তারপর পিসি খালি পূজা
পার্বণ নিয়ে ব্যস্ত। অনেক জমি জমা, ফলাদীর গাছ। পিসির অনেক টাকাও। কিন্তু পিসি খরচ করতে রাজী
না। তিনি টাকা ভালোবাসেন, ফল ও। বাচ্চাদের ফল পাড়তে দেখতে পিসি বকা ঝকা করেন।
বাচ্চারা কষ্ঠ পায়। সারা গ্রামের সব বাচ্চারা কষ্ট পায়। টসটসে পেয়ারা, পাকাঁ আম, আমলকি, জামরুল সব পেকেঁ গাছে বসে থাকবে। গ্রামের ছেলেরা খেতে পারবে
না! একদিন দোকানদাররা সব গাছ খালি করে সমস্ত ফল বাজারে নিয়ে যাবে, এটা কষ্টের বিষয়। সব ছেলেদের জন্য কষ্টের।
তা ই এ বা র ল ক্ষী পূ জো য় -
সিদ্ধান্ত পাকাঁ। লক্ষী পূজোয় অর্থ্যাৎ কোজাগরী পূর্ণিমার
রাতে ফল ফলাদি, আদা হলুদ এসব চুরি করলে লক্ষী
রাগতো করেন না-ই বরং খুশী হন। শাস্ত্রে কি বলেছে কে জানে আমাদের বলাবলি শেষ।
গৌতমদের কাপড় রোদে দেয়ার বিশাল নাইলনের দড়ি সন্ধ্যের পর গৌতম নিয়ে আসবে। দরকার হলে
বিকাশ, সঞ্জীব ও দড়ি আনবে। ভেতর
সামলাবো আমি আর সঞ্জীব। বাহির সামলাবে বিকাশ আর গৌতম। কারন বিকাশ ভালো গাছ চড়তে
জানে। আর গৌতম দৌড়ে সব সময় ফার্ষ্ট হয়। আজকে আমরা সাকসেসফুল হবো। বাকী মা লক্ষীর
আশীর্বাদ।
ম ন্টি পি সি র না র কে ল গা ছ -
আশপাশের যে কোন গ্রাম থেকে মন্টি পিসির নারকেল গাছটা দেখা
যায়। এ গাছটা নারকেল গাছদের লিডার। এতো উচু যে ভয়ে কেউ এ গাছে চড়তে চায় না। ফলও
দেয় প্রচুর। বছরে একবার পিসি বাইরের লোক দিয়ে সেই গাছ পরিষ্কার করান আর গাদা গাদা
নারকেল নামিয়ে বিক্রি করেন। কারো ভাগ্যে এ গাছের একটা নারকেল বা ডাব জোটে না। তা
হইলে এ গাছ লইয়া আমরা কি করিব। এরকম বাক্য প্রথমে বেরিয়েছিলো গৌতমের মাথা থেকে।
শেষে প্রোগ্রাম ফাইনাল। আজ কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে মা লক্ষীর আশীর্বাদে “অপারেশন
কোজাগরী পূর্ণিমা” সাকসেসফুল করার চেষ্টা করবে এই চার বাহাদুর।
বা হা দু র দে র বা হা দু রি -
সন্ধ্যের পরপর তিথি অনুযায়ী পূজো শেষ। নিজেদের বাড়ীর প্রসাদ
খেয়েই চারজন একত্র হই শ্মশান কালীর মাঠের কাছে। বিশাল চাঁদ পুরো আকাশ আলো করে মাঝ
আকাশের দিকে রওয়ানা দিয়েছে। নাইলন এর দড়িও চলে এসেছে। আমি আর সঞ্জীব মন্টি পিসির
বাড়ীর দিকে যাত্রা করি। বিকাশ আর গৌতম সোজা যাবে পিসির নারকেল তলায়। আমরা দু’জন
পিসির কাছ থেকে প্রসাদ থেতে ঘরে ঢুকলেই বিকাশ গাছে উঠবে। গৌতম দূরে আড়ালে ধান
ক্ষেতে বসে থাকবে ঘাপটি মেরে। বিকাশ নারকেল গাছের মাথায় নাইলন দড়ি বেঁধে ছেড়ে দেবে। এক প্রান্ত ধান
ক্ষেতে বাশেঁর খুঁটির সাথে বেধেঁ রাখবে গৌতম। বিকাশ দু’টো নারকেল ছিড়ে বেধেঁ
ঝুলিয়ে দেবে দড়িতে। নারকেল নিজের বলে যাবে ধান ক্ষেতে।
অতএব....।
প্র সা দ খে তে পি সি র ঘ রে -
মন্টি পিসিকে উঠোনেই পেয়ে যাই আমরা। পিসি কল্পনাই করতে
পারবে না তার এই লম্বা নারকেল গাছে গ্রামের কেউ চড়তে পারবে। সঞ্জীব হাক ছাড়ে-
কি গো পিসি প্রসাদ হবে না?
