শ‍্যামাচরণ কর্মকার

ছড়ার মানুষ 











শ‍্যামাচরণ কর্মকার




 

 

 

ছোট্ট থেকেই ছড়া শোনা ছন্দে ছিল কান

মা - ঠাকুমার মুখে শুনেই উঠত দুলে প্রাণ।

রবীন্দ্রনাথ, যোগীন্দ্রনাথ আর সুকুমার রায়

ছন্দ- ছড়ার ফুল ফোটালেন মনের আঙিনায়।

 

শুনতে শুনতে বেড়ে ওঠা লেখায় হাতেখড়ি

তাঁর লেখনীর ছড়ার জাদু পাতায় পাতায় পড়ি।

ছোটোবড়ো সব কাগজেই ছড়িয়ে পড়ে নাম

তাঁর লেখনীর তারিফ করে  শহর এবং গ্রাম।

 

হাওড়া জেলায় থাকেন কবি শানপুরে তাঁর ঘর

শিক্ষকতার পাট চুকিয়ে নিলেন অবসর।

এখন তেমন লেখেন না আর শরীর দেয় না সায়

বয়স পেরোয় ষাটের কোটা, ঘরবন্দিই প্রায়।

 

মানুষটাকে যে দেখেছে যে চিনেছে তাঁকে

কেমন আছেন, কেমন চলেন খোঁজ নেয়, খোঁজ রাখে।

উপকারের নেই সীমা তাঁর যায় না সেসব ভোলা

নবীন- প্রবীণ ছড়াশিল্পীর বুকেই আছে তোলা।

 

মানুষটি আজ ঘরবন্দি এমন ছিলেন নাকি?

ঘরের কোণে থাকতে পারেন এমন ছড়ার পাখি?

পাড়ি দিতেন এখান সেখান কবিসভার ডাকে

ছোটোবড়ো সবাই আপন আঁকড়ে ধরে তাঁকে।

 

ছন্দে গাঁথা ছড়ার ডালি কণ্ঠে ধরে যারা

এমন কবির ছড়া পেলে সবাই মাতোয়ারা।

কত রকম ছড়ার বিষয় ভূত - পেতনির, হাসির

জ্ঞান - বিজ্ঞান, রূপকাহিনির, মজায় ভাসাভাসির।

 

হাজার হাজার ছড়ার মেলা নানান বইয়ের ভিড়ে

ছড়া তো নয় পান্না - চুনি - জহর -মোতি - হীরে।

পুরস্কারও গর্ব করার হাতের মুঠোয় ধরা

শিশুকিশোর সাহিত‍্যে দীপ জ্বালায় কবির ছড়া।

 

সাদাসিদে, মাটির মানুষ, সহজ চলায় বলায়

নামী হলেও অহংকারের সুর ভাসে না গলায়।

যে মিশেছে সে শিখেছে মানুষ কেমন হয়

মানুষটি যে খাঁটি সোনা তাই তো ভোলার নয়।

 

দেখছি তাঁকে দীর্ঘ বছর শিখেছি তাঁর কাছে

ভালোবাসার মানুষ তিনি তাঁর কি জুড়ি আছে?

এসেছিলেন আমার ঘরে, গিয়েছি তাঁর বাড়ি

ভালোবেসে টানেন বুকে ভুলতে তাঁকে পারি?

 

কলেজ স্ট্রিটে, কবিসভায় কতই হত দেখা

আসেন না আর, পায়ের অসুখ ঘরেই থাকেন একা।

একা তো নন সঙ্গে আছেন তাঁর চিরসঙ্গিনী

পদ্মাজ‍্যেঠি ডাকি তাঁকে ভালোবাসেন তিনি।

 

এখন যারা এদিক ওদিক লিখছে ভালো ছড়া

তাদের মধ‍্যে অনেক কবিই তাঁরই হাতে গড়া।

তাঁর অবদান যায় না ভোলা, গর্বেতে বুক ফোলায়

নিন্দুকও তাঁর অনেক আছে ঈর্ষা রাখে ঝোলায়।

 

অভিজ্ঞতায় তাও দেখেছি শুনেছি সব কানে

কবির তাতে কী এসে যায়? কবি আছেন প্রাণে।

আমার তিনি কাছের মানুষ, মনের মানুষ জানি

ভালো মানুষ খুঁজতে গেলেই তাঁকেও কাছে টানি।

 

বললে কথা শেষ হয় না তাঁর কথা কি ফুরোয়?

হাসিমাখা মুখটা দেখে বুকটা আমার জুড়োয়।

কেমন আছেন খোঁজ নিয়ে যাই, যাই ছুটে শানপুরে

ভবানীপ্রসাদ মজুমদার থাকবেন বুকজুড়ে।




  

<