ছবি - আভা সরকার মণ্ডল আমার প্রিয় ভবানীজেঠুকে যেভাবে দেখেছি
| | ‘ছাগলেতে কী না খায়/ কী না বলে পাগলে—’
ছড়া সম্রাট ভবানীপ্রসাদ
মজুমদারের লেখা ‘ছাগলের কাণ্ড’ ছড়াটি
ছোটোবেলায় আবৃত্তি করেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমার কন্যারা যখন খুব ছোটো
ছিল, এই ছড়াটা শোনালে হেসে গড়িয়ে পড়ত। ছড়া সম্রাটের
প্রত্যেকটি ছড়া শুধু যে আমাদের হাসায়, তা নয়—গভীরভাবে
ভাবায়ও। ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ ছড়ায়
তিনি দেখিয়েছেন তথাকথিত আধুনিক বঙ্গসমাজ নিজের মাতৃভাষাকে কীভাবে অবজ্ঞা করছে।
তাঁর কবিতা পড়ার সময় ভাবতাম যদি কখনও দেখা হত, খুব ভালো হত।
আমি জিজ্ঞেস করতাম, আপনি কলম হাতে নিলেই কি ছড়া মণিমুক্তোর
মতো ঝরঝর করে ঝরতে থাকে?
সত্যি-সত্যিই যে আমার
জীবনে সেই পরম ক্ষণ আসবে, তা ছিল আমার কল্পনার অতীত। কিন্তু
বাস্তবে তাই ঘটল; আমার স্বপ্ন সত্যি হল। ‘বিহানবেলা’ পত্রিকার সম্পাদক প্রিয় ভাই সুমন
বিশ্বাসের আন্তরিক আহ্বানে কবি সম্মেলনে গিয়েছিলাম গোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানেই
সস্ত্রীক এসেছিলেন ছড়া সম্রাট। তার পদধূলি পেয়ে ধন্য হলাম। সরল, নিরহংকারী মানুষটি কত সহজে আপন করে নিলেন। তাঁর দর্শন পেয়ে তাঁকে জানার,
পড়ার আগ্রহ প্রবল হল। জানলাম, তিনি কুড়ি হাজার
ছড়ার জনক, একশোর বেশি পুরস্কারে পুরস্কৃত। তবুও এতটুকু
অহংকার নেই। আসলে তিনি যে মানুষ গড়ার কারিগর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের
দায়িত্ব পালন করেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়েছেন।
এরপরে আমার জীবনে ঘটল আরও
একটি বিস্ময়কর ঘটনা। আমি তখন গল্প, ছড়া লিখছি
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে প্রথম গল্পের বই ‘আহ্লাদী’ প্রকাশিত হয়েছে। ছোট্ট বন্ধুদের আবদারে
আবারও একটি বই প্রকাশ করতে চলেছি। প্রকাশকের অফিসে এসেছিলেন ছড়া সম্রাট। সেখানেই
আমার গল্প পড়েন এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভূমিকা লিখে দেন যা আমার জীবনের পরম
প্রাপ্তি।
বর্তমানে তিনি অসুস্থ। আমি
পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করি আমার প্রিয় ভবানীজেঠু সুস্থ হয়ে উঠুন। তাঁর লেখা
ছড়ার ফুলের সুগন্ধে আমরা আমোদিত হই।
এখানে আমার লেখা ছোটোদের
গল্পগ্রন্থ ‘জারোয়াদের দেশে পিকু’-র ছড়া সম্রাট ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা ভূমিকার ছবি তুলে পাঠালাম।
ভবানীজেঠু ও জেঠিমার চরণে
আমার লেখা ছোট্ট ছড়ার ফুলে অঞ্জলি দিলাম।
ছড়া সম্রাট ভবানীপ্রসাদ শানপুরের ছেলে, তাঁর মতো বিস্ময় প্রতিভা হাওড়া জেলায় মেলে।
বাবা ছিলেন নারায়ণচন্দ্র মাতা নিরুপমাদেবী, পুত্র তাঁদের ছোটো থেকেই ছিল মানবসেবী।
কুড়ি হাজার ছড়ার জনক ‘সবুজবুড়ো’ তিনি, ছদ্মনামের মাঝেও তাঁকে আসল নামে চিনি।
ভালো থাকুন জেঠু-জেঠিমা প্রণাম করি পায়, বায়না আছে একটি আমার ছড়ার ফুল চাই।
স্নেহধন্যা— সবিতা বিশ্বাস
<
|