হবে বাপু হবে।
তা দাও গো। তোমার এখানে খেয়ে আরো অনেক জায়গায় প্রসাদ খেতে
যাবো। পিসি আমাদের নিয়ে ঘরে ঢুকেন তারপর নারকেল এর নাড়ু, তিলের নাড়ু, মুড়ি ও চিড়ের মোয়া আর ফলের টুকরো প্লেটে বেড়ে দেন। আমরা
আস্তে ধীরে খেতে থাকি। সময় নষ্ট করি। পিসির কি সন্দেহ হয়? পিসি বলেন-
তোরা প্রসাদ খা। আমি একটু বাইরেথেকে ঘুরে আসি। আদা-হলুদ না কেউ হাপিস করে দেয়।
আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করি। পিসি বাইরে চলে যান।
হট্টগোল,
হুলোস্তুল আমার সর্বনাশ করে ফেল্লো রে।
পিসির চিৎকারে বুঝি কম্ম সারা। ফল শেষ করে তিলের নাড়ুটার
খালি কামড় দিয়ে এ সময় পিসির চিৎকার। মোয়াগুলো পকেটে ফেলে দু’জন দৌড়ে বাইরে আসি।
আমার সব হলুদ শেষ। চোরের দল সব শেষ করে দিল।
আমরা ও হৈ চৈ করে উঠি।
ধর ধর ...............
বাচ্চা বাচ্চা চোরেরা দৌড়ে পগার পাড়। বেশী সর্বনাশ করতে
পারে নাই। গোটা পাঁচেক আদা আর গোটা তিনেক হলুদের গাছ তুলেছে।
টেনশন করো নাতো পিসি। লক্ষী পূর্ণিমার রাতে ওরকম আদা হলুদ
একটু আধটু চুরি হয়েই থাকে। এতে লক্ষী খুশী হন।
হলুদ থেকে বের হতে হতে সঞ্জীব পিসিকে বুঝায়।
তোকে বলেছে। কঠিন ঝাড়ি পিসি সঞ্জীবের উদ্দেশ্যে।
না র কে ল দে র ধা ন ক্ষে ত যা ত্রা
উঠোনের পূর্ব পাশে নারকেল গাছ তলায় এসে উপরের দিকে তাকাই।
এক জোড়া নারকেল গাছের আগা থেকে ধান ক্ষেতের দিকে যাত্রা করেছে। বিকাশ কাজ চালাচ্ছে
পুরোদমে। আমরা ওদিকে তাকাই না। কিন্তু হঠাৎ করেই পিসির চোখে পড়ে যায়। চিৎকার করে
উঠেন মন্টি পিসি। আমরা চমকাই
কি গো পিসি কি হলো।
ঐ দেখ........
আমরা তাকাই, আর একজোড়া নামছে।
ওরে তোরা কে কোথায় আছিস। আমার নারকেল সব শেষ। ভয়াবহ
চিৎকার করে উঠেন মন্টি পিসি। আমরাও চিৎকারে যোগ দেই। অন্য ঘরের সব লোকজন দৌড়ে আসে।
কি গো কি হলো।
নারকেল নেমে গেলো ঝুলতে ঝুলতে। আমি স্পষ্ট দেখলাম।
কি বলছো পিসি। কই কিছুই তো দেখছি না। আমি আড় চোখে গাছের উপর দিয়ে তাকাই। অনেক উচু। বিকাশকে দেখা যায় না। চাঁদের
আলোয় নাইলনের চিকন দড়িও চোখে পড়ে না।
আমার মনে হয় তুমি ভুল দেখেছো পিসি। তোমার বয়স হচ্ছে
তো। অনিমাদি পিসিকে বুঝাতে চেষ্টা করে। আর ঠিক তখনি আরো
একজোড়া দড়ি দিয়ে সড় সড় করে নামতে থাকে ধান ক্ষেতের দিকে।
ওরে বাবা ভূউউউত ভূত.... চিৎকার করে উঠে বাচ্চারা। আমরাও
দৌড়ে মন্টি পিসির বাড়ী থেকে বাইরে চলে আসি।
অ ব শে ষে কা ন্ড হ লো এ ই -