বৈজ্ঞানিকের রান্নাঘর - ৭ । অগ্রহায়ণ ১৪৩১





    ইনডাকশন কুকারের 
 কেরামতি











অরূপ

বন্দ্যোপাধ্যায়

দিল্লি, এন সি আর 



 

কলকাতায় ছুটি কাটিয়ে দিল্লি ফিরে যাবার সময় এসে গেল রিয়ার। একা একা আবার একবার বিমান সফর করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে ভেবে মনটা তার আজ খুব খুশি। নিজে-নিজেই জামাকাপড় সব গুছিয়ে নিয়েছে ব্যাগে। কলকাতা আসবার সময় রিয়ার মা-ই ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সে বারো ক্লাস পাশ করে কলেজে ঢুকতে চলেছে। অন্যের ভরসায় তাকে থাকলে আর চলবে না। নিজের বোঝা নিজেকেই বইতে হবে।

মাইক্রোবায়োলজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশুনো করবে বলে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ফর্ম জমা করেছিল রিয়া। রেজাল্ট ভালো বলে যে-কোনো ভালো কলেজে সুযোগ পেতে অসুবিধা হবার কথা নয়। কাউন্সেলিং শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই।

দিল্লি ফিরে যাবার জন্য রিয়া ব্যাগ গুছিয়ে ফেলতেই অর্ক গম্ভীর মুখে রিয়ার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। মনে হয় বোনের সঙ্গে কয়েকটা দিন মহানন্দে ঘুরেফিরে আবার একা হয়ে যাবার একটা চাপা কষ্ট দেখা যাচ্ছে ওর চোখে-মুখে। কিন্তু মুখ ফুটে সে-কথা কি আর বলে? কলকাতার কলেজে রিয়া ভরতি না হবার জন্য অর্কর মনে দুঃখ থাকলেও সে বলে, “দিল্লির কলেজে পড়তে চেয়ে ভালোই করেছিস। এখন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়া! আমিও অবশ্য তাই করে চলেছি। কিন্তু বেশিদিন নয়। পি.এইচ.ডি-র জন্য চলে যাব বিদেশ।”

“কেন? তোমার মতো একজন বুদ্ধিমান ইকোনমিস্ট দেশের কোনও কাজে আসবে না, সেটা তো ভালো নয় মোটেই।” স্যুটকেসের ডালাটা চেপে রেখে জিপার লাগাতে লাগাতে বলে রিয়া। 

“বিদেশেই থেকে যাব, তা তো বলিনি। পি.এইচ.ডি শেষ করে দেশে ফিরব। পড়াব।” 

ওদের কথার মাঝে বাড়ির বেল বাজে ডিং-ডং। অর্ক দরজার দিকে যেতে যেতে বলে, “মায়ের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এসে গিয়েছে। দাঁড়া, নিয়ে আসি।”

ডেলিভারি নিয়ে ঘরের মধ্যে এক বিশাল বাক্স নিয়ে হাতে নিয়ে অর্ক বলে, “কাল তোর রাতের ফ্লাইট। আজই এটা মায়ের হাতে তুলে দিতে হবে। আজ সন্ধেয় এটার মোড়ক উন্মোচন হবে।”

“কী এটা? অনলাইনে কিনলে?” 

“আগামীকাল মায়ের জন্মদিন। হাতখরচ বাঁচিয়ে এই ইন্ডাকশন কুক-টপটা কিনে ফেললাম মাকে উপহার দেব বলে। কেমন হল বল দেখি? মাকে চালিয়ে দেখাতেও তো হবে!” উৎসাহের গলায় বলে অর্ক।

“আছে একখানা আমাদের বাড়িতেও, তবে বেশি ব্যবহার হয় না। বেচারা একা একা ধুলো খায়। রান্নাবান্না করা যায়, এটুকু জানি। কোনোদিন হাত লাগাইনি। তবে পিসি তো ব্যস্ত ডাক্তার! এখানেও পড়েই থাকবে মনে হয়।”

“আজ্ঞে না, পড়ে থাকবে না মোটেই! তোর মতো কুঁড়ে নেই এখানে কেউ। মা ব্যবহার না করলে আমিই করব।”

