| | ডঃ এ. মুখার্জী এম. ডি.। না আর কিছু না। পাতা ভরা ডিগ্রির মিছিল নেই। বিদেশি ইউনিভার্সিটির কোনো ঝকঝকে অলংকার নেই। কিন্তু এই শহরের মানুষের কাছে প্রায় ভগবানের মত। পেশেন্ট মনে করে একবার ডঃ মুখার্জীর কাছে দাঁড়াতে পারলেই অর্ধেক রোগ গায়েব। মধ্য চল্লিশের ডাক্তারবাবুর পেশেন্ট ভিজিট করতে গিয়ে এখন প্রায় নাওয়া খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না।
নাম লেখাতে গিয়ে অ্যাটেনডেন্টও হিমশিম খেয়ে যায়। ডাক্তারবাবু যে ক’জন রোগী দেখতে
চান প্রায় প্রতিদিন তার চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে, আর বেচারি
অ্যাটেনডেন্ট রোজ বকা খাচ্ছে। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ডাক্তারবাবু
চেম্বারে বসেন ১১টা নাগাদ। কিন্তু পেশেন্ট আসতে শুরু করে ভোর দুটো, আড়াইটে থেকে।
শহরকে কেন্দ্র করে প্রচুর গ্রাম। ডাক্তারবাবুর অধিকাংশ রোগী গ্রামের গরীব মানুষ।
যে তুলনায় নাম যশ ছড়িয়েছে, ভিজিট সে তুলনায় অনেক কম। ইচ্ছে করলেই বাড়াতে পারেন,
কিন্তু গরীব মানুষদের কথা চিন্তা করে ভিজিট বাড়ান নি। ঘড়িতে তখন প্রায় চারটে
বাজব বাজব করছে। ডঃ মুখার্জী ক্লান্ত, অবসন্ন। শরীর আর নিচ্ছে না। বিশ্রাম চাই,
নিরবচ্ছিন্ন, দীর্ঘ এবং শান্ত একটা বিশ্রাম। এমন সময় অ্যানেডেন্ট ছেলেটি
চেম্বারে ঢুকল। ‘-আবার কী হল?’ একটু বিরক্ত হয়েই ডঃ মুখার্জী বললেন। ‘-আর ক’জন আছে?
আমাকে এবার বিশ্রাম নিতে হবে। তার আগে এক কাপ কড়া চা দরকার। ভেতরে খবর দাও।’
‘-স্যর, আপাতত এ’বেলায় কেউ নেই। শুধু একজন বয়স্কা মহিলা, কোনো কথা শুনতে
চাইছে না। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে। কী হয়েছে, কিছুই বলছে না,
শুধু আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে, একেবারে নাছোড়বান্দা।’ ‘-ঠিক আছে, পাঠিয়ে দাও।’ একটু চিন্তিত হয়ে ডঃ মুখার্জী অপেক্ষা করতে
লাগলেন। শরৎকাল। শেষ বিকেলের মোলায়েম রোদ ঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে তেরছা
ভাবে যেখানে পেশেন্ট বসে, সেই চেয়ারে পড়েছে। এমন সময় দেখলেন, খুব
কুন্ঠিতভাবে দরজা ঠেলে একজন বয়স্কা মহিলা ঢুকছেন। দেখে মনে হলো ৬০ এর উপর বয়েস।
খুব ধীরে ধীরে এসে দাঁড়াল। ‘-বসুন।’ বলে মহিলার মুখের দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলেন। ‘-তুমি, তুমি বউমা না?’ আশা-নিরাশায় ভারাক্রান্ত মহিলার মুখটা টিউব
লাইটের মত আলোয় ভরে উঠলো। একই সঙ্গে অধিকমাত্রায় বিস্মিত হয়ে উঠলো। ‘-অনিবাবা, তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ? এতোদিন পর তুমি
চিনতে পারলে, আমি যে ভাবতেই পারছি না। কেমন আছো বাবা? কতযুগ পর
তোমাকে দেখলাম।’ এক নিঃশ্বাসে এতগুলো কথা বলে, ডঃ মুখার্জীর
বউমার চোখ দিয়ে ততক্ষণে দরদর করে জল পড়তে শুরু করেছে। ডঃ এ. মুখার্জী অর্থাৎ
অনুরাগ মুখার্জী নিজের চেয়ার থেকে উঠে মহিলার মুখোমুখি। ‘-কতদিন পর তোমাকে দেখলাম বউমা। এতদিন কোথায় ছিলে? কী হয়েছে তোমার?
