দিলীপ পাল

                                                                                                                                                                                                                      ছবি - রাহুল মজুমদার

  আত্মমর্যাদার শিক্ষা দেন          আমাকে ছড়া শিক্ষক









দিলীপ পাল





 

ছড়া-কবিতায় ভবানীপ্রসাদ মজুমদার বর্তমান সময়ের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি জন্মেছেন ৯ই এপ্রিল ১৯৫৩। একবিংশ শতকের বাংলার প্রথম সারির একজন ছড়াকার। প্রায় কুড়ি হাজারের উপর তাঁর ছড়া-কবিতা। হাওড়া জেলার জগাছা থানার দক্ষিণ শানপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এখন হাওড়া শহর বলা যায়। দাশনগর রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া যায়। শানপুর কালীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। পরে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছোটোদের উপযোগী মজার ছড়া এবং ছড়া গড়ার পরীক্ষানিরীক্ষা তিনি নিরন্তর চালিয়ে যান। তিনি রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ রায়কে নিয়েও ছড়া লিখেছেন। আধুনিকতায় সুখপাঠ্য করার জন্য শিশুরা কী চাইছে তা সন্ধান করেন। ছড়ার মধ্যে দিয়ে তুলে এনেছেন সামাজিক চেতনা। তাঁর বিখ্যাত ছড়াআ মরি বাংলা ভাষা’, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না

সাঁতরাগাছিতে আমার কর্মস্থল হওয়ায় তাঁর শানপুরের বাড়িতে আমি তিনবার যাই। প্রথমবার ছড়াকার বাসুদেব দাসের সঙ্গে। বেশ কিছু মঞ্চে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি। অতীব বিনয়ী ছোটো ছোটো বাক্যে সংক্ষেপে কথা বলেন। স্ত্রী পদ্মা মজুমদারও বেশ দিলখোলা মানুষ। ঘরে সম্মানের পদক-চিহ্ন ডাঁই হয়ে আছে, রাখার জায়গা নেই। তাঁর দীর্ঘদিনের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকায় বাইরের উৎসব অনুষ্ঠানে সব জায়গায় যেতে পারেন না। একবার পলাশী উৎসবে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন এবং আমার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁকে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেইদিন উনি অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য আর যেতে পারেননি। তারপরে দুর্যোগ নেমে আসে তাঁর জীবনে। পায়ের সমস্যা। চিকিৎসা শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী তার একটি পা কাটতে হয়। বর্তমান সময়ে তিনি ঘরেই ছড়া-কবিতার সঙ্গে বিচরণ করেন।শব্দসেনাপত্রিকার  একটি অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেনসুকান্ত সম্মানপ্রদান করবার জন্য। সেই অনুষ্ঠানেও তিনি আসতে পারেননি। পরে একদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে অর্থ-সাম্মানিক সহ মিষ্টি পৌঁছে দিয়ে আসি। সেই অনুষ্ঠানটি ছিল সাঁতরাগাছি পাখিরালয়ে। করোনার ঠিক আগে আমরা ছড়া বইয়ের ভূমিকা লিখবার জন্য দিয়ে আসি। কিন্তু মহা আতঙ্কের তিন বছরে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। কোথায় রেখেছেন পাণ্ডুলিপি, মনে রাখতে পারেননি। তিনি বাংলা ভাষার প্রতি যথেষ্ট সচেতন। তিনি ভারতভূমির ও বাংলাদেশের একজন কবি-ছড়াকার শুধু নন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর ছড়া-কবিতার গ্রহণযোগ্যতা অপরিসীম। বাস্তব বোধে সমাজ চিত্র তিনি তুলে ধরেন। এমন একটি মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য নিজেকে ধন্য এবং গর্বিত মনে হয়। তাঁর মতো শিক্ষক সমাজকে শিক্ষা দেন

  

<