“তাহলে আর পিসিকে গিফট না করলেও চলত। অন্য কিছু কিনে আনতে!” স্যুটকেসের হ্যান্ডল ধরে সেটাকে সোজা করে রাখতে রাখতে মন্তব্য করে রিয়া।

“তাহলে তোকে বলি, মায়ের সময় নেই বেশি রান্নাঘরে যাবার। আমি নিজেই না-হয় ব্যবহার করব। গ্যাসে কিছু রান্না করার চাইতে অনেক ঝুঁকি কম ইন্ডাকশন কুক-টপে। যদি চায়, মা খুব চটপট কিছু রান্না করে নিতে পারে সহজেই, আবার আমিও কেউ বাড়ি না থাকলে যা খুশি বানিয়ে খেতে পারি। বাইরের খাবারে ঝুঁকি তো আছেই।”

“আমি কিন্তু আজ অবধি ইন্ডাকশন কুক-টপ নিয়ে কিছুই ভাবিনি। একটা যন্ত্র পড়ে পড়ে ধুলো খায় বাড়িতে। আমাদের রান্নার মাসি তো এসবে ভুলেও হাত লাগায় না। কেন বলছ এত সুবিধা আছে ব্যবহারে? খুলে বলো।” রিয়া হাতের কাজ ফেলে গুছিয়ে বসে।

“তাহলে আয় দুজনে খুলে দেখি নতুন জিনিসটা দেখতে কেমন। তারপর না-হয় আবার সব মোড়ক করে রেখে দেব, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য।”

অর্ক ইন্ডাকশন কুকারকে পিচ-বোর্ডের আবরণ থেকে মুক্ত করে সাবধানে বিছানার উপর রাখে। তারপর প্লাস্টিক সরিয়ে দিয়ে কুকারের কালো চকচকে প্লেটে হাত বুলিয়ে বলে, “এই যে টপটা দেখছিস, এটা হল টাফেন্ড গ্লাস দিয়ে তৈরি। কাচকে বিশেষ পদ্ধতিতে শক্তপোক্ত করে বানানো হয় যাতে সহজে ঠোকা লেগে ভেঙে না যায়। এটা হিট রেজিস্ট্যান্ট মেটিরিয়ালও, তাই গরমে কোনও ক্ষতি হয় না। গ্যাস বার্নারে যেমন আঁচ কমানো বা বাড়ানো যায় নব ঘুরিয়ে, এখানেই তিন-চারটে বিভিন্ন তাপমাত্রায় রান্না করা যায়। ৫০০, ৮০০, ১০০০, ২০০০ ওয়াটে সেট করা যায় কুকারকে।”

“এই কুকারকে ইন্ডাকশন কেন বলে?”

“এইটে হল কাজের কথা, যন্ত্রটার বিশেষত্ব এখানেই। ইন্ডাকশন বলতে তুই কী বুঝিস বল? বারো ক্লাসের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন চ্যাপ্টারটা মনে কর। বাংলায় অবশ্য ব্যাপারটাকে তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ বলা হয়।”

“ওরে ব্বাবা, বাংলা শুনে মাথা ঘুরছে। ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন জানি। যখন কোনও ইলেকট্রিকাল সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তখন তার চারপাশে সৃষ্টি হয় একটা ম্যাগনেটিক ফিল্ড। সেই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের পাশাপাশি আবার কোনও ইলেকট্রিক সার্কিট বা কয়েল রাখা থাকলে সেখানে প্রবাহিত হয় কারেন্ট।” 

“ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের ব্যবহার হয় এমন আর একটা যন্ত্রের নাম বল।” মাস্টারি করে অর্ক।

“ট্রান্সফরমার। তাই না?”

“ঠিক বলেছিস। ট্রান্সফরমারে থাকে দুটো কয়েল—একটা হচ্ছে প্রাইমারি, আর একটা সেকেন্ডারি। তারের কুণ্ডলী দুটোই। একটাতে যদি অল্টারনেটিং কারেন্ট চালানো হয়, তবে আর একটা কুণ্ডলীতে প্রথমটার প্রভাবে কারেন্ট প্রবাহিত হতে থাকে। এইভাবে ভোল্টেজ বাড়ানো, কমানো হয়। এই অসাধারণ আবিষ্কারের জন্য কাকে ধন্যবাদ দিতে চাস?”