ঠিক আছে, এখন এ’সব কথা থাক। চলো, আমরা ভেতরে যাই।’ বলে মহিলার হাত
ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন। যেতে যেতে কত
কথা, কত ঘটনা মনে পড়তে লাগলো। বড় অদ্ভুত আমাদের এই মন। স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছে সে
আজ কত বছর হয়ে গেল। প্রথম প্রথম খুব মনে পড়তো। আর মনে পড়লেই মন খারাপ হয়ে যেত।
কান্না আসতো, মনে হতো ছুটে চলে যাই বউমার কাছে। তারপর মেডিকেল কলেজে
ভর্তি হওয়া। কালের নিয়মে ধীরে ধীরে বউমার স্মৃতি ফিকে হয়ে এসেছিল। তারপর এই
সুদীর্ঘ কালের মধ্যে বউমাকে আর মনে পড়েনি।অথচ বউমা না
থাকলে সেই সময়গুলো পার হওয়া যে কত কঠিন হতো সেটা অনু খুব ভালো করেই বোঝে।
এই যেআজ এতদিন পর দেখা হল, অমনি দুয়োরটা, না শুধু দুয়োর নয়, বোধহয়
সিংহদুয়োর বলাই ভালো, এখন হাট করে খুলে গেল।
হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল অতীত। মা মারা গিয়েছিলেন, অনুরাগ তখন খুব
ছোট। মায়ের চেহারা ভালো করে মনেও পরে
না। আবছা একটা অবয়ব, আবছা কিছু ঘটনা, যেন মনে হয়, এ’জন্মে নয়,
আগের জন্মে ঘটেছিল। অনুর বাবা কিন্তু আর বিয়ে করেন নি। একজন ভালো কাজের মহিলা
পেয়েছিলেন, মানে আগে থেকেই অনুদের সংসারে ছিলেন, যার ফলে চাকরি
করার পরেও অনুকে দেখাশোনা করতে পেরেছিলেন। আত্মীয়-স্বজন বিয়ে করার জন্য বলেছিল,
সবার ক্ষেত্রেই যেমন বলে, তারপর আর খোঁজখবর নেয় না, সেই রকম আর কি।
যাই হোক শত প্রলোভনেও অনুর বাবা, ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি। অসুবিধা হতো,
অনুকে নিয়েই বেশি অসুবিধা হতো, তবু ও’পথে পা বাড়াননি। নানাদিক দিয়ে চেষ্টা করেছেন মায়ের অভাব
পূরণ করতে। সবটা না হলেও কিছুটা তো নিশ্চয়ই পেরেছিলেন। একটু একটু করে বড় হচ্ছিল
অনু আর অনুর বাবার চিন্তাও সমানুপাতিক হারে বেড়ে যাচ্ছিল। অফিস থেকে বাড়িতে ফিরতে
বেশ রাত হয়ে যায়। গৃহশিক্ষক রাখা হয়েছিল। কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলারও সময় পান না।
অত রাতে এসে, ছেলেকে নিয়ে পড়াতে বসার পরিস্থিতিও থাকে না। এইরকম সময়ে অনু
যখন ক্লাস সিক্স তখন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করে দিলেন। ওখানকার
হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করবে। এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনুর বাবা অনুপবাবুকে
অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে। মা মরা একমাত্র ছেলে, তাকে কাছ ছাড়া
করে ঠিক করছেন তো? ছেলেকে ছেড়ে তিনি নিজেও কী ভালো থাকতে পারবেন। এইরকম নানা
প্রশ্নে জর্জরিত হয়েছেন। তারপর মিশনের সুনাম, এবং ছেলের
ভবিষ্যত, এই দু’টি পজেটিভ দিক তাকে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের পিছনে
সিলমোহর দিতে বাধ্য করে। কিন্তু আরও ছিল। অনু আক্ষরিক অর্থেই এক গ্লাস জল গড়িয়ে কী
করে খেতে হয় জানতো না। শিলামাসি দিনরাত ওদের বাড়িতেই থাকতো, ফলে অনুর সমস্ত
কাজ তার দায়িত্বেই ছিল। মা মরা ছেলে বলে, আদরের পরিমাণটাও একটু বেশি ছিল। সংসারের কাজকর্ম
কিছু কিছু শেখা দরকার সেটা কেউ অনুভব করেনি।
(দুই) অনু যখন হোস্টেল জীবনে প্রবেশ করলো, তখন মাঝ সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়ার মত অবস্থা।
