জ্ঞান বিজ্ঞান । আষাঢ় ১৪৩১




  হাঁস নিয়ে অন্য কথা 












ড. সৌমিত্র চৌধুরী
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ



 

গাছপালার ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ল কয়েকটা হাঁস। গ্রাম্য পথে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুললাম। চমৎকার ছবি উঠল। অবশ্য দেখতেও বড় সুন্দর প্রাণীগুলো। পেন্সিল বা তুলি দিয়ে আঁকলে খুব সুন্দর দেখায়। হাঁস দেবতার বাহন। অনেক কিছু পারে। উড়তে পারে, চিৎকার করতে পারে। ডিম পাড়ে। সাঁতার কাটে। জলের পোকামাকড় ধরে খায়। তবে একটা কথা। হাঁস কিন্তু দুধ আর জল আলাদা করতে পারে না। পাতিহাস পারে না, রাজহংস পারে না। পরমহংসও পারে না। পরমহংস মানে উচ্চ স্তরের সাধক। তার তো এমন ক্ষমতা নেই। কার আছে?

দুধ আর জলকে আলাদা করতে কে পারে? পারে উত্তাপ। তাপ, দুধের জলকে বাষ্পে পরিণত করে। আর পড়ে থাকে দুধে মিশে থাকা কোলয়েড (colloid) পদার্থ। অন্য উপায়ে, রাসায়নিক প্রয়োগ করেও দুধের কিছু উপাদান জল থেকে আলাদা করে নেওয়া যায়।

দুধের মধ্যে মিশে থাকে অনেক উপকারী পদার্থ। প্রধান অংশ জল। জলে মিশে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, প্রোটিন। ধীরে ধীরে তাপ প্রয়োগ করা তারপর ঠাণ্ডা করে নেওয়া, অর্থাৎ স্টিম ডিস্টিলেসন পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়ে দুধের উপাদান আলাদা করে নেওয়া যায়। কিন্তু কোনো ছাঁকনি দিয়ে দুধের উপাদান গুলো আলাদা করে নেওয়া সম্ভব নয়। উচ্চ মানের ফিলটার পেপার দিয়েও করা যাবে না।

অনেকে যে বলে হাঁস, দুধ আর জলকে আলাদা করে দিতে পারে? তেমনটা কিন্তু পারে না। হাঁস পারে জলের মধ্যে ভেসে থাকা খাবার (গেঁড়ি, গুগলি, ঘাস পাতা) খেয়ে নিতে। সেগুলো জল থেকে ছেঁকে আলাদা করে খেয়ে নেয়। জলকে শরীরের বাইরে বের করে দিতে পারে। কেমন করে পারে?   

হাসের ঠোঁটের ভিতর দিকে থাকে ছাঁকনি। চিরুনির মত দেখতে এক ধরণের পাত, ল্যামিলি (Lamellae, গ্রীক শব্দ, মানে পাত)। এই ছাঁকনি দিয়ে জল ছেঁকে নিতে পারে হাঁস। জলে ভেসে থাকা খাদ্য গিলে নিয়ে জলটা বের করে দেয়। অনেক পাখিরই ঠোঁটের ভিতর দিকে ল্যামিলি থাকে। ল্যামিলি দিয়ে ছেঁকে নেবার ক্ষমতা থাকলেও দুধে মিশে থাকা কোলয়েড পদার্থকে ছেঁকে আলাদা করে নিতে পারবে না। কারণ দুধের মধ্যে মিশে থাকা সুক্ষ কণা (কোলয়েড কণা) গুলো খুবই ছোট। একশ-দুশো ন্যানোমিটার। এক ন্যানোমিটার মানে মিটারের দশ কোটি ভাগের এক ভাগ। 

হাঁসের দাত থাকে নাকি? অনেকে এমন জিজ্ঞেস করে। হাঁসের দাঁত থাকে না। ল্যামিলি বা চিরুনির মত জিনিসটাকে দেখায় দাঁতের মত। আর একটা কথা। হাঁসের ঠোঁট খুব শক্ত। আমাদের নখের মতই কেরাটিন নামের প্রোটিন দিয়ে তৈরি।  

হাঁস অনেক ধরণের। এদের প্রজাতি ৩০ রকম। পাতিহাঁস, রাজহাঁস, বুনো হাঁস, ম্যালারড, ম্যান্ডারিন। সবচাইতে বেশী দেখতে পাই পাতিহাঁস (বৈজ্ঞানিক নাম, Anas crecca)পাতিহাঁস, অ্যানাটিড (Anatidae) গোত্রের। দেখতে পাওয়া যায় ভারত বাংলাদেশ ইউরোপ, আফ্রিকা জুড়ে।

সুন্দর পাখি হাঁস। পোষ মানে। ডিম দেয়। আমাদের উপকার করে। তবে, হাঁস যেখানকারই হোক, দুধ আর জলকে আলাদা করতে পারে না। অর্থাৎ ‘দুধে বারি মেশাইলে বেছে খায় রাজহংসী হইলে’ কথাটির বৈজ্ঞানিক সত্যতা আদপেই নেই।