“তোমাকে নয় নিশ্চয়ই, মাইকেল ফ্যারাডেকে।” হাসতে থাকে রিয়া।

“ঠিক বলেছিস। কিন্তু লোকটা অঙ্ক না কষেও ফিজিসিস্ট হয়ে গিয়েছিল। মানে অঙ্ককে সে পছন্দই করত না। বড়ো মুখ করে বলত, অঙ্ক জানি না ঠিকই, অঙ্কবিদদের আমি মাইনে দিয়ে নিজের কোম্পানিতে রাখি। অসাধারণ প্রতিভা। যাক গে, তাকে মনে করে যন্ত্রটা চালু করা যাক, কী বল?”

“চালাবে মানে? রান্নাঘরে গেলে হত না?”

“একদম নয়। আয়, পড়ার টেবিলটাতে রেখে ইলেকট্রিকাল পয়েন্টে প্লাগ লাগিয়ে দিলেই হল। ইন্ডাকশন কুক-টপের বিশেষত্ব হল, যেখানে খুশি একে চালিয়ে দিয়ে যা খুশি রান্না করা যায়। কারণ হল, এটা তার উপর রাখা পাত্র ছাড়া আর কিছুকে গরম করে না। তবে পাত্রটাকে হতে হবে ফ্ল্যাট, গোল কড়াই—যা রান্নাঘরে ব্যবহার করি, তা চলবে না। বাসন উপযুক্ত হতে হবে, প্লেটের উপর সেঁটে থাকবে। নইলে যন্ত্র নিজের থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। কুকারে সেন্সর আছে, আপনা থেকেই বন্ধ করে বিপ বিপ আওয়াজ করে ভুল বাসন রাখা হয়েছে জানিয়ে দেবে।”

“কাচের পাত্রে যেমন মাইক্রোওয়েভে রান্না করা হয়, তেমন বাসন নিয়ে আসি? কাচে কাচে সেঁটে বসে যাবে।”

অর্ক আঁতকে উঠে বলে, “এই বুদ্ধির নিয়ে তুই বায়োলজি নিয়ে বিজ্ঞানী হতে চাস! কিছুক্ষণ আগে কী বললাম? ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের আওতায় আসতে হবে পাত্রকে। এই যে যন্ত্রটা দেখছিস, এর ভিতরে রাখা আছে প্রাইমারি তারের কয়েল। সুইচ অন করে দিলেই সেখানে কারেন্ট চলবে, চুম্বকক্ষেত্র তৈরি হবে। চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে এসে যাবে আমাদের রান্নার বাসন। সেটা সেকেন্ডারি কয়েলের কাজ করবে। তাতে অল্টারনেটিং কারেন্ট চলতে থাকবে।”

“এই রে! তাহলে তো বাসনের গায়ে হাতই দেওয়া যাবে না! কারেন্ট মারবে।”

“না কারেন্ট মারবে না, আমার শক্ত আঙুল তোর মাথায় গাঁট্টা মারবে। ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি কয়েলে কম ভোল্টেজের কারেন্ট তৈরি হয় তো, না কী? ইন্ডাকশন কুক-টপে রাখা বাসনে এক ভোল্টের মতো ভোল্টেজ থাকে; কারেন্ট যা হয়, তাতে মানুষ শক খায় না। এই কম ভোল্টেজের কারেন্ট পাত্রে চলতে থাকলে মেটালিক রেজিস্ট্যান্সের জন্য তাপ সৃষ্টি হয়।”



ইন্ডাকশন কুক-টপের ভিতরের প্রাইমারি তারের কয়েল। 

“আচ্ছা বুঝলাম। রেজিস্ট্যান্সের জন্য তাপ সৃষ্টি হবে। এনার্জি কনসারভেশন প্রিন্সিপাল। ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জি টু থার্মাল এনার্জি। সেই জন্য মহান বৈজ্ঞানিক ওহমকে ক্রেডিট দিয়ে দিই?”

