এই কথার মর্মোদ্ধার হয়েছে পরে, যখন
বুঝেছি যে চোখের দেখা কার্যকরী হয় যদি মন যুক্ত থাকে। অন্যমনস্ক থাকলে চোখের সামনে
ঘটে যাওয়া ঘটনাও ‘দেখতে’ পাই না।
অন্যভাবে বললে বলা যায় চোখের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করে ব্রেন - এ কোন অনুভূতির সৃষ্টি করে না। তাহলে
বলা যায় চোখ স্বয়ং সম্পূর্ণ যন্ত্র নয়, তাকে মনের সাহায্য নিতে হয়। এই সূত্র ধরে বলি, যখন মনের মধ্যে
কোন বিষয়ে কোন জ্ঞান থাকে তাহলে দেখার রকম যায় পালটে। যেমন ধরা যাক কোন বাড়ির
উঠানে এলুমিনামের তারে জামাকাপড় মেলা আছে, আবার একই রকম তার
টাঙান আছে রাস্তার ধারে সিমেণ্টের খুঁটিতে।যে দুটো চোখ
দিয়ে আমরা দেখে থাকি সেই
চোখে দুটো তারই একই রকম। কিন্তু বিদ্যুতের জ্ঞান যার আছে সে দুটো তারকে একই রকম
ভাবে না। উঠানের তারকে স্পর্শ করা চলে, সিমেন্টের খুঁটির তার
স্পর্শ করা চলে না। এখানে বিদ্যুতের জ্ঞান এক ধরণের চোখের কাজ করছে। এই চোখকে বলা
হয় জ্ঞান চক্ষু না জ্ঞান নেত্র। এই জন্যই বলা হয় নেত্র তিনটি।
তৃতীয় নেত্রের কথাটা অন্যভাবেও ভাবতে পারি। কেননা চোখ
দর্শনেন্দ্রিয় হলেও সে আসলে সংগ্রাহক। পরিবেশ থেকে আলোক রশ্মির মাধ্যমে যা’ গ্রহণ করে তা’
পাঠিয়ে দেয় মস্তিস্কের একটা অংশে। তার নাম অক্সিপিটাল লোব। এই
অংশটাই সৃষ্টি করে আমাদের দর্শন অনুভূতি।
এবার বলব অন্য ধরণের চোখের কথা। অন্ধের লাঠি যেমন তার চোখের
কাজ করে কতকটা সেরকম। তবে এই চোখ মানুষের নেই, আছে মানুষের থেকে বুদ্ধিতে পিছিয়ে থাকা
অন্য জীবের। মানুষ যা’ বুদ্ধির দ্বারা উদ্ভাবন করেছে সেই সব
প্রাণীরা তা’ পেয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে, এক প্রকার উত্তরাধিকার
সূত্রে। মানুষের তৈরি যন্ত্রটির নাম
বললে বুঝতে সুবিধা হবে।
যন্ত্রটি হল ‘রাডার’। ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে বিমানে, কৃত্রিম উপগ্রহে। সে বিশেষ রকমের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি করে ছেড়ে দেয়। মহাশূন্যে
কিংবা বাতাসের মধ্য দিয়ে তরঙ্গ ছুটে যায়। কোন দিকের তরঙ্গ যদি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তবে
যন্ত্রটি বুঝে যায় কত দূরে রয়েছে সেই
বস্তু যার উপরে তরঙ্গ ধাক্কা খেয়েছে। এই ভাবে কোন অদেখা বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়।
ঠিক এই যন্ত্র বসানো আছে বাদুড়ের মাথায়। তবে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের বদলে বাদুড়
তৈরি করে উচ্চ কম্পাঙ্ক যুক্ত শব্দ তরঙ্গ। আমাদের কানের ক্ষমতা নেই সেই তরঙ্গ
জনিত শব্দ উপলব্ধি করা। যদিও এই
অক্ষমতা আমাদের কাছে প্রকৃতির আশীর্বাদ। নতুবা আমাদের ঘুমানো দূরূহ হতো। অন্ধকারে
বাদুড় পথ চিনে চলতে পারে তা’ কেবল তার প্রকৃতিদত্ত ‘রাডার’ যন্ত্রের জন্য। তবে সেই যন্ত্রের সাহায্য
করার জন্য থাকে মুখ আর কান। মুখ
দিয়ে শব্দ তৈরি করে আর কান দিয়ে শোনে প্রতিফলিত শব্দ বা প্রতিধ্বনি। মুখ দিয়ে
যখন শব্দ করে ঠিক সেই সময় কিন্তু তার কান সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এক মাংস পেশীর
সাহায্যে। কোন ভাবে যদি বাদুড়ের কান পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় তবে সে আর
অন্ধকারে ঠিক ভাবে উড়তে পারবে না। সে জন্যই বলি
বাদুড়ের কান হলো তার একধরণের ‘চোখ’। এক্ষেত্রে বাদুড় তার চোখ থাকা সত্ত্বেয় চোখের বদলে কান
ব্যবহার করল। কিন্তু কোন প্রাণীর যদি আদৌ চোখ না থাকে তখন কী হবে? না, আমি জন্মান্ধ মানুষের কথা বলব না। আমি বলব চোখ বিহীন প্রানী কেঁচোর কথা।
সে দিব্যি চলে ফিরে বেড়ায় তার দেহের বাইরে থাকা
কিছু আলোক সংবেদী কোষের সাহায্যে পরিবেশকে বুঝে। এই রকমের কোষ হল প্রানীকুলের আদিম
চক্ষু, যা’ থেকে বিববর্তনের ধারায় আমরা
আমাদের বর্তমান চক্ষু দুটি পেয়েছি।