কোনোকিছুই করতে পারত না। সত্যি বলতে কি কিছু করার সাহসটাই ছিল না। একা একা মুখ
লুকিয়ে কাঁদতে হত। সেই সময়েই ওর জীবনে বউমা এসেছিল। বউমা ওদের হোস্টেলের একজন
কর্মী ছিল। ছেলেরা এমনকি অন্যান্য কর্মচারিরাও বউমার প্রকৃত নাম জানতো না। সম্ভবত
স্যর জানতেন, অর্থাৎ হোস্টেল সুপার। বউমা নামে সকলেই ডাকতে ডাকতে ওই
নামটাই স্বাভবিক হয়ে যায়। ওর যে একটা নাম থাকতে পারে এটা কারোর কোনোদিন মনে হয়নি।
সেই বউমা অনুকে আস্তে আস্তে সব কিছু শেখাতে শুরু করে। বলতে গেলে মায়ের স্নেহ দিয়ে
সব সময় আগলে রাখার চেষ্টাও করত। বেঁচে থাকতে গেলে যা যা করতে হয়, সেসব কিছু
বউমার কাছেই শেখা। এমন কি অনুর কখনো জ্বর-জ্বালা হলে সারারাত জেগে সেবাও করেছে
বউমা। অন্যান্য ছাত্রদের মত মুখে ডাকতো বউমা, কিন্তু মনে মনে
জানতো মা। যেহেতু অনুর মা ছিল না, তাই বউমা, ওর অজান্তেই কখন যেন মা হয়ে গিয়েছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষা
পর্যন্ত টানা ৬ বছর বউমাও অনুকে নিজের ছেলের মত ভাবতে শিখে গিয়েছিল। কাজের ফাঁকে
ফাঁকে অনুর দিকে নজর রাখত। কখন কী দরকার সব মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েকবার বউমা
অনুকে ওদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছে। অবশ্যই হোস্টেল সুপার স্যরের অনুমতি নিয়ে।
এবং অনুই একমাত্র জেনেছিল বউমার প্রকৃত নাম। বউমার নাম ছিল কাজল। কিন্তু অনু ওই
নাম কখনো কাউকে বলেনি। অনু সেসময় ভাবতো যখন ওর পড়া শেষ হয়ে যাবে তখন বউমাকেও ওর
সঙ্গে ওদের বাড়ি নিয়ে যাবে। তাহলে মায়ের অভাব আর থাকবে না। মাঝে মাঝে সে কথা
বউমাকে বলতো। বউমা শুনে শুধু হাসতো। বাবা যখনই অনুর সঙ্গে দেখা করতে হোস্টেলে
আসতেন, বউমার সঙ্গে দেখা না করিয়ে কিছুতেই বাবাকে ছাড়ত না। বাবাকেও প্রতিবার
বলত, ‘-বাবা, আমার যখন এখানের পড়া শেষ হয়ে যাবে, তখন বউমাকেও আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাব।,
ঠিক আছে?’ ‘-বেশ বাবা তাই হবে।’ বউমা যেমন জানত, অনুর বাবাও জানতেন, এটা সম্ভব নয়।
তবু অনুর কথায় সায় দিতেই হতো।
(তিন) বউমা অর্থাৎ
কাজল, কাজল সাধু, খুব ছোটোবেলায় বিয়ে হয়েছিল। বিয়ে হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই
স্বামী মারা যান, একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে। তারপর যেমন হয়, অশিক্ষিত,
কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারে, সব দোষ নতুন বউ-এর ঘাড়ে চাপে। শুরু হয় নানারকম অত্যাচার।
খুব বেশিদিন টিকতে পারেনি। বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছিল কাজল। প্রথম দিকে নিজেকে
গুটিয়ে রাখতো, যেন সত্যিই সব দোষ তার। মরমে মরে থাকতো যেন। পরে আস্তে
আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে। ভাইপো-ভাইঝি, সংসারের কাজ-কর্মের মধ্যে নিজেকে সঁপে দেয়।
বাবার বাড়িতে কেউ আর শ্বশুরবাড়ির প্রসঙ্গ তুলত না। তবু কাজলকে নিয়ে বাবা মা-র
চিন্তা ছিলই। এখনতো সব ঠিক আছে, কিন্তু যখন তারা থাকবে না। তখন কী হবে? ভাইরা যদি না
দেখে। সংসারে এমন তো কতই হয়। এমন সময় কাজলদের বাড়িতে দূরসম্পর্কের এক মামা
এসেছিলেন। কাজল সম্পর্কে সব জেনে জানালেন, কাজল কি কোনও কাজ পেলে করবে? কাজটা কী?