“তুই ক্রেডিট দিস বা না দিস, বাসন গরম হয়ে যাবে। তবে জেমস প্রেস্কট জুলকেও একটু স্মরণ করিস। তিনিই দেখিয়ে দেন ধাতুর মধ্যে দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে ইলেকট্রিকাল রেজিস্ট্যান্সের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়। সদ্য কলেজে ভরতি হয়েছিস, তোকে আর এই বিষয়ে বারো ক্লাসের বইতে লেখা ইকুয়েশনগুলো জিজ্ঞেস করে বিপদে ফেলতে চাই না। ভুলে গেলে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারিস ফিজিক্সের বইতে। যা বলছিলাম, কারেন্ট প্রবাহিত হবার জন্য পাত্র গরম হয়। তারপর রান্না করলেই কাজ যায় মিটে। বিভিন্ন ওয়াটে রেখে হাই বা লো ভোল্টেজে তাপ বাড়িয়ে বা কমিয়ে রান্না করার সুবিধে আছে ইন্ডাকশন কুক-টপে। আরও একটা সুবিধে হল, এখানে শক্তির অপচয় হয় না। বুঝিয়ে বলতে গেলে, গ্যাসের বার্নারের উপর যে-কোনো পাত্র রাখলে এদিক ওদিক থেকে কিছুটা তাপ নষ্ট হয়। এখানে সেই ব্যাপারটা নেই। কাচের টপটা একটুও গরম হয় না, কাজেই তাপের অপচয় হয় না। অনেকক্ষণ রান্না করার পর তবেই একটু কাচ গরম হয়ে যায়। এটা হয় পাত্রের সংস্পর্শে অনেকক্ষণ থাকার ফলে। নীচে একটা পাখা লাগানো আছে দেখে নে। এই পাখাটা ঘোরার ফলে খুব তাড়াতাড়ি ইন্ডাকশন কুকার ঠান্ডা হয়ে যায়।”

“এই জন্যই কি তাড়াতাড়ি রান্না হয় এই যন্ত্রে?”

“ঠিক তাই। গ্যাসের উপর হাঁড়ি-কড়াই রেখে রান্না করলে অনেকটা সময় ও শক্তি খরচ হয় পাত্রকে গরম করতে, কিন্তু ইন্ডাকশন কুক-টপের উপরে রাখা বাসনটা খুব চটপট গরম হয়ে যায়। আঁচও সমান থাকে যতক্ষণ রান্না হয়। আরও একটা ব্যাপার হল, এতে যে রান্না করছে তার অসাবধানতায় কাপড়ে আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটে না। এতসব জানার পরও কিন্তু সব দেশে, এমনকি ভারতেও খুব জনপ্রিয় নয় রান্না করার এই পদ্ধতি।”

“কবে এই যন্ত্র আবিষ্কার হয় রান্নার জন্য বলতে পারো?”

“সবচাইতে আগে আমেরিকাতে ১৯৭১ সালে এই টপ তৈরি করা হয় রান্নার জন্য। এর আগে ইলেকট্রিকাল ফার্নেসে ব্যবহার হত ইন্ডাকশন পদ্ধতি। বড়ো বড়ো হোটেলে বিরাট বিরাট মেশিনে প্রথম প্রথম বানানো হত খাবার। তারপর আকারে ছোটো করে রান্নাঘরের জন্য উপযুক্ত করা হয়। তবে সেইসব কুক-টপ খুব দামি ছিল। সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসতে আরও কয়েক দশক লেগে যায়।”

“একটা কথা জিজ্ঞেস করি— প্লাস্টিক বা কাচের তৈরি পাত্র রাখা যাবে না বুঝলাম, কারণ এগুলোর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয় না। লোহা, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়াম চলতে পারে, কপার বা তামার ভিতর দিয়ে খুব স্বছন্দে বিদ্যুৎ চলতে পারে। তাহলে এই ধাতুর তৈরি বাসন ইন্ডাকশন কুক-টপের উপযুক্ত হবে, তাই না?”

