ছড়া - কবিতা ২ । অগ্রহায়ণ ১৪৩১




    আহা মিষ্টি!











মনিভা সাধু

হুগলি, পশ্চিম বঙ্গ



 

এ বঙ্গের বিভিন্ন স্থানের বিখ্যাত মিষ্টির কথা জানতে চাইলে-

যেটুকু স্মরণে আসে বলি, মন দিয়ে শোনো সকলে।

শুনতে শুনতে জিভে জল এলে, নিও সামলেসুমলে।

চিনি বা গুড়ের রসে টইটম্বুর স্পঞ্জ রসগোল্লা খেতে হলে-

শিগগীর যাও কলকাতার বাগবাজারে, বেশি কথা না বলে।

অকৃত্রিম সীতাভোগ মিহিদানার স্বাদ পেতে গেলে-

ট্রেনে,বাসে,গাড়িতে,সাইকেলে, হেঁটে, যা-হোক করে-

একা,সবান্ধবে কিংবা সপরিবারে বর্ধমানে যাও চলে।

রঙচঙে দরবেশও পাবে যেনো ও-ই বর্ধমানের দোকানে।

কাটোয়ার নরম, গরম, তুলতুলে ছানার জিলিপি নাও তুলে-

মুখে ফেলে দিলেই এক্কেবারে পেটের অন্দরমহলে।

বীরভূমের সিউড়িতে হরেক রকম মোরব্বার দেখা মেলে।

শক্তিগড়ের ল্যাংড়া কারিগরের নাম অনুসারে-

লম্বাটে বাদামী রঙের অমৃততুল্য ল্যাংচা একবার খেলে-

জগত সংসার সব যাবে ভুলে, নৃত্য করবে দু-হাত তুলে।

রসকদম্ব আর কানসাটের আসল স্বাদ পেতে হলে-

মালদহে যেতেই হবে তড়িঘড়ি কিংবা দুলকিচালে।

রামপুরহাটের রসমালাই, জয়নগরের মোয়া, আহা! আহা!

কৃষ্ণনগরের সরভাজার সাথে লোভনীয় সরপুরিয়া-

এরপর নবদ্বীপের লালদই আর রানাঘাটের পান্তুয়া।

ভাবলেই দিল খুশ, এ-সব এই বঙ্গেই যায় পাওয়া।

এখানেই শেষ নয়, শুনে যাও, অযথা দিও নাকো বেশি তাড়া।

বাঁকুড়ার ছাতনার প্যাড়া, জনাইয়ের মন হরণ করা মনোহরা,

বহরমপুরের ছানাবড়া খেলে হবে চক্ষু ছানাবড়া!

যত খাবে হবেই দিশাহারা! পাবেনা কোনো কুলকিনারা!

এবারে স্বদেশ বিদেশ ঘুরে চলে এসো সন্দেশের দেশে!

চন্দননগরের জলভরা সন্দেশ নয়তো গোপনে গোপনে-

হুগলির গুপ্তিপাড়ার গোঁফ ছাড়া গুপো সন্দেশে!

মেচা বা ম্যাচা সন্দেশের জন্মস্থান বাঁকুড়ার বেনিয়াতোড়ে।

ছানা হীন লাল হলুদ বোঁদে তো ইচ্ছে হলেই মিষ্টির ভান্ডারে,

কিন্ত ধবধবে সাদা বোঁদে খাওয়ার সাধ হলে সিধে রাস্তা ধরে-

চুপিচুপি চলে যেও, শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণর জন্মস্থান, কামারপুকুরে।

গন্ডা গন্ডা মণ্ডামিঠাই খেতে চাইলে যেতে হবে কোচবিহারে-

সেথায় নানান লাড্ডুর রমরমা, বানায় মিষ্টির কারিগরে।

মতিচুরের লাড্ডুর আসল স্বাদ কেবলমাত্র বিষ্ণুপুরে-

পঞ্চকোট রাজার প্রিয়, কস্তার লাড্ডু মানভুমের কাশিপুরে।

এখনো অনেক লম্বা ফর্দ, তালিকার শেষ হয় না যে রে!

বাঙালির ভান্ডারে রাজ্যের মিষ্টদ্রব্য আছে থরে থরে!

শুকনো মিষ্টি, ভেতর ফাঁপা কদমা পাবে বর্ধমানের মানকরে,

সুস্বাদু কমলাভোগ মাদারিহাটে, আলিপুরদুয়ারে।

নিখুঁত নিখুঁতি সাজানো আছে নদীয়ার শান্তিপুরে।

প্যাঁচালো জিলিপির দেখা পাবে যেকোনো রথের মেলাতে,

শুধুমাত্র মুগের জিলিপি কেশপুরে আর ডেবরাতে,

ইচ্ছে হলেই খেতে পারো সাতসকালে বা রাত-বিরেতে!

এবারে গুড়ি গুড়ি হামাগুড়ি দিয়ে শিলিগুড়ির ফুলবাড়িতে-

খানকয়েক লালমোহন খেলে উদর ভরবে পরম তৃপ্তিতে।

জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের জঙ্গলে যায় সব বেড়াতে,

ওদিকেই বেলাকোবায় বিশাল চমচম দারুণ খেতে।

জঙ্গল থেকে নেমে দীঘার সমুদ্রে ঝটপট স্নান সেরে-

কাঁথির কাজুবরফির স্বাদ নিয়ে এদিকেসেদিক ঘুরে-

ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা চেখে দেখে ফিরে যাও ঘরে।

এতো কিছুর পরেও যদি মন আরও খাই খাই করে-

টাকাপয়সা যা আছে থলেয় ভরে, বেরিয়ে পড়ো ঘর ছেড়ে,

খুঁজেপেতে ঢুকে যাও মিষ্টির দোকানে, খেয়ে যাও পেটপুরে!