তোমাদের পাতা - গল্প । কার্তিক ১৪৩১

 বল খুঁজতে ঘন জঙ্গলে 










সমাদৃত দাস
অষ্টম শ্রেণি
গোরাবাজার ঈশ্বর চন্দ্র ইনস্টিটিউটশন (আই. সি. আই)
তালবাগান পাড়া, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ





 

স্কুল থেকে ক্রিকেট খেলতে যাওয়া আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। স্কুল থেকে বাড়িতে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে কোনোরকম খাওয়া দাওয়া করে দৌড়ে মাঠে চলে যাই। প্রতিদিনের মতন আজও স্কুলের ছুটির ঘণ্টার পড়ার সাথে সাথেই দৌড়ে বাড়ি চলে এলাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাত মুখ ধুয়ে খাওয়া দাওয়া করে মাঠে খেলতে চলে এলাম।

আমরা মোট ছয় জন খেলি আমি, অর্ঘ্য, পিকু, অরিন্দম, রাজ, শ্রেয়ম। টসে জিতে আমি আর অর্ঘ্য ব্যাটিং করতে নামলাম। ক্রিকেট খেলাতে আমার ব্যাটিং (নিজেই নিজের ঢাক পেটাচ্ছি বলে কিছু মনে করোনা) আর পিকুর বোলিং এই দুটো হল এইখানকার খেলার মূল বৈশিষ্ট্য। যখনই আমার ব্যাটিং আর পিকুর বোলিং শুরু হয় তখনই অনেক মানুষেরই ভিড় জমতে শুরু করে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি স্ট্রাইকার পয়েন্ট নিলাম আর অর্ঘ্য নন-স্ট্রাইকার পয়েন্ট নিল। পিকু রানিং বল করতে ধেয়ে এল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ফার্স্ট বল এত স্পিড করল যে লাইন এবং ট্র্যাক অন্য দিকে চলে এবং বলটা ওয়াইড হয়ে গেল। অর্থাৎ আমরা জিরো বলে এক রান পেয়ে গেলাম। এটা দেখে পিকু বাঁদরের মতন দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠল। এই দৃশ্য দেখে হাসি পেয়ে গেল। যাইহোক পরের বল করতে এল পিকু, মারাত্মক স্পিড বল। যাকে বলে ওভার বাউন্স অ্যাটাক। আমিও ছাড়লাম না কষিয়ে একটা শট মারলাম। বলের এতটাই স্পিড ছিল এবং আমিও রাগে এতটাই জোরে মেরেছিলাম যে বল সোজা গিয়ে মাঠের শেষ প্রান্তের জঙ্গলে গিয়ে পড়ল। এবার সবাই চিৎকার করে উঠল ছক্কা! ছক্কা বলে। কিন্তু এইদিকে যে একটা বিপদ ঘটে গেল। বল যেহেতু জঙ্গলে গিয়ে পড়ল তাই কেউই আনতে যাবে না। আমাকেই যেতে হবে ওই জঙ্গলের মধ্যে। তারপরে সবাই আমার কাছে চলে এল। যা তুই বল আন, আমিও নাছোড়বান্দা। আমি বলে উঠলাম, "আমি যেতে পারি কিন্তু আমার সঙ্গে একজন কে যেতে হবে।"

স্বাভাবিক আমি বল ফেলেছি তাই আমাকেই যেতে হবে। এইদিকে তর্ক-বিতর্ক করতে করতে সন্ধ্যা হতে চলল। একে সাপখোপের উপদ্রব তারপরে তেনাদের (ভূতেদের) আবির্ভাব। কিন্তু বল না আনলে ওরা আমাকে ছাড়বে না, মাকে বলে দেবে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমার ক্রিকেট ব্যাট টা নিয়ে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জঙ্গলটা একদম মাঠের শেষের দিকে।

আমি দৌড়াতে লাগলাম। কারণ হেঁটে যেতে গেলে পনেরো মিনিট লেগে যাবে। দৌড়াতে দৌড়াতে কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলাম জঙ্গলে। জঙ্গলে প্রবেশ করতেই গা টা বেশ ছম ছম করে উঠল। সারা শরীরের মধ্যে শিহরন খেলে গেল। জঙ্গলের আরো একটু গভীরে গেলাম। কিন্তু বল বলে কোনো বস্তু চোখে পড়ল না। এবার আমার বেশ ভয় হতে লাগল। জেদের বশে চলে এসেছি কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে এইবার বেশ ভয় ভয় লাগছে। আচমকা একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। এ নিশ্চয়ই তেনাদের হাসি। পাগুলো ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল। ক্রিকেট ব্যাটটা হাত থেকে পড়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম, "মা!মা!" বলে।

ঘুম থেকে উঠে খাটে বসে পড়লাম। ওহ! এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। জোরে জোরে নিশ্বাস প্রশ্বাস নিতে লাগলাম। একটু জল খেলাম। মায়েরও ঘুম ভেঙে গেল। কিছু বললেন না। আসলে স্বপ্ন তো সবারই হয়। আবারও লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎই ঘড়ির দিকে চোখ গেল এখন তো ভোরবেলা। শুনেছি ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।