“তামা ছাড়া বাকিগুলো চলবে। কারণ, তামার বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বেশি। তার ভিতরে বিদ্যুতের রোধ বা রেজিস্ট্যান্স এত কম যে ইন্ডাকশন হলে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হবে, কিন্তু পাত্র গরম হবে খুব কম। তাই তামার বাসন কাজে আসবে না। সবচাইতে ভালো হচ্ছে স্টিলের বা উন্নতধরনের অ্যালুমিনায়ামের বাসন।”

“সরাসরি বাসন গরম হয় বলে শক্তির অপচয় কম এবং তাড়াতাড়ি সব রান্না হয়ে যায়, এইটা জলের মতো পরিষ্কার। আচ্ছা, জল গরম করার জন্য কি সবচাইতে বেশি ওয়াটে নব ঘুরিয়ে দিতে হবে?”

“একেবারেই না। জল গরম করা বা চা বানানোর জন্য ৫০০ ওয়াট যথেষ্ট। যদি মাছ ভাজা বা আলু ভাজা করতে হয়, তবে সবচাইতে বেশি ওয়াট—২০০০ ওয়াট ব্যবহার করতে হবে। তবে একবার রান্নায় মশলা কষিয়ে নেবার পর জল ঢেলে ঢাকা দিয়ে রান্না করতে দিলে ৫০০ ওয়াটে ফেলে রেখে দিলেই খুব তাড়াতাড়ি রান্না হবে। প্রেশার কুকার রাখলেও তাই। মনে রাখতে হবে, সব বাসন কিন্তু ইন্ডাকশন কুক-টপে ব্যবহার করার উপযুক্ত হয়। বাসন বানাবার কোম্পানিগুলো এই ধরনের বাসন বানাবার সময়ে পাত্রের নীচে গোল গোল দাগ কেটে দেয় এইটা বোঝানোর জন্য যে, বাসন ইন্ডাকশনে ব্যবহার করার উপযুক্ত।”

“তাহলে দিল্লি ফিরে আমি ওটাই ব্যবহার করে রান্না করব। বুঝলাম, গ্যাসে রান্না করার সময় অসাবধান হলে খুবই বিপদ।”

“এই জন্য বাসন অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলেও আজকাল ইন্ডাকশন কুক-টপ নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাসের চাইতে ইন্ডাকশন হিটিং অনেক নিরাপদ। রান্নাঘরে গ্যাস লিক করে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া কম তাপ নষ্ট হওয়ায় রান্নাঘর অতিরিক্ত গরম হয়ে রাঁধুনিকে নাস্তানাবুদও করে না।”

“এবারে তাহলে আবার ইন্ডাকশন কুক-টপকে বাক্সবন্ধ করা যাক। পিসিকে সারপ্রাইস দিতে হবে বিকেলে। উপহার খোলা অবস্থায় দেওয়াটা ঠিক নয়।” রিয়া সযত্নে নতুন যন্ত্রটাকে বাক্সে রাখে।

“সেই সঙ্গে শেষ হল আজকের মতো ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীর ক্লাস। কাল তো তুই উড়ে যাবি ডানা মেলে আকাশে। শুধু সময়ের অভাবে পরীক্ষা নিয়ে রান্নার ক্লাসে তোকে পাশ করানো গেল না। দিল্লি গিয়ে পরীক্ষা নেব বুঝলি। ততদিন তুই বাড়ির পরীক্ষাগারে একটু প্র্যাক্টিকাল ক্লাস একা-একাই করে নিস। ফেল করলে কিন্তু এই বয়সেও তোকে বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিতে পারি।”

রিয়া কোমর ঝুঁকিয়ে অর্কর দিকে কুর্নিশের ভঙ্গিতে বলে, “যো হুকুম মেরে আকা!”


 

আরও পড়ুন  -












 







 

খাবারের গায়ে কেন
 
টক টক গন্ধ

 



জল শুধু জল



ফ্রাই, কিন্তু ড্রাই নয়



যার নুন খাই, তার গুণ গাই



কুসুমে কুসুমে  


 

<
সূ চি প ত্র