না ওই ভদ্রলোক একটি মিশন স্কুলের হোস্টেলে কাজ করে, সেখানকার
কিচেনের জন্য একজন হেল্পার খোঁজা হচ্ছে। যদি কাজল রাজি থাকে, তাহলে তিনি
মহারাজকে বলতে পারেন। এক কথায় রাজি হয়ে গেল। সেই থেকে কাজল হোস্টেলে। মহারাজ
কাজলের সব কথা শুনে, কাজটা দিয়েছিলেন, এবং কাজলকে প্রথম দেখাতেই বউমা বলে ডেকেছিলেন,
সেই থেকে কাজল হোস্টেলে বউমা নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। সব মেয়ের মধ্যেই একজন
মা থাকে। সময় ও সুযোগ পেলে তার জাগরণ ঘটে। কাজলের ক্ষেত্রে এই মাতৃত্ববোধ জেগে
উঠেছিল, অনুর সংস্পর্শে এসে। নিজের সন্তান না থাকায় যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল,
সেই ফাঁকা জায়গায় কাজলের অজান্তেই অনু চলে এসেছিল। মিশনের পড়াশুনো শেষ করে অনু
যেদিন হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে আসছিল, সেদিন ইচ্ছে করেই কাজল দূরে চলে গিয়েছিল। অনুর
জেদ যে কী ভয়ানক ততদিনে বুঝে গিয়েছিল। একটা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হোক এটা
কাজল চায়নি। অনুও সেদিন পাগলের মত বউমাকে খুঁজেছিল। কিন্তু কেউ বলতে পারেনি বউমার
খবর। অগত্যা কাঁদতে কাঁদতে চলে এসেছিল। আর কাজল? সেও তো ঠিক ছিল
না। স্বামীকে হারিয়ে যে কষ্ট পেয়েছিল, তার চেয়েও বোধহয় বেশি কষ্ট পেয়েছিল সন্তানকে
হারিয়ে। পাগলের মত কাজলও কেঁদেছিল। দু’দিন সে কাজেও আসতে পারেনি। অনুরাগ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর, পড়াশুনোর চাপ এবং নতুন বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে
তার বউমাকে ভুলে যেতে পেরেছিল। সন্তান মাকে কখনো কখনো ভুলে যেতেও পারে, কিন্তু মা
কোনোদিন, কোনোকিছুর বিনিময়েও সন্তানকে ভুলতে পারে না। কাজলের
ক্ষেত্রেও সেরকমটাই হয়েছিল। অনুকে সে কোনোদিন ভুলতে পারেনি। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা
ফল্গুধারার মত অনুকে কেন্দ্র করে বয়ে চলেছিল। একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি।
বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সোর্স থেকে অনুর খোঁজ রেখেছিল কাজল। আর অনুর
প্রতিটি সাফল্যে খুশি হয়েছিল। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে হোস্টেলের কাজ থেকে একদিন
বিদায় নিতে হয়েছে। বাড়িতে বসে যাওয়ার পর কষ্ট আরো বেড়েছে। বেশ কয়েক বছর পর একদিন
দাদাকে বলেছে, ‘-দাদা অনুর জন্য আমার খুব মন খারাপ করছে। ওকে একবার দেখতেই হবে, আমি আর থাকতে
পারছি না।’ দাদা হেসে বলেছে, ‘-দূর পাগলি, সেকি আর তোকে মনে রেখেছে যে, তাকে দেখতে যাবি।’ ‘-আমার মন বলছে সে আমাকে ভুলবে না। আর যদি ভুলে যায়, তবু তার সামনে
একবার আমি দাঁড়াতে চাই।’ আজ সেইদিন। বউমা, আজ ডঃ এ. মুখার্জীর সামনে। অনু তার বউমাকে নিয়ে ততক্ষণে
বাড়ির ভিতরে। ‘-দেখ, দেখ পিয়া কাকে এনেছি, কই কোথায় আছো?
অনুরাগের স্ত্রী বোধহয় রান্নাঘরে কিছু করছিল, তাড়াতাড়ি বাইরে
এসে সামনে দাঁড়ালো। খুশিতে ঝলমল করা ডাক্তারবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে পিয়া জিজ্ঞেস
করলো, কে গো, কই আগে তো কখনো দেখিনি।’ ‘-তুমি দেখবে কী করে? আমিই তো দেখলাম কতযুগ পর। ইনি আমার হারিয়ে যাওয়া, বউমা বলতে
গিয়েও না বলে বললেন আমার মা, বুঝেছ আমার মা। এখন থেকে আমাদের কাছেই থাকবে। অনেক দূর থেকে
এসেছে, ভালো করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কর, আমাদের পাশের ঘরটাতে থাকবে, সেসব ব্যবস্থাও
করে ফেল তাড়াতাড়ি। আমার এই মা না থাকলে আমাকে এই অবস্থায় দেখতে পেতে না বুঝলে,
সব এই মায়ের জন্য। পরে তোমাকে সব বলব, এখন সব ব্যবস্থাগুলো চটপট করে ফেল দেখি। আমি
নীচে থেকে আসছি।
আজ সেকেন্ড
হাফে আর চেম্বার করব না। আমার মাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আজ আমার ছুটি, যাই নোটিশটা
দিয়ে আসি।’
|