টানে বহু কবির কবিতার সঙ্গে সঙ্গে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারেরও কবিতা পড়তাম। ওঁর কবিতার মধ্যে অদ্ভুত কৌতুক রস ছিল। সুনির্মল হাসির রসদ ছিল। আর এই কবিতার টানে আমার ছেলের যখন ছয় বছর বয়স, তখন ওকে নিয়ে একবার বাংলা আকাদেমিতে গিয়েছিলাম একটা কবিতার অনুষ্ঠানে। আর সেখানে ওঁর মুখে ওঁর কবিতা শুনে মোহিত হয়েছিলাম

ভবানীদার পরামর্শে আমার ছেলেকে ওঁর নাম দেওয়া একটা আবৃত্তি প্রতিষ্ঠানে ভরতি করেছিলাম যার নাম  ছিল শ্রুতিসৃজন

ভবানীপ্রসাদ মজুমদার এমন এক মহান ছড়াকার, যাঁকে ঘিরে থাকত পাহাড়-প্রমাণ স্তূপাকৃতি বই, পত্রিকা, স্মারক আর মানপত্র। তিনি সবসময় সাহিত্য সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন, তবুও হাসিমুখে বাক্যালাপ করতে ভুলতেন না। তাঁর বহু কবিতার মধ্যে আমাকে আকর্ষণ করেছে যে কবিতা তা হলনয়ারামায়ণী কথা’, ‘খোকার উক্তি জবর যুক্তি’, ‘আঙুল চোষার ফ্যাসাদ’, ‘কাগজের কেরামতি’, ‘জুতো কেনার ফ্যাসাদ’, ‘রঙ বদলের ব্যাপার-স্যাপার’, ভূত নিয়ে কবিতা, হাওড়া জেলা নিয়ে কবিতা। তিনি আবার সামাজিক কবিতাও লিখেছেন—যেমন, রক্তদান নিয়ে এত কবিতা লিখেছেন যে সেগুলো রপ্ত করে আমার ছেলে বহু রক্তদান শিবিরে গিয়ে কবিতা বলে মানুষকে সচেতন করেছে রক্ত দেওয়ার জন্য। ওঁর অনুপ্রেরণায় আজ আমার ছেলে একজন আবৃত্তিকার হিসেবে পরিচিত এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের স্নেহের ছোঁয়ায় ও আজ আকাশবাণীর RJ Arpan নামে স্বীকৃতি পেয়েছে

ভবানীদার একটা বিশেষ গুণ ছিল মুখে মুখে কবিতা সৃষ্টি করা। আমি যখন নতুন ওঁর কবিতার বই কিনতাম, তখনই উনি তাতে একটা করে ছড়া লিখে দিতেন নাম দিয়ে। অথচ এত গুণী মানুষটা ছিলেন প্রচারবিমুখ। একবার আমাদের ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে ওঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। আমরা সঠিক সময়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে পারেনি, কিন্তু উনি সেই জন্য কোনও বিরক্তি প্রকাশ পর্যন্ত করেননি। উনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রচেষ্টাটাকেই আমি সমর্থন করি।

কিশোর বার্তা পত্রিকা ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে এইভাবে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন বলে আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম আমার জামাইবাবুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে। আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম রইল ভবানীদার জন্য। উনি ওঁর লেখার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়ুন এবং এখনও দু-হাত দিয়ে আমাদের জন্য অজস্র লিখে আমাদের সকলের মন জয় করুন—ